ব্রিগেড বার্তা
এক ডজন নয়ন
এক ডজন ক্যামেরা। উপরে, নীচে, ডাইনে, বাঁয়ে--- সর্বত্র। জনসমুদ্রে লাইট হাউসের মতো বিশ ফুটিয়া স্তম্ভের মাথাতেও ক্যামেরাধারী। মাঠের বিভিন্ন কোণ তাক করে একাধিক ক্রেন। ভিড়ের বড় অংশ মঞ্চের কাছে না-পৌঁছতে পারলেও কুছ পরোয়া নেই। জায়ান্ট স্ক্রিন ঘিরে দাঁড়িয়েই শতাব্দী রায়ের নৃত্য উপস্থাপনা বা দেবকে দেখার হুড়োহুড়ি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার সময়ে কুশলী অনলাইন এডিটিংয়ে মাঝেমধ্যেই জনতার মুখ। শাসক দলের তরফে এই সভা কভারেজের ফুটেজ থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলকেও ভাগ দেওয়া হয়েছে।

শীতকে চ্যালেঞ্জ মন্ত্রীমশাইয়ের
হাঁড়-কাপানো শীতেও নবদ্বীপের গঙ্গায় স্নান করতে তিনি দিব্যি স্বচ্ছন্দ বলে জানেন তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা। ইদানীং স্নায়বিক কিছু সমস্যায় খানিক ভুগলেও শীতকে কোনও কালেই ডরান না মন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। কিন্তু ব্রিগেডে তাঁর বেশ দেখে দীর্ঘদিনের পরিচিতরাও হতভম্ব। মঞ্চের পিছনে জনতাকে সাহায্য করার ক্যাম্পের তদারকিতে ব্যস্ত মন্ত্রীমশাই। পরনে স্রেফ সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি, হাফপ্যান্ট ও স্নিকার্স। ফিসফাস, মন্ত্রী কোনও স্পোর্টসে নাম লিখিয়েছিলেন নাকি! চাপা স্বরে জনৈক দলীয় কর্মীর রসিকতা, সব কিছু বিলিয়ে দিয়ে দাদা বুঝি রাজা হরিশচন্দ্র হয়েছেন।

নাচের ছন্দে...
সাংস্কৃতিক মঞ্চে সাংসদ শতাব্দী। —নিজস্ব চিত্র।

তাড়া তাড়ি
মাঠে হাঁড়ি নামাতেই ঘিরে ধরল এক দল যুবক। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই শেষ দু’হাঁড়ি তাড়ি। প্রতি গ্লাস পাঁচ টাকা। বিক্রিবাটার কথা জিজ্ঞেস করতেই একরাশ হাসি নৈহাটির আলমের মুখে। ভোররাতে বাড়ি থেকে বেশ কয়েক হাঁড়ি ভর্তি তাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন। ব্রিগেডে পুরনো বইমেলার মাঠে যেতে না যেতেই সব ক’টি হাঁড়ি শেষ। আলমের আফশোস, সঙ্গে লোক থাকলে আরও কয়েক হাঁড়ি আনা যেত। পরের ব্রিগেডে আর ভুল হবে না।

গানমেলা
প্রধান বক্তা আসার আগে মেজ-সেজ নেতাদের বক্তৃতা শুনতে দীর্ঘ দিন অভ্যস্ত ব্রিগেডের জনতা। পরিবর্তনের যুগে শাসক দলের সমাবেশে সেই পরম্পরায় ছেদ। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় স্রেফ সূত্রধরের ভূমিকা পালন করেই খুশি। জনতাকে মাতিয়ে রাখার দায়িত্বে তিন গায়ক ইন্দ্রনীল সেন, নচিকেতা ও শান্তনু রায়চৌধুরী। জনপ্রিয় গান ধিতাং ধিতাং বোলে, দরিয়ায় আইল তুফান, একদিন ঝড় থেমে যাবে পরপর হয়েই চলেছে। শতাব্দী রায়ের নৃত্যভাবনাও চাক্ষুষ করা গেল। রবীন্দ্রসঙ্গীত হবে না? শান্তনু ধরলেন, একদিন যারা মেরেছিল তারে গিয়ে...!

