প্রতারণার অভিযোগ উঠল একটি লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে। শক্তিগড়ের বাসিন্দা ডালু মোল্লা নামে এক ব্যক্তি বর্ধমান সিজেএম আদালতে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর দাবি, পাঁচ বছরে তিনগুন টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বাজার থেকে টাকা তুলছিল ওই সংস্থা। ৩ জানুয়ারি দায়ের হওয়া ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশকে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অভিযোগকারী ডালু মোল্লার দাবি, আরএমপি বা রিসোর্স মানি পাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের এজেন্ট হলেন তাঁর পূর্বপরিচিত শেখ রিয়াজুদ্দিন। শক্তিগড়ের পুতুণ্ডার বাসিন্দা তিনি। তাঁর স্ত্রী ও কন্যাও ওই সংস্থার এজেন্ট। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় চেন্নাইয়ে। ডালু মোল্লার দাবি, ওই তিনজন বারবার তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে আরএমপি-তে এক লক্ষ টাকা জমা রাখতে অনুরোধ করে। আশ্বাস দেয়, পাঁচ বছরে ওই টাকা সুদে-আসলে তিনগুণ হয়ে যাবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ডালু টোপটা গিলে ফেলেন। তিনি স্ত্রীর গহনা ও ব্যবসার পুঁজি ভেঙে ২০০৮ সালে পরিচিত কয়েকজনের সামনে এক লক্ষ টাকা তুলে দেন ওই এজেন্টদের হাতে। তাঁরা তাঁকে পরে ৫০ হাজার টাকার দু’টি শংসাপত্রও দেন। কিন্তু পাঁচ বছর কেটে গেলেও টাকা ফেরতের কোনও কথা না হওয়ায় ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি ওই দু’টি সার্টিফিকেট নিয়ে ডালু মোল্লা শেখ রিয়াজুদ্দিনের বাড়ি গিয়ে তিন লক্ষ টাকা দাবি করেন। তাঁর অভিযোগ, রিয়াজুদ্দিন, তাঁর স্ত্রী তাঞ্জিলা বেগম ও কন্যা সাবিনা ইয়াসমিন মিলে ওই সার্টিফিকেট দু’টি নিয়ে বলেন, এগুলি চেন্নাই পাঠাতে হবে, পরে তাঁকে শংসাপত্রদু’টির প্রতিলিপি দেওয়া হবে।
তবে এরপরে এক বছর পেরিয়ে গেলেও কোনও প্রতিলিপি দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। ডালু মোল্লার দাবি, গত বছর ২৫ ডিসেম্বর টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে অভিযুক্তেরা জানায়, আরএমপি উঠে গিয়েছে। তাঁদের পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এবং ওই শংসাপত্র ফেরত না দিয়ে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হলেও অভিযোগ। বাধ্য হয়ে গত ৩ জানুয়ারি ওই তিনজন ও সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর পারভিনজে চন্দের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
শুক্রবার অভিযুক্ত শেখ রিয়াজুদ্দিনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের কোম্পানি চার বছর আগেই উঠে গিয়েছে। তা ছাড়া আমরা বাজার থেকে আমানত সংগ্রহের কাজ করতাম না। আমাদের ব্যবসার পদ্ধতি ছিল অন্য। একসঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা জমা দিয়ে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে হতো। তারপরে অন্য কাউকে ওই টাকা আদায় করার দায়িত্ব দিয়ে সংস্থায় যুক্ত করাতে হতো। ওই লোকেরা মোবাইল, ল্যাপটপ, সোলার ল্যাম্প, মাইক্রো ওভেন ইত্যাদি বিক্রি করে কমিশনও পেতেন। ফলে আমানত হিসেবে ওই টাকা ডালু মোল্লা আমাদের কাছে জমা দেননি। তাঁরা কয়েকজন মিলে সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন। সেই বাবদ ওই টাকা জমা পড়েছিল।” তাঁর দাবি, ডালু-সহ তিনজন আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে ইতিমধ্যে ১৫ হাজার টাকা আদায়ও করেছেন।
তবে ওই সংস্থার আরেক এজেন্ট বলেন, “বছর দুই আগে আমাদের সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। পুলিশ অভিযুক্ত সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিটও পেশ করে। সেই মামলায় রিয়াজুদ্দিনও অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন। মামলাটি এখন বিচারাধীন। পরে সংস্থাটিই রাজ্যে থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়।” |