|
|
|
|
গাড়ি ছুটিয়ে আনা হল গুরুঙ্গকে
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে ব্রিগেডের সভায় যোগ দিতে মোর্চা নেতা তথা জিটিএ-চিফ বিমল গুরুঙ্গ বুধবার দুপুরের বিমানেই পৌঁছে গিয়েছিলেন কলকাতায়। বৃহস্পতিবার সভাস্থলে কিন্তু এসে পৌঁছলেন শেষ মুহূর্তে। তখন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা প্রায় শেষ হওয়ার মুখে। ফলে গুরুঙ্গের আর বক্তৃতা দেওয়া হল না। যানজটেই এই দেরি, বলছে সরকারি সূত্র। কিন্তু রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো, তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চে তাঁর বক্তৃতা অস্বস্তির কারণ হবে, আন্দাজ করেই দেরি করেছেন গুরুঙ্গ।
তাতে অবশ্য শেষরক্ষা হয়নি। তৃণমূলের সভায় উপস্থিতির জন্য বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব। মোর্চা-তৃণমূল একই মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ, কটাক্ষ করেছে অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরপিএম এবং সিপিএম। মোর্চার দাবি, রাজনৈতিক সৌজন্যের খাতিরে সভায় গেলেও আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে তাঁরা সরছেন না।
মুখ্যমন্ত্রী জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে দার্জিলিং সফরে গিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে ব্রিগেডের সভায় তাঁদের অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান। দলে আলোচনার পরে গুরুঙ্গ জানিয়ে দেন, তাঁরা ব্রিগেডে যাবেন। সেই মতো মোর্চার শীর্ষ নেতারা এক দিন আগেই কলকাতায় পৌঁছে যান। কিন্তু, এ দিন সভা শুরুর পরে অনেকটা সময় গড়ালেও বিমল গুরুঙ্গ না পৌঁছনোয় খোঁজখবর শুরু হয়। তখনই জানা যায়, জিটিএ-প্রধান পার্ক সার্কাসের কাছে যানজটে বন্দি। নড়াচড়ার জো নেই। |
|
সাক্ষাৎ। ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায়
পৌঁছলেন বিমল গুরুঙ্গ। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবাশিস রায়। |
বেগতিক বুঝে, গুরুঙ্গকে যত দ্রুত সম্ভব ব্রিগেডে নিয়ে আসার নির্দেশ পাঠান পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। তখন পার্ক স্ট্রিটে পশ্চিমমুখী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু শীর্ষ স্তরের নির্দেশে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা হল। ট্র্যাফিক আটকে উল্টো দিক দিয়েই গুরুঙ্গকে গড়ের মাঠের দিকে নিয়ে আসার। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শেষ হওয়ার আগেই অবশেষে মঞ্চে দেখা মিলল কাঙ্ক্ষিত অতিথির। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানালেও বক্তৃতা দেওয়ানো আর হয়ে ওঠেনি।
তৃণমূলের সভায় মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতির কটাক্ষ, “মোর্চা ও তৃণমূল একই মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ। এটাই প্রমাণ হল। মনে হল, রাজ্য যা বলবে তা-ই করবেন গুরুঙ্গ। তবে মাঝেমধ্যে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে শুধু লোক দেখানো হইহল্লা বাধাবে মোর্চা।” আগামী লোকসভা ভোটে তৃণমূলের পাশে মোর্চা থাকবে, মন্তব্য করেন তিনি। সিপিআরএমের গোবিন্দ ছেত্রী বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল তাদের জনসভায় আমন্ত্রণ করতেই পারে। সে জন্য সেখানে ছুটে যেতে হবে? এতে তো মনে হতে পারে গোর্খাল্যান্ডের দাবি বিকিয়ে গিয়েছে।”
এ দিন সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য তৃণমূল ও মোর্চা, দু-তরফেরই সমালোচনা করেছেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর মন্তব্য, “তৃণমূল-মোর্চার বিরোধিতার দিন কি তবে ফুরোল? দু’টি দল পাহাড়ে টিকবে তো?” তৃণমূল নেত্রী গোর্খাল্যান্ডের দাবিদারদের বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না কেন, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী অবশ্য অশোকবাবুর মন্তব্যের জবাব দিতে রাজি হননি। তাঁর দাবি, “পাহাড়ের যাঁরা ভাবছেন, আমরা গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে সরেছি, তাঁরা ভুল ভাবছেন।” তাঁর পাল্টা চ্যালেঞ্জ, “আমাদের বিরোধীরা যদি সত্যিই আলাদা রাজ্য চান, তা হলে এখনই আন্দোলনে নামুন। আমরা তাতে সামিল হব।”
মোর্চার কালিম্পঙের বিধায়কের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিঙে গিয়ে মোর্চাকে আমন্ত্রণ করেছেন। তাতে সাড়া না দিলে সেটা সৌজন্যের পরিচয় হতো না। পাহাড়ের মানুষের সৌজন্য পৃথিবী বিখ্যাত। তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে লোকসভা ভোট নিয়ে আলোচনা হয়নি।” মোর্চার অন্দরের খবর, আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি দার্জিলিঙে জামুনির সভায় সেটা ঠিক হবে। |
|
|
|
|
|