নদী সংস্কার হয়নি দীর্ঘদিন, সঙ্কটে সেচ
দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে জলধারণ ক্ষমতা তলানিতে ঠেকেছে তিন নদীর। ফল একদিকে শীতে জল না পেয়ে সঙ্কটের মুখে চাষাবাদ, আরেক দিকে বর্ষায় দুকূল ছাপিয়ে ঘরবাড়ি, বিঘের পর বিঘে জমি ভাসাচ্ছে নদীগুলি।
কালনা মহকুমার বেশিরভাগ চাষিই সেচের জলের জন্য ভরসা করেন খরি, বেহুলা, গুরজোয়ানি, আঁধারের মতো বেশ কিছু নদীর উপর। তাঁদের অভিযোগ, বহু বছর সংস্কার না হওয়ায় নদীগুলির জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। কিছু কিছু নদীর পথ আটকেছে আগাছা ও ঘন জঙ্গল। সলগড়িয়া, ফড়িংগাছি, বাঘনাপাড়া, নান্দাই-সহ কালনা ১ ব্লকের বেশ কিছু গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গুরজোয়ানি নদী মজে গিয়ে নালায় পরিণত হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। এছাড়া বেগপুর, সোন্দলপুর, মাজিদা, নিরলগাছি ও বেলকুলি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আঁধারে নদীর বেশির ভাগ পথই রোধ করেছে আগাছা ও ঘন জঙ্গল।
সোন্দলপুরের এক চাষি ভরত দাসের অভিযোগ, “প্রশাসন উদাসীন। তাই আঁধারে নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। এখন যেটুকু জল থাকে তাতে চাষিদের চাষে খুব একটা লাভ হয় না।” ভরতবাবুর দাবি, আঁধারে নদীর শেষ বার সংস্কার হয়েছিল তিন দশক আগে। তবে সম্প্রতি একশো দিনের প্রকল্পে আঁধারে নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “কালনা মহকুমার একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী আঁধারে। সংস্কারের কাজ শেষ হলে প্রচুর চাষি উপকৃত হবেন।”
সংস্কারের অভাবে বেহাল বেহুলা নদীও। শিকারপুর, সিঙ্গরাইল, জঙ্গলপুর, তামাসাপুর, গোয়াড়া, ধর্মডাঙা, কোলডাঙা, মীরপুর, রামেশ্বরপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে বেহুলা। তার মধ্যে শিকারপুর থেকে সিঙ্গরাইল পর্যন্ত কিলোমিটার খানেক অংশ এতটাই মজে গিয়েছে, যে জলধারণ ক্ষমতা নেই বললেই চলে। ২০১২ সালে একশো দিনের প্রকল্পে কালনা ১ ব্লকের হাটকালনা পঞ্চায়েতের মুক্তারপুর সেতু থেকে ধর্মডাঙা সেতু পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার নদীপথ সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু আবার তা ঢেকে গিয়েছে কচুরিপানায়। ফলে সমস্যায় পড়েছেন মৎস্যজীবী থেকে স্থানীয় চাষি সবাই। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একশো দিনের প্রকল্পে হাটকালনা পঞ্চায়েতে বেহুলার একাংশে পাড় বাঁধানোর কাজ শুরু হয়েছে। মজে গিয়েছে নাদনঘাট, কুসুমগ্রাম, মন্তেশ্বর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খড়ি নদীও।
অথচ ফি বছর বর্ষায় মজে যাওয়া এই নদীগুলিই পাড় উপচে দু’পাশের জমি ভাসিয়ে দেয়। প্রত্যেক বছর লক্ষাধিক টাকার ফসল নষ্ট হয় বলে চাষিদের দাবি। নান্দাই পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান ঈদের আলি মোল্লা বলেন, “গুরজোয়ানি নদীর জলধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কমে গিয়েছে। বর্ষাকালে নদীর পাড়ের ঘুঘুডাঙা গ্রাম ভাসিয়ে দেয় এই নদী। প্রশাসনের অবিলম্বে সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া উচিত।”
সম্প্রতি কালনা ১ ব্লকে মৎস্য দফতরের একটি শিবির হাজির ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মহকুমার চারটি নদীর বেহাল অবস্থার কথা মেনে নিয়ে স্বপনবাবু বলেন, “এক সময়ের চাষাবাদের মূল ভরসা নদীগুলি এখন মজে গিয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছে।” নদীগুলি সংস্কার করা হলে সেচের জল পেতে আর সমস্যা হবে না। এ ছাড়া নদীতে উন্নত প্রজাতির হাঁস চাষ করে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরাও লাভবান বলে বলে তাঁর দাবি।
মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনায় রবি মরসুমে আলু, সর্ষের মতো কিছু চাষ হয়, যেখানে প্রচুর জলের প্রয়োজন। কিন্তু বেশির ভাগ নদীতেই পর্যাপ্ত জল না থাকায় চাষিরা পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল তুলে কাজে লাগাচ্ছে। ফলে এলাকার জলস্তরও নিম্নমুখী হয়ে যাচ্ছে। মহকুমা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক পার্থ ঘোষের কথায়, “নদীগুলি সংস্কার হলে রবি মরসুমে মাটির তলার জল তোলার চাহিদা অনেকটাই কমবে। কমবে চাষের খরচও।” এছাড়া পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকের বেশির ভাগ মৌজাতেই মাটির তলার জলে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি, সারা বছর নদীতে জল থাকলে সেই জলকে দূষণ মুক্ত করে পানীয় জল হিসেবে বিলি করলে দুই ব্লকের বহু মানুষ উপকৃত হবেন। একশো দিনের প্রকল্পেও নদীগুলি সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু।

বেহাল গুরজোয়ানি, আঁধারে এবং ছাড়িগঙ্গা। —নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.