১২ হাজার টাকা দামের যন্ত্র পুরসভা কিনছে ২২ হাজার টাকায়। এমনই ঘটনা ঘটেছে কলকাতা পুরসভার এন্টালি ওয়ার্কশপে। আগেই তিনটি যন্ত্র সরবরাহ হয়ে গিয়েছে ওই দামে। দু’মাস পরে সম্প্রতি ঠিকাদারের দেওয়া বিল দেখে অবাক হন সেখানে যোগ দেওয়া নতুন ম্যানেজার। তিনি অবশ্য ওই বিল আটকে দেন। এবং অ্যাকাউন্ট দফতরে জানান, বিলের পরিমাণ বেশি করা হয়েছে। আর এই কাজের জন্য ওই ম্যানেজারকে কারণ দর্শাতে বলেছেন এন্টালি ওয়ার্কশপের ডিজি। সেখানকার ডিজি বিপ্লব রায়ের বক্তব্য, “এ সব করার আগে আমাকে জানানো উচিত ছিল।” আর ওই ম্যানেজারের কথায়, “যা করেছি, পুরসভার আর্থিক সাশ্রয়ের কথা ভেবেই করেছি। তার পরেও কেন শো-কজ করা হল, বুঝতে পারছি না।” ওই দুই অফিসারের বিবাদে আপাতত ঠিকাদারের দেওয়া বিলটি আটকে গিয়েছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি দেখার জন্য আমি পুর-কমিশনারকে বলেছি। কেন এমন হল, তা জানা দরকার।”
কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় ফুটপাথের ধারে গার্ড রেল বসানোর পরিকল্পনা করেছে পুর-প্রশাসন। সাংসদ তহবিলের টাকায় মাস কয়েক আগে থেকেই ওই ধরনের রেলিং তৈরি করার কাজ শুরু হয় এন্টালি ওয়ার্কশপে। ওই যন্ত্রটির নাম চপ-শ। লোহার পাইপ, লোহার রড কাটার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। এন্টালি ওয়ার্কশপের এক অফিসার জানান, গার্ড রেল তৈরির জন্য ওই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। তাই তা কেনার জন্য ডিজি (এন্টালি ওয়ার্কশপ) মাস কয়েক আগেই যন্ত্র-পিছু ২২ হাজার টাকা ‘ফেয়ার প্রাইস রেট’ নির্ধারণ করেন। সেই মতো ওই যন্ত্র সরবরাহ করার জন্য বরাত পায় একটি সংস্থা।
পুরসভা সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে ওই সংস্থা তিনটি মেশিন সরবরাহ করে, ২২ হাজার টাকা দরে। তখন ওয়ার্কশপের ম্যানেজার ছিলেন রমেন বিশ্বাস। ডিসেম্বরে নতুন ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন দেবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিকাদারের পক্ষ থেকে বিল জমা দেওয়া হয় তাঁর কাছে। ডিজি বিপ্লববাবু বলেন, “উনিই তো ঠিকাদারকে কাজের বরাত (ওয়ার্ক অর্ডার) দিয়েছেন। সন্দেহ যদি হয়ে থাকে, তা হলে দিলেন কেন?” দাম যদি বেশি হয়েছে বলে মনে হয়েছিল, তা হলে তাঁকে জানানো উচিত ছিল। না জানিয়ে ঠিকাদারের বিলে পেন চালানো ঠিক হয়নি বলে মনে করেন ডিজি। এর জন্যই ম্যানেজারকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
যদিও ওয়ার্কশপের একাধিক অফিসারের বক্তব্য, মেশিনগুলি খুব জরুরি বলে বরাত পাওয়ার আগেই তা সরবরাহ করে দেয় ঠিকাদার। নতুন ম্যানেজার যোগ দেওয়ার পরে বরাতের নথির জন্য আবেদন জানান। তখনই দেবকুমারবাবু ঠিকাদারকে জানিয়ে দেন দাম বেশি হয়েছে, কমাতে হবে। তাতে ওই ঠিকাদার রাজিও হয় বলে দাবি ওয়ার্কশপের কর্মীদের। এবং পুরো বিষয়টি অ্যাকাউন্টস দফতরে জানানো হয়। দেবকুমারবাবুর কথায়, “বাজার যাচাই করে দেখেছি কোম্পানির নির্ধারিত দাম ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। তার উপরে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়। তাতে মেশিনের দাম ১২ হাজারেরও কম হবে। ঠিকাদারকে তা জানানোও হয়। তখনই তিনি ছাড় দেওয়ার কথা লিখিত ভাবে জানান। অর্থ দফতরে তা দেখানোও হয়।” তাঁর বক্তব্য, পরে অর্থ দফতর জানায়, মেশিনের দাম কমার বিষয়টিতে ডিজির অনুমোদন দরকার। তখনই সব নথিপত্র ডিজিকে দেওয়া হয়। কিন্তু ওই কাজ করার জন্য উল্টে ডিজি তাঁকেই দোষারোপ করেন। শো-কজের জবাবে এ সবই তিনি লিখেছেন। আপাতত দুই অফিসারের কোন্দলে রীতিমতো সমস্যায় পুর-প্রশাসন। |