প্রসব ব্যথা নিয়ে শেষ মুহূর্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হাজির এক প্রসূতি। কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তো অন্তর্বিভাগ চালু নেই! আছে কেবল বহির্বিভাগ। এ দিকে প্রসূতির যে কোনও সময় প্রসব হয়ে যেতে পারে। অগত্যা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই তরুণী বধূকে ভর্তি নিয়ে প্রসব করালেন চিকিৎসক ও নার্সেরা। বুধবার সকালে ওই প্রসবের পরই অন্তর্বিভাগ চালু হল জামবনি ব্লকের চিচিড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
জঙ্গলমহলের সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে শয্যা চালু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার দু’বছর পরও ছবিটা বদলায়নি। ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৮টি ব্লকে মোট ২৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এ দিন ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্যজেলার অধীনে অন্তর্বিভাগ চালু থাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তালিকায় সংযোজিত হল চিচিড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির নাম। চিচিড়াকে ধরলে সরকারি হিসেব মতে এখনও মাত্র ৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু রয়েছে। যদিও বাসিন্দাদের দাবি, দু’টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বাদে বাকিগুলিতে ঠিক মতো পরিষেবা মেলে না।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’জন চিকিৎসক, তিন জন নার্স, আরও তিন জন স্পেশাল নার্স রয়েছে। তা সত্ত্বেও চিকিৎসক-নার্সদের আবাসন জনিত সমস্যার কারণে চিচিড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তর্বিভাগটি এতদিন চালু করা যায়নি। চিকিৎসক-আবাসন রয়েছে একটি। নার্সের আবাসন রয়েছে দু’টি। কিন্তু সেখানে কেউই থাকেন না। সবাই যাতায়াত করেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবনে এখনও বৈদ্যুতিক সংযোগ হয়নি। কেবলমাত্র সপ্তাহে ৬দিন বহির্বিভাগ খোলা হয়। এ দিন খামারপাড়ার ওই তরুণী বধূটি কন্যা সন্তান প্রসব করার পরই চিচিড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু করে নিয়মিত রোগী ভর্তির নির্দেশ দিয়েছে ঝাড়গ্রাম স্বাস্থ্যজেলা দফতর।
ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “এদিন চিচিড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক প্রসূতি সন্তান প্রসব করেছেন। নবজন্মের ঘটনাটি দিয়েই আমরা অন্তর্বিভাগটি চালু করতে উদ্যোগী হয়েছি। এখন থেকে রোগীরা এলে অন্তর্বিভাগে ভর্তি নিতে বলা হয়েছে।” বাসিন্দারা বলছেন, চিচিড়া থেকে চিল্কিগড়ে অবস্থিত জামবনি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দূরত্ব ১৬ কিমি। আর চিচিড়া থেকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের দূরত্ব ৩২ কিমি। ফলে, স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে অন্তর্বিভাগের অভাবে রাতে সমস্যায় পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বেলপাহাড়ি ব্লকে তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র একটিতে (শিলদা) অন্তর্বিভাগ রয়েছে। বেলপাহাড়ি ব্লকের ওদলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপযুক্ত পরিকাঠামো-সহ নতুন ভবন থাকা সত্ত্বেও অন্তর্বিভাগটি চালু হয়নি। বিনপুর ১ ব্লকের ৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ১টি (লালগড়), ঝাড়গ্রাম ব্লকে ৪টির মধ্যে ১টি (মানিকপাড়া), সাঁকরাইল ব্লকের দু’টির মধ্যে ১টি (কুলটিকরি) প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতি ব্লকে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা গ্রামীণ হাসপাতাল ছাড়াও কমপক্ষে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু রাখতে হবে। কিন্তু নয়াগ্রাম ব্লকে ৩টি, গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকে ৩টি ও গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকে ৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটিতেও অন্তর্বিভাগ চালু হয়নি।
সমস্যাটা ঠিক কোথায়? রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “জঙ্গলমহলের সব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু করার মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক-নার্স নেই। তবে সদিচ্ছা থাকলে যা পরিকাঠামো রয়েছে তা দিয়েই অনেকটা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব।” তিনি বলেন, গত ২৪ জানুয়ারি ঝাড়গ্রামে এক প্রশাসনিক বৈঠকে জামবনি ব্লকের চিচিড়া, গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকের শাসড়া ও বেলপাহাড়ি ব্লকের ওদলচুয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে দ্রুত অন্তর্বিভাগ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপরও সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি।
জামবনির ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর অবশ্য প্রশ্ন, রাতে সেখানে কোনও চিকিৎসক ও নার্স থাকেন না। কী ভাবে অন্তর্বিভাগটি চলবে? চিচিড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ বারিক বলছেন, “পুরোদস্তুর অন্তর্বিভাগটি চালু হতে কিছুদিন সময় লাগবে। দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এলাকার ২৫টি গ্রামের প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ চিচিড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল। অন্তর্বিভাগটি চালু হলে সকলেই উপকৃত হবেন।” ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচের বক্তব্য, “পরিকাঠামোগত সমস্যা ও আবাসন সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। আমরা আশাবাদী দ্রুত এই সমস্যা মিটবে।”
আশাই ভরসা জঙ্গলমহলবাসীর! |