তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের জন্য উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকে সরকারি ও বেসরকারি বাস তুলে নেওয়ায় দুর্ভোগ পোহালেন নিত্যযাত্রীরা। বিভিন্ন সরকারি অফিসেও তুলনামূলক কম কর্মী এসেছিলেন এ দিন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের বাসন্তী, গোসাবা তথা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বুধবার রাতেই পায়ে হেঁটে, নদী পেরিয়ে, গাড়ি করে ব্রিগেডের উদ্দেশে রওনা দেন এলাকার মানুষ। গোসাবার সাতজেলিয়া, কুমিরমারি, বালি, ছোটমোল্লাখালি, বাসন্তীর ঝড়খালি, আমঝাড়া, চুনোখালি, চড়াবিদ্যা-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ বুধবার রাতেই রওনা ব্রিগেডের উদ্দেশে রওনা হন। ক্যানিংয়ে মহিলা কামরায় উঠে পড়তে দেখা যায় ব্রিগেডগামী পুরুষ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। |
মহিলা কামরাতে উঠে পড়েছে ব্রিগেডমুখী তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। ক্যানিংয়ে সামসুল হুদার তোলা ছবি। |
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ শতাংশ কর্মী আসেননি এ দিন। বিভিন্ন সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজের কর্মীদেরও একাংশ এ দিন ব্রিগেডে গিয়েছেন বলে বিভিন্ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “অনেকেই আগাম ছুটি নিয়েছিলেন।”
গোসাবার সাতজেলিয়ার সনাতন সর্দার, লক্ষ্মী মুর্মুরা জানান, মিটিংয়ে গেলে অঞ্চল অফিস থেকে ১০০ টাকা করে দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। তাই গ্রামের অন্যদের মতো আমরাও বেরিয়ে পড়লাম ব্রিগেডে যাব বলে।”
এ দিন ক্যানিংয়ের বিভিন্ন রুটের বাস তুলে নেওয়ায় সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা। অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করেও বাস নেই বলে অভিযোগ তাঁদের। ফলে অটো, ট্রেকার, ম্যাজিক গাড়িতে করে যেতে হয়েছে তাঁদের। ক্যানিংয়ের আইএনটিটিইউসির সভাপতি সুশীল সর্দার বলেন, “ব্রিগেডের জন্য কিছু বাস তুলে নেওয়া হলেও সব বাস তুলে নেওয়া হয়নি। যাত্রীদের অসুবিধার কথা ভেবে বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করেছে। তবে তুলনায় বাস অনেকটা কম ছিল।” |
সুনসান বনগাঁর একটি বাসস্ট্যান্ড। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক। |
ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপ মহকুমাতেও সকাল থেকে সরকারি বা বেসরকারি বাসের দেখা মেলেনি। বিভিন্ন মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিত্যযাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অনেকেই অটো বা মোটরভ্যানে বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছন। তবে অফিস কাছারি প্রায় ভর্তিই ছিল।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমা থেকে তিন হাজারের উপর বাস কলকাতায় গিয়েছিল। বারোশোরও বেশি ছোট গাড়ি মহকুমা থেকে যায়। নিত্যযাত্রীদের জন্য বাস ছিল না বললেই চলে। বসিরহাটের হরিশপুরে বাস না পেয়ে কলকাতায় যাওয়ার জন্য বিক্ষোভ দেখান বেশ কিছু তৃণমূল সমর্থক। বাস না পাওয়ায় ট্রেনেও প্রচুর ভিড় ছিল।
ব্যারাকপুরেও ৭৮ নম্বর রুটের বাস মাত্র ১২টি চলেছে। ৮১, ৮৫ সহ আরও বেশ কয়েকটি রুটের প্রায় অর্ধেক বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। সরকারি বাসও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও পরিবহণ দফতর সূত্রের দাবি, এ দিন অতিরিক্ত সরকারি বাস বিভিন্ন রুটে চালানো হয়েছে। তবে কলকাতায় যাতে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কোনও মালবাহী গাড়ি ঢুকতে না পারে, তার জন্য বিটি রোড ও কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের নানা জায়গায় আটকানো হয়। অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।
বনগাঁর তিনটি বাসস্ট্যান্ডেও প্রায় কোনও বাস ছিল না। অটো, ট্রেকার বা ম্যাজিক গাড়িতে করে বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। ব্রিগেডে যাওয়ার জন্য তৃণমূল সমর্থকদের একাংশ রেলপথ ব্যবহার করায় স্টেশনেও ভিড় ছিল। |