|
|
|
|
দুষ্টুমি দামালের ধর্ম, প্রশ্ন বিরোধীদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রত্যাশা ছিল, লোকসভা নিবার্চনের আগে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে শৃঙ্খলারক্ষার কড়া বার্তা থাকবে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে। দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে হুঁশিয়ারি থাকবে। প্রত্যাশা ছিল সাম্প্রতিক কালের নানা দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তারও। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ব্রিগেড সমাবেশে সেই পথে হাঁটলেন না মুখ্যমন্ত্রী। ধর্ষণের ‘একটা-দু’টো ঘটনা নিয়ে হইচই’ করায় বরং কড়া আক্রমণ করলেন বিরোধী তথা সমালোচকদেরই।
কলেজ ভোটে গত কয়েক দিনে রাজ্যের নানা প্রান্তেই সংঘর্ষে নাম জড়িয়েছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের। আবার বিরোধীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে বিষোদগার করে বিতর্কে থেকে গিয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। অতীতে একাধিক বার নিজের ভাষণে তৃণমূল নেত্রী তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, মানুষ ক্ষুণ্ণ হতে পারেন, এমন কাজ করা চলবে না। ব্রিগেডে এ দিনও তিনি বলেছেন, মানুষের ক্ষতি করা চলবে না। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী-সুলভ হুঁশিয়ারির সুর সেখানে ছিল না। বরং, একই সঙ্গে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “দুষ্টুমি করাটা দামাল ছেলেদের একটা ধর্ম!” যার প্রেক্ষিতে বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই যদি এমন কথা বলেন, তা হলে অপরাধীরাই উৎসাহ পাবে। |
|
আমিও এসেছি। ব্রিগেডে হাজির তৃণমূলের খুদে সমর্থক। —নিজস্ব চিত্র। |
উন্নততর বাংলা গড়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, শৃঙ্খলাপরায়ণ, নিবেদিত যুব সমাজকে তাঁর দরকার বলে এ দিন মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই ঈষৎ হাল্কা সুরে বুঝিয়ে দেন, দামাল ছেলেরা একটু দুষ্টুমি করবেই। অনুব্রত বা কারও বিরুদ্ধে নাম না-করেও মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে এ দিন কোনও কথা শোনা যায়নি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম তাই বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতে গুণ্ডা-অপরাধীরাই উৎসাহিত হল!” তাঁর আরও অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী বাম আমলে বানতলা, ধানতলার কথা তুলেছেন। ওই অপরাধীরা সব জেলে। কিন্তু তৃণমূল আমলে পার্ক স্ট্রিট থেকে মধ্যমগ্রাম, বারাসত কোনও ক্ষেত্রে অপরাধীদের শাস্তি হয়নি।” প্রসঙ্গত, বীরভূমের দুই বিতর্কিত নেতা অনুব্রত ও মনিরুল ইসলাম এ দিন স্বমহিমায় ব্রিগেডের মঞ্চে ছিলেন।
বস্তুত, বিরোধীদের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে ধর্ষণ, টেট-দুর্নীতি, সারদার টাকা ফেরত পাওয়া যাবতীয় প্রাসঙ্গিক বিষয়ই মুখ্যমন্ত্রী এড়িয়ে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অভিযোগ করেছেন, উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে সরকারি শিবিরে ১৫ জন মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে কংগ্রেস, সিপিএম বা বিজেপি নীরব। অথচ এ রাজ্যে টিভি চ্যানেলকে ব্যবহার করে কুৎসা ছড়ানো হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “একটা-দু’টো ঘটনা নিয়ে হইচই হচ্ছে। একটা ঘটনাও ঘটুক, আমরা চাই না। কিন্তু একটা-দু’টো ঘটনা ঘটলেই কংগ্রেস-সিপিএম-বিজেপি বাংলার বদনাম করতে নেমে পড়ছে!” বিজন সেতু, ধানতলা, বানতলা, চমকাইতলা, খেজুরি, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, নেতাই-সহ বাম আমলের একের পর এক ঘটনাই টেনে এনেছেন তৃণমূল নেত্রী। যার প্রেক্ষিতে সেলিমের পাল্টা বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী মুজফ্ফরনগরের ধর্ষণ নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু রাজ্যের বেলায় তিনি চুপ!
উল্টে যাঁরা প্রতিবাদ করছে, উনি তাদের সমালোচনা করছেন!” এই ক্ষেত্রেও সিপিএম নেতার আশঙ্কা, “কামদুনি থেকে বারাসত, মধ্যমগ্রাম, খিদিরপুর প্রতি দিনই রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এ রাজ্যে মহিলারা নিরাপদ নয় বলে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সমালোচনা করছে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী এ কথা বলায় ধর্ষণকারীরাই উৎসাহিত হবে।”
বিরোধীদের তরফে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, তৃণমূল সমর্থকেরা ব্রিগেডের সমাবেশে গেলেও সাধারণ মানুষ রাজ্য সরকারের উপরে বীতশ্রদ্ধ। নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনার জন্য মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে বলেই প্রদীপবাবুর দাবি।
একই ভাবে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, “ধর্ষণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নীরব কেন? সারদা, টেট, ত্রিফলা বা উত্তরবঙ্গে এসজেডিএ-র দুর্নীতি সমস্ত কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিয়ে দিচ্ছেন। আর নানা রকম আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন!”
তাঁর আমলে রাজ্যে যত উন্নয়নের কর্মকাণ্ড হয়েছে, তার কিছু বিবরণও এ দিনের সমাবেশে প্রত্যাশিত ভাবেই পেশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। সে সবেরও কড়া সমালোচনা এসেছে প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের তরফে। যেমন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাম আমলে রাজ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছিল। তৃণমূল জমানায় এর মধ্যেই ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়ে গিয়েছে। সেলিমের প্রশ্ন, “কোন ৬টি দয়া করে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী জানাবেন কি? রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর সব ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাল-তারিখ উল্লেখ করে বিজ্ঞাপন দেবে কি?”
বাম আমলে বিপুল ঋণের বোঝা তাঁকে বইতে হচ্ছে বলে ফের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেলিমের প্রশ্ন, “গত আড়াই বছরে দেশের সব ক’টি রাজ্যের থেকে বাজার থেকে এ রাজ্য বেশি ঋণ নিয়েছে। কেন নিল?” |
|
|
|
|
|