আয় বাড়লেও স্বল্প সঞ্চয়ে নয়া আমানত অধরা
মার হার বাড়েনি। তবে তহবিল থেকে খরচ বিস্তর কমে যাওয়ায় পুঁজির বহর ঊর্ধ্বগামী। এক কথায় এটাই হল পশ্চিমবঙ্গে স্বল্প সঞ্চয়ের বর্তমান চিত্র।
সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার প্রায় এক বছর গড়াতে চলল। ভাবা গিয়েছিল, সারদার মতো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি সম্পর্কে মানুষের মোহ কাটায় কেন্দ্রীয় বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে হয়তো আমানতের জোয়ার আসবে। সে আশার প্রতিফলন বাস্তবে এখনও নেই। অন্তত চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ন’মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে নতুন আমানতের হার তা-ই বলছে। যদিও জমানো টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাওয়ায় স্বল্প সঞ্চয় খাতে রাজ্যের নিট আয়ের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ! যার পিছনে অবশ্য ভুইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থা সম্পর্কে মানুষের ‘মোহভঙ্গের’ই ভূমিকা দেখছেন সরকারি কর্তারা।
পোস্ট অফিসের সেভিংস স্কিম হোক, কিংবা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ) বা এনএসসি ফি অর্থবর্ষে কোনও রাজ্যে বিভিন্ন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প থেকে গ্রাহকেরা যত টাকা তুলে নেন, গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ তার বেশি হলে ফারাকের অঙ্কটিকে বলে নিট আয়। এবং ওই নিট আয়ের পুরোটা কেন্দ্রের থেকে সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে পায় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার, যা উন্নয়নের কাজে খরচ হয়। নবান্ন-সূত্রের খবর: গত অর্থবর্ষে (২০১২-১৩) পশ্চিমবঙ্গে স্বল্প সঞ্চয়ের নিট আয় যেখানে ছিল ৫৫ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের শেষে (এপ্রিল-ডিসেম্বর) তা তিরিশ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০০ কোটিতে। মার্চে অর্থবর্ষের শেষ হলে অঙ্কটি কম করে ২৩০০ কোটি হবে বলে মনে করেন রাজ্যের স্বল্প সঞ্চয়-অধিকর্তা মোবাশ্বের আলি বৈদ্য।
অর্থাৎ চল্লিশ গুণেরও বেশি বৃদ্ধির আশা! আমানতকারীদের টাকা তোলার প্রবণতায় এমন ধস নামল কেন? সরকারি কর্তাদের ব্যাখ্যা: আগে বহু লোক স্বল্প সঞ্চয়ের টাকা মেয়াদপূর্তির আগেই তুলে নিয়ে চড়া সুদের আশায় তা ঢালতেন সারদার মতো বিভিন্ন লগ্নিসংস্থায়। “পরিণতি দেখে ওঁরা ঠেকে শিখেছেন। ভাবছেন, পোস্ট অফিসে বা পিপিএফে টাকা মার যাওয়ার তো ভয় নেই! তাই যেখানকার টাকা সেখানেই রাখছেন।”- মন্তব্য রাজ্য অর্থ দফতরের কর্তার।
ফলে নিট আয়ের বৃদ্ধি-রেখা চড়চড়িয়ে উঠছে। পাশাপাশি বাড়তি লাভের টোপ দিয়ে অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি এত দিন সঞ্চয়যোগ্য কত পুঁজি টেনে নিচ্ছিল, এই পরিসংখ্যান তা-ও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বলে দাবি করছেন সরকারি আধিকারিকেরা। অথচ স্বল্প সঞ্চয়ে নতুন আমানতের বহরে বৃদ্ধির লক্ষণ নেই! নবান্নের তথ্য বলছে, গত অর্থবর্ষে রাজ্যে স্বল্প সঞ্চয়ে মোট ২৪,৫৫৫ কোটি টাকা জমা পড়েছিল। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ন’মাসে তা সাড়ে ১৭ হাজার কোটিও ছাড়ায়নি। মার্চ পর্যন্ত বাকি তিন মাসে আমানত কতটা বাড়ে, অর্থ-কর্তারা তা দেখার অপেক্ষায়। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, অবৈধ অর্থলগ্নির কারবার নিয়ে রাজ্যজোড়া আলোড়নের পরেও সাধারণ আমানতকারীরা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে নতুন করে টাকা জমানোয় সে ভাবে আগ্রহী হচ্ছেন না কেন?
সরকারি এক মুখপাত্র আঙুল তুলছেন এজেন্ট-কমিশন ছাঁটাইয়ের দিকে। তাঁর অভিযোগ, ডাকঘরে প্রবীণ নাগরিকদের সঞ্চয় প্রকল্পে এবং পিপিএফে এজেন্টদের কমিশন প্রথা তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। মাসিক আয় প্রকল্পেও (মান্থলি ইনকাম স্কিম, সংক্ষেপে এমআইএস) এজেন্টদের প্রাপ্য ৫% বোনাস উঠে গিয়েছে। উঠে গিয়েছে কিসান বিকাশ পত্রের (কেভিপি) মতো সঞ্চয় মাধ্যম। এমতাবস্থায় বহু এজেন্ট আর আমানত সংগ্রহে সে ভাবে গা লাগাচ্ছেন না
এই কারণে নতুন আমানতেও প্রত্যাশিত জোয়ার নেই বলে সরকারের দাবি। সাধারণ মানুষ তা হলে সঞ্চয়ের টাকা রাখছেন কোথায়? সরকারের কর্তারা এর স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তাঁদের একাংশের ধারণা, এর একটা বড় অংশ ব্যাঙ্কে রাখা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের স্বার্থে গত নভেম্বরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজস্ব আর্থিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে। পশ্চিমবঙ্গ পরিকাঠামো উন্নয়ন বিত্ত নিগমের (ডব্লিউবিআইডিএফসি)-র পরিচালনাধীন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পটিতে এজেন্টদের জন্য ১% হারে কমিশন বরাদ্দ হয়েছে। যদিও সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, উদ্যোগে এখনও তেমন সাড়া মেলেনি। গোড়ায় কথা ছিল, চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তাতে টাকা জমা দেওয়া যাবে। আপাতত সেই কাজ হচ্ছে শুধু একটি ব্যাঙ্কে।

পুঁজি-পঞ্জি
জমা নিট আয়
২৪,৫৫৫ ৫৫
২০১২-১৩ অর্থবর্ষ
১৭,৫০০ ১,৭০০
২০১৩-১৪ অর্থবর্ষ (প্রথম ৯ মাসে)
সব অঙ্ক কোটি টাকায়



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.