নেতাদের মঞ্চে রাখলেও প্রাধান্য কিন্তু বিশিষ্টদেরই
মুখ্য চরিত্র তিনিই। দলকে বার্তা দেওয়ার মুখ্য দায়িত্বও তাঁর। কিন্তু পার্শ্বচরিত্র হিসেবে দলের প্রথম সারির নেতারা যে সুযোগ পান, তৃণমূলের এ বারের ব্রিগেডে তা-ও ঘটল না।
দলনেত্রী ছাড়া তৃণমূলের আর কোনও নেতাকেই রাজনৈতিক বক্তব্যের জন্য মাইক্রোফোন হাতে নিতে হল না বৃহস্পতিবার! যেটুকু মাইক হাতে পেয়েছেন, তাতে তৃণমূল নেতারা শুধু ভিড় সামলালেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করলেন। তৃণমূল নেত্রীর আগে নাতিদীর্ঘ হলেও ব্রিগেড মঞ্চে বক্তার তালিকায় উঠে এলেন সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী, সঙ্গীতশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা দেব, সন্ধ্যা রায়ের মতো জনা কয়েক বিশিষ্ট মুখ। সভা মঞ্চেও প্রাধান্য ছিল টলিউডের নবীন-প্রবীণ প্রজন্ম ও টেলি-সিরিয়াল জগতের এক ঝাঁক চেনা মুখের।
শাসক দলের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সচেতন ভাবে নেওয়া। বিরোধী নেত্রী হিসেবে তাঁর যা ভাবমূর্তি ছিল, এখন মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় তা যে অনেক প্রসারিত সেই বার্তা স্পষ্ট করে দেওয়ার দরকার ছিল। যার জন্যই টলিউড-সহ সাংস্কৃতিক জগতকে পাশে নিয়ে এ দিন ব্রিগেডে নিজেকে পেশ করেছেন মমতা। পাশাপাশিই, নারী নিগ্রহ-সহ নানা ঘটনায় বিশিষ্টদের একাংশকে নিয়ে যে প্রতিবাদের চেষ্টা হচ্ছে, তার বিপরীতে তাঁর শিবিরের ছবিটাও পরিষ্কার করে দিতে চেয়েছেন।
ব্রিগেডের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পায়েল সরকার, জুন মালিয়া, দেব
এবং মহাশ্বেতা দেবী। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ আচার্য।
তাঁরা যে প্রত্যেকেই দেশের চালকের ভূমিকায় মমতাকে দেখতে চান, ব্রিগেড থেকে এ দিন অকপটে ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্টেরা। এক সময় মমতাকে ‘ফ্যাসিস্ত’ বলে তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন অশীতিপর মহাশ্বেতা। অশক্ত শরীরে এ দিন মঞ্চে এসে তিনিই আগামী দিনের একমাত্র যোগ্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরেছেন মমতাকে। লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনাতে গিয়ে মমতাকে ‘জনহিতৈষী, জনদরদী’ এবং লড়াকু নেত্রী বলেও বিশেষিত করেছেন। এ দিনের ব্রিগেড সমাবেশ দেখে অভিভূত মহাশ্বেতা বলেই ফেলেছেন, “ইন্দিরা গাঁধী, মুজিবর রহমানের ডাকে যে সমাবেশ হয়েছিল, তাতেও এত সাড়া মেলেনি। আজ যে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমুদ্র দেখলাম, মাত্র তিন বছরে মমতা তা করে দেখিয়েছে!”
মমতা তখনও মঞ্চে আসেননি। গান-নাচের বিনোদনী আবহে হঠাৎই সভার সঞ্চালক, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ঘোষণা করেন টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম নূরুর রহমান বরকতি-র নাম। দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনিও মমতাকে তুলে ধরে ব্রিগেডকে বললেন, “কাশ্মীর, মুম্বই, দিল্লি সব জায়গা ঘুরে দেখেছি, লোকে মমতার কথা বলছে। গোটা ভারত বলছে, মমতাকে প্রধানমন্ত্রী কর। এক বার মমতাকে সুযোগ দিন। ভারত মহান হবে!”
