বাদ পড়ে গেলেন গাঁধী।
বৃহস্পতিবার গাঁধীর প্রয়াণ দিবসে সরকারি অনুষ্ঠানে রাজ্যের কোনও মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন বলেন, ‘‘এটা গাঁধীজির স্মরণ অনুষ্ঠান। এখানে সরকারের কোনও মন্ত্রী না থাকায় আমি ব্যথিত।’’
বৃহস্পতিবার সকাল ন’টায় ব্যারাকপুর গাঁধীঘাটে পৌঁছন রাজ্যপাল। প্রথা অনুযায়ী রাজ্য সরকারের কোনও মন্ত্রীরই রাজ্যপালকে স্বাগত জানানোর কথা। তারপর অনুষ্ঠান চলাকালীনও বরাবর মন্ত্রিরা থাকেন। কিন্তু এ দিন ব্যারাকপুরে রাজ্য সরকারের কোনও মন্ত্রীই উপস্থিত ছিলেন না। রাজ্য সরকারের পক্ষে রাজ্যপালকে স্বাগত জানান মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র।
মিনিট পঁয়ত্রিশের অনুষ্ঠান সেরে ফিরে যাওয়ার সময় এই অনুপস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে রাজ্যপাল দাঁড়িয়ে পড়েন। সাংবাদিকরা রাজ্যপালের কাছে জানতে চান, অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর থাকা কি উচিত ছিল? নারায়ণন বলেন, ‘‘উচিত ছিল মানে? অবশ্যই উচিত ছিল।’’ |
ব্যারাকপুরের গাঁধীঘাটে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের শ্রদ্ধা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়। |
সরকারি কর্তারা জানাচ্ছেন, বামফ্রন্ট আমলে এই ধরনের অনুষ্ঠানে রাজ্যপালকে স্বাগত জানাতে সাধারণত উপস্থিত থাকতেন পূর্তমন্ত্রী। তৃণমূল সরকারের আমলে কখনও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কখনও বা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে এই সব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে। এক বার পূর্তমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারও রাজ্যপালের সঙ্গে ব্যারাকপুরে যোগ দিয়েছিলেন। এ দিন তাঁদের কেউই ছিলেন না। কেন? নবান্নের এক কর্তা বলেন, “এমন নয় যে কোনও মন্ত্রীর যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি যাননি। আসলে এ দিন গাঁধীঘাটের অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিবই সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে ঠিক হয়েছিল।” ব্যারাকপুরের অনুষ্ঠানে এ দিন কোনও বিধায়ক, সাংসদ, পুরসভার চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরকেও দেখা যায়নি।
অথচ ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনের সরকারি অনুষ্ঠানেও হাজির ছিলেন অমিত মিত্র এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ১২ জানুয়ারি বিবেকানন্দের জন্মদিন, সূর্য সেনের মৃত্যুদিন এবং দেশপ্রিয় পার্কের আরও একটি সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সুব্রতবাবু। ২৫ জানুয়ারি মল্লিকবাজারে মাইকেল মধুসূদন দত্তের সমাধিতে মাল্যদান করেন ব্রাত্য বসু।
এ দিন তবে কেন কোনও মন্ত্রী গেলেন না? সরকারি সূত্রের খবর, কোন মন্ত্রী ব্যারাকপুরের অনুষ্ঠানে যাবেন তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের শীর্ষ স্তরে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই নির্দেশ আসে, গাঁধীর প্রয়াণ দিবসে মুখ্যসচিবই সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে যাবেন। এ দিন তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ থাকার জন্যই কোনও মন্ত্রীকে পাঠানো হয়নি বলে সরকারি কর্তাদের ধারণা। গোটা বিষয়টার সমালোচনা করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “তৃণমূলের মন্ত্রীদের কাছে দলের অনুষ্ঠানই বড় হয়ে গেল! দল এবং দলনেত্রীর প্রতি স্তাবকতা দেখাতে দিয়ে গাঁধীজিকে সম্মান জানাতে গেলেন না মন্ত্রীরা।”
ব্যারাকপুরে অনুষ্ঠান থেকে ফিরে ময়দানে গাঁধীমূর্তিতে মালা দেন রাজ্যপাল। সেখানেও ছিলেন না কোনও মন্ত্রী। রাজ্য সরকারের তরফে সেখানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিব অত্রি ভট্টাচার্য। যদিও ব্রিগেডের মিটিং শেষ হওয়ার পরে এ দিন শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্সি ও আলিপুর জেলে হাজির ছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বিকেলে বজবজে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানেও রাজ্যপালের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তিনি। প্রশ্ন করা হলে সুব্রতবাবু বলেন, “আমার ব্যারাকপুরের অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল না। কেন কোনও মন্ত্রী যাননি, বলতে পারব না।”
|