মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হৃদ্রোগের চিকিত্সা পরিকাঠামো বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছেন। শিশু হৃদ্রোগীদের জন্য চালু করছেন নয়া প্রকল্প। অথচ খাস কলকাতায় একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হৃদ্রোগের চিকিত্সার পরিকাঠামো মুখ থুবড়ে পড়েছে। কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাথ ল্যাবটি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এক মাস ধরে। ফলে চিকিত্সার সুযোগ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অসংখ্য রোগী। কবে তাঁদের দুর্ভোগ মিটবে, কবে ফের চালু হবে ওই যন্ত্র তা কেউই নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না।
জেলায় এখনও হৃদরোগ চিকিত্সার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। সেই কারণেই হার্টের সমস্যা হলে জেলা থেকে বহু ক্ষেত্রেই
রেফার করা হয় কলকাতায়।
সেখানে খাস কলকাতায় এমন নামী একটি মেডিক্যাল কলেজের এই দুরবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা
বড় অংশই।
বেশ কিছু দিন অপেক্ষার পরে এনআরএসে অ্যাঞ্জিওগ্রাম করানোর তারিখ পেয়েছিলেন অনল সাহু (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে পরীক্ষাটি করাতে এসে তিনি শোনেন, ক্যাথ ল্যাব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভাগের চিকিত্সকেরাই তাঁকে যন্ত্র সচল হওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে কোনও বেসরকারি কেন্দ্রে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এক ডাক্তারবাবু তো কোন বেসরকারি জায়গায় যেতে
হবে সেটাও বলে দিলেন। সরকারি খরচের দ্বিগুণেরও বেশি টাকা
গচ্চা দিয়ে আমাকে পরীক্ষাটা
করাতে হল।”
একই অভিযোগ প্রণতি মণ্ডলেরও। স্বামী অসীম মণ্ডলের চিকিত্সার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকেও। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময় যখন এল, তখন জানা গেল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি অনির্দিষ্ট কাল পিছিয়ে গিয়েছে। প্রণতিদেবীর কথায়, “আমার স্বামী একটা ছোট কারখানায় কাজ করতেন। অসুখের জন্য মাসের পর মাস কাজে যেতে পারেন না। ভেবেছিলাম স্টেন্ট বসানোর পরে আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন। এখন তো আর সামনে কোনও আশাই দেখছি না।”
ক্যাথিটারাইজেশন ল্যাবরেটরি বা ক্যাথ ল্যাবে হার্টের অসুখ নির্ণয় থেকে শুরু করে স্টেন্ট বসানো সবই হয়। বস্তুত, হৃদ্রোগ চিকিত্সার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্যাথ ল্যাব। সেখানে শহরের একটা অন্যতম প্রধান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কেন এত দিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে ক্যাথ ল্যাবটি?
কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান চিকিত্সক অরূপ দাসবিশ্বাস বলেন, “এর কোনও কারণ আমার জানা নেই। আমি কিছুই বলতে পারব না।” এনআরএসের সুপার দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ক্যাথ ল্যাব বন্ধ থাকার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “কিছু যন্ত্রাংশ বদলাতে হবে। সে নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কাজ শুরু করার।
কিন্তু কবে হবে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।” স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি (এএমসি) যথাযথ ভাবে রক্ষিত না হওয়ার কারণেই এমন ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তারা সময়ে সচেতন হলে এই সমস্যা সম্ভবত এড়ানো যেত।” সুপার অবশ্য দাবি করেন, “রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তির বিষয়টি এ ক্ষেত্রে জড়িত নয়। কারণ যন্ত্রটি ঠিকঠাকই চলছিল। আচমকাই যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে যাওয়ায় এই বিপত্তি।” |