তাঁদের সুরেই দ্বিজেনবাবুও বুঝিয়ে দিয়েছেন, মমতাকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকায় দেখতে চান তিনিও। বলেছেন, “দিল্লি জানে, আমরা আসছি!” দেশের গণ্ডি ছাড়িয়েও তৃণমূল নেত্রীর আকর্ষণের কথা বোঝাতে প্রবীণ শিল্পীর মন্তব্য, “সারা পৃথিবী মমতাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করে আছে!”
দ্বিজেনবাবুর অদূরেই বসেছিলেন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। মুকুলবাবু তাঁর নাম ঘোষণা করতেই আবেগমথিত কণ্ঠে সন্ধ্যা বলেন, “তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম বার ব্রিগেডে এসেছিলাম। তার আগে কখনও আসিনি। তখনও মানুষের ঢল দেখে অবাক হয়েছিলাম। এ বারও তা-ই!” ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মমতা এ রাজ্যের চলচ্চিত্র দুনিয়ার আনাচ-কানাচে বিশেষ নজর দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। তাঁর বক্তব্য, নতুন শিল্পীদের জন্য কাজের পরিবেশ তৈরি থেকে চলচ্চিত্র শিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়ন মুখ্যমন্ত্রী খুঁটিনাটি খেয়াল রাখার সুফল টলিউড পাচ্ছে।
জনগণমন অধিনায়ক... জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় মঞ্চে পায়েল, সায়ন্তিকা,
তাপস পাল, জুন মালিয়া, দেব ও সন্ধ্যা রায়। বৃহস্পতিবার ব্রিগেডে। —নিজস্ব চিত্র।
একের পর এক প্রবীণ বিশিষ্টদের মধ্যেই যুব-উন্মাদনার ঢেউ ছুঁয়ে ফেলেছিলেন দেব। হাতা গোটানো সাদা শার্ট, রোদচশমায় দেব-দর্শনে ব্রিগেডের ভিড় হাত নেড়ে আপ্লুত অভিবাদন জানায়। মঞ্চ থেকে টলিউডের ‘শঙ্কর’ও পাল্টা হাত নেড়ে জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “একসঙ্গে এত লোককে এই প্রথম বার দেখছি! (যদিও এর আগেও তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশে হাজির ছিলেন দেব) আমরা দিদির সঙ্গে আছি। আপনারাও সঙ্গে থাকবেন!”
মঞ্চে বসে তখন তৃণমূলের সব মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ। কিন্তু বলার জন্য ডাক পাচ্ছেন না কেউই। দলীয় সভায় পরপর বিশিষ্ট জনের বক্তব্য শুনতে শুনতে অনেকেই বিস্মিত এবং ক্ষুণ্ণ হয়েছেন। সভা শেষের পরে দলের এক শীর্ষ নেতার ক্ষোভ, “এর পরে কোনও বড় সভা হলে যাব না। নার্সিংহোমে ভর্তি হয়ে ডাক্তারের সার্টিফিকেট দলনেত্রীকে পাঠিয়ে দেব।” তবে এ দিন সভায় দলনেত্রী ছাড়া দলের অন্য কাউকে বলতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। ফলে, দলের অন্দরের এই ক্ষোভকে আমল না দিয়ে এক শীর্ষ নেতা জানান, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকারের টেট-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভাস চক্রবর্তী, তরুণ সান্যালদের নেতৃত্বে বিদ্বজ্জনেদের মিছিলের জবাব দিতেই এ দিন মমতা-পন্থী বিশিষ্টদের ব্রিগেডের বক্তা হিসেবে বাছা হয়েছে।


আপনার মোবাইলে QR Reader ডাউনলোড করে এই QR
কোডটি স্ক্যান করুন আর দেখে নিন ব্রিগেডের মঞ্চে দেবের বক্তব্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.