বিকেল হতেই বন্ধ পরিষেবা, অভিযুক্ত সাগর দত্ত হাসপাতাল
বিকেল তিনটের পর অলিখিত ভাবে বন্ধ হয়ে যায় সব অস্ত্রোপচার! অতি জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন থাকলেও তা হয় না। মেলে না কোনও রক্তপরীক্ষা, ইসিজি, এক্স রে-র পরিষেবা। এমনকী, সাধারণ প্রসবের কেসও নিতে চান না চিকিত্‌সকেরা। সরকারি নিয়মানুযায়ী, এক মেডিক্যাল কলেজ থেকে অন্য মেডিক্যাল কলেজে কেস রেফার করা গর্হিত অন্যায়। সে নিয়মকেও তোয়াক্কা না করে নামকাওয়াস্তে খুলে রাখা ইমার্জেন্সিতে আসা রোগীদের তত্‌ক্ষণাত্‌ রেফার করা হয় আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে। কলকাতার একেবারে লাগোয়া এলাকায় রাজ্যের অন্যতম নতুন মেডিক্যাল কলেজ কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে গত দেড় বছর ধরে বিকেলের পর এই অচলাঅবস্থা চলছে বলে অভিযোগ।
মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালে সর্বোচ্চ পরিষেবার বদলে এমন শোচনীয় পরিষেবার কথা অজানা নয় স্বাস্থ্যকর্তাদেরও। সকলেরই বক্তব্য, তাঁরা নিরুপায়। গত ১৯ জানুয়ারি, রবিবার রাতে বুকে যন্ত্রণা নিয়ে ওই মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছন আগরপাড়ার শ্যামাদাস ব্যানার্জি স্ট্রিটের বৃদ্ধ তুলসীদাস মৌলিক। অভিযোগ, ইমার্জেন্সিতে ঢুকতেই ডিউটিরত চিকিত্‌সক তাঁকে স্পর্শ না করেই পত্রপাঠ আরজিকরে রেফার করে জানান, ইসিজি রাতে চলে না। ফলে বুকে ব্যথার রোগীকে রাখার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না! কোনওক্রমে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে তাঁকে আরজিকরে নিয়ে যাওয়া হলে রক্ষা পান বৃদ্ধ।
আরজিকরের শয্যায় বসেই একটি অভিযোগপত্র লিখে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের সুপার এবং স্বাস্থ্যভবনে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার অফিসে পাঠিয়েছেন তুলসীবাবু। তাঁর কথায়, “কলকাতার একেবারে গায়ে একটি মেডিক্যাল কলেজে বিকেল তিনটের পর আর কোনও পরিষেবা পাওয়া যাবে না, এটা ভাবা যায়! রাত সাড়ে দশটার সময়ে ওঁরা আমাকে পত্রপাঠ আরজিকরে রেফার করে দিচ্ছে। আমার সঙ্গে না হয় কয়েক জন ছিলেন। না-ও থাকতে পারতেন। তা হলে অসুস্থ শরীরে এত দূর কী করে যেতাম? আরও কত জন হয়তো প্রতিদিন একই সমস্যায় পড়ছেন। হয়তো বিনা চিকিত্‌সায় মারাও যাচ্ছেন!” ক্ষুব্ধ বৃদ্ধের আরও বক্তব্য, “সরকারের কি তার নাগরিকের
প্রতি কোনও দায়িত্ব নেই? যদি হাসপাতাল চালাতেই না পারে, তা হলে এত ঢাকঢোল পিটিয়ে গাদাগাদা নতুন মেডিক্যাল কলেজের ঘোষণা হচ্ছে কেন?”
স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ ব্যাপারে বক্তব্য, “কে বলল চিকিত্‌সা পরিষেবা দিতে মেডিক্যাল কলেজ খোলা হচ্ছে? সেগুলি খোলা হচ্ছে ডাক্তারি পড়ানোর জন্য! নতুন নতুন চিকিত্‌সক তৈরির জন্য!”
তা হলে কি এ বার থেকে এ রাজ্যের সাধারণ মানুষ কোনও মেডিক্যাল কলেজের থেকে চিকিত্‌সা পরিষেবা প্রত্যাশা করবে না?
এর উত্তরে সুশান্তবাবু বলেন, “তা ঠিক নয়। লোকজন, টেকনিশিয়ান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাব রয়েছে। তাই মূল অসুবিধা। আমরা লোক নিচ্ছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। আসলে নির্মাণকারী সংস্থা এই মেডিক্যাল কলেজ তৈরিতে অস্বাভাবিক সময় নিচ্ছে। এখনও হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ১৩০ থেকে বাড়ানো যায়নি। ইমার্জেন্সিতে আসা কেউ ভর্তিযোগ্য হলেও তাই ভর্তি করা যায় না। ফলে রেফার করতে হয়।”
যে বেসরকারি নির্মাণকারী সংস্থার উপরে এই কাজ শেষের ভার তাদের বক্তব্য, সরকার সময়মতো টাকা না দেওয়াতেই এই দেরি। এ অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করতে নারাজ সরকার। স্বাস্থ্যভবনের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাস বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। সরকারের তরফে আগে থেকে কোনও টাকা দেওয়ারই কথা নয়। চুক্তি ছিল সংস্থা নিজের টাকায় কিছুটা করে কাজ এগোবে, তা দেখে নিয়ে তবে সে কাজের টাকা দেবে সরকার। কিন্তু এখন ওরা মাছের তেলেই মাছ ভাজতে চাইছে। তাই কাজও এগোচ্ছে না। ফলে মেডিক্যাল কলেজ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এখনও এখানে সেই সাধারণ হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়েই কাজ চলছে।” কিন্তু দিনের পর দিন একটি মেডিক্যাল কলেজের মর্যাদাপ্রাপ্ত হাসপাতালে বিকেলের পর ন্যূনতম পরিষেবা মিলবে না, এটা মানুষ কেন সহ্য করবে?
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “সহ্য করার কথা নয়। কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার এই এলাকার মানুষ ভেবেছিলেন, একটা মেডিক্যাল কলেজ হলে তাঁদের কথায়-কথায় আরজিকরে দৌড়ানো কমবে। কিচ্ছু হল না। আমরা নিরুপায়। তিন জন অ্যানাসথেটিস্ট আর এক জন ওটি বয় দিয়ে তো আর ২৪ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার চালানো যায় না।”
তিনি আরও জানান, ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষার লোক মাত্র ৩ জন আর ইসিজি করার টেকনিশিয়ান ১ জন। বেশ কয়েক জন নার্সকে ডেপুটেশনে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে আর ফেরত দেওয়া হয়নি। কয়েক
জন রেসিডেনশিয়াল মেডিক্যাল অফিসার পদন্নোতি পেয়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন। এই রকম অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজ-তুল্য পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব বলে তাঁর মত। বলেন, “ইমার্জেন্সিতে বুকে ব্যথার রোগী এলেন। ইসিজি করতে না পারলে কীসের ভরসায় চিকিত্‌সক তাঁকে রাখবেন? কোনও সাধারণ প্রসবের কেস এল। কিন্তু প্রসব হতে গিয়ে জটিলতা হতে পারে। অস্ত্রোপচার লাগতে পারে। অথচ বিকেলের পর থেকে এখানে অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো নেই। অগত্যা বিকেলের পরে সাধারণ প্রসবের কেস ভর্তি করতেও চিকিত্‌সকেরা ভয় পান।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.