জাদুঘর
সাতসকালে ব্রিগেড চত্বরে পৌঁছেই গাঁয়ের পুরুষ-মহিলাদের সবাইকে নিয়ে জাদুঘর দেখতে গিয়েছিলেন বাঁকুড়ার খাতড়ার গোলাপ টুডু। সংস্কারের কাজে জাদুঘর বন্ধ থাকায় তাঁদের আফশোস কাটছে না। মালদহ থেকে আসা অসিত দাসও ছেলেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এ বার ঠিক জাদুঘর দেখিয়ে আনবেন। তাঁরও আশা মিটল না। সভা শেষে জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়েই কেউ কেউ ঠিক করলেন, ভিক্টোরিয়া কিংবা চিড়িয়াখানা যাবেন। তবে সে গুড়েও বালি। বাসের চালক তখন বাস ছাড়া হবে বলে তাড়া দিচ্ছেন।

শুচি মন
সকালেই সমস্যাটা টের পেয়েছিলেন লালবাজারের এক কর্তা। ব্রিগেডে সভাস্থলের আশপাশ যেন উন্মুক্ত গণশৌচাগার। মিটিং হলে সাধারণত গুটিকয়েক বাথরুমের ব্যবস্থা করে প্রশাসন। কিন্তু এমন জনবিস্ফোরণে তা যে কাজে আসবে না, তা বোঝাই গিয়েছিল। আমেরিকান সেন্টারের উল্টো দিকে ময়দানের অংশে হাঁটতে হচ্ছে নাকে রুমাল চেপে। শুধু প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়াই নয়, পুরনো বইমেলার মাঠের ঝিলে স্নান সারতেও তুমুল উৎসাহ। রোদে দাঁড়িয়ে আরাম করে গামছা রগড়াতে রগড়াতে নানুরের অচিন্ত্য খাঁড়া বললেন, “এ বার ফ্রেশ হয়ে মিটিং শুনব!”

দূর-দর্শন
ভিড়ের পিছুপিছু ব্রিগেডে পৌঁছনো আর সম্ভব নয়! অথচ দূর থেকে দিদির কণ্ঠ ভাল শোনা যাচ্ছে না। উৎসাহী জনতার একাংশ অগত্যা পিছনে ফিরে এক-ছুটে পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলের মাথায়। সেখানে দাঁড়িয়েই দিদির দর্শন মিলল। জনৈক জার্মান পর্যটকও সেখানে দাঁড়িয়েই মিটিংয়ের দৃশ্য লেন্স-বন্দি করছেন। বললেন, কলকাতায় এমন মিটিং আগেও দেখেছেন। এমনিতে উড়ালপুলে ওঠা নিষেধ। কিন্তু জনতার মাতামাতিতে হেসে ফেললেন ট্র্যাফিক পুলিশের ক’জন অফিসার। বিশেষ উপলক্ষে উৎসাহীদের ছাড় মিলল।

সাইকেল বাহিনী
দলের মিটিং হলে প্রত্যেক বারই সাইকেলে চড়ে আরামবাগ থেকে ব্রিগেডে যান সুশান্ত কর্মকার। এ বারও ব্যতিক্রম হল না। মঙ্গলবার ভোরে আরামবাগের বাড়ি থেকে রওনা দিয়ে ওই দিন বিকেলে কলকাতায় পৌঁছন তিনি। দু’দিন থেকেছেন মঞ্চের সামনে। আবার, বারাসতের কাউন্সিলর সজল ভট্টাচার্য দেড়শো সাইকেলের বাহিনী নিয়ে এসেছিলেন এ দিন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.