ঠিকা শ্রমিকের কাজ নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশে যাওয়া উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার এক কিশোর গত এক মাস ধরে নিখোঁজ। গোপাল দাস নামে ওই কিশোর প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশের সেকেন্দ্রাবাদের ঘটকেশরে গিয়েছিলেন বলে তাঁর পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। ছেলের খোঁজে পুলিশ প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি বাবা অশোকবাবুর। হাবরা থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই। অন্য দিকে, ঘটকেশর থানাও কোনও অভিযোগ নেয়নি বলে দাবি অশোকবাবুর। নিরুপায় হয়ে ছেলের খোঁজ পেতে অশোকবাবু এ বার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গোপাল দাস।
|
গোপালের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সামান্য গাছ কেনা-বেচার কাজ করেন অশোকবাবু। বড় ছেলে তাপস কাঠের কাজ করেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অভাবের কারণে সপ্তম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি গোপাল। রোজগারের আশায় তাই ভিন্ রাজ্যে যান। এলাকারই এক যুবক অন্ধ্রে তাঁকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অশোকবাবু জানান, ওখানে যাওয়ার পরে প্রথম দিকে সব ঠিকই ছিল। রোজই মোবাইল ফোনে তাঁদের সঙ্গে কথা হত ছেলের। কিন্তু মাস খানেক আগে থেকে ফোন আসা বন্ধ হয়ে যায়। অশোকবাবুর দাবি, “যারা ওর সঙ্গে থাকত, তাদের সঙ্গে কথা অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করলে তারা কিছু জানাতে চায়নি। পরে যে যুবক তাকে নিয়ে গিয়েছিল, সে ফোন করে জানায় ছেলেকে নাকি ভূতে ধরেছে। এর পর বড় ছেলে তাপস ও এক আত্মীয় সেখানে যায়।
তাপসবাবু বলেন, “সেকেন্দ্রাবাদে গিয়ে জানতে পারি, মোবাইল ফোন নিয়ে গোলমালের জেরে গোপালকে দু’জন যুবক রড দিয়ে পিটিয়েছে। তারাও এ রাজ্য থেকেই অন্ধ্রে গিয়েছিল। গোপালের সঙ্গেই থাকত। তার পর থেকেই গোপালের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।” তাঁর দাবি, ঘটকেশর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে সেখানে তাদের অভিযোগ নেওয়া হয়নি। তাঁরা আরও জানতে পারেন, যে ঠিকাদারের অধীনে গোপাল কাজ করতেন, তিনি ২ জানুয়ারি ঘটকেশর থানায় গোপালের নামে নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন। এর পর তাঁরা ফিরে আসেন। নিরুপায় হয়ে হাবরা থানায় অভিযোগ জানাতে যান অশোকবাবু। সেখান থেকে তাঁদের বলা হয়, ঘটনাস্থল অন্য রাজ্যে হওয়ায় এ ক্ষেত্রে তাঁদের কিছু করার নেই। অশোকবাবুর দাবি, এ রাজ্য থেকে যাওয়া আরও ১০-১২ জন যুবক গোপালের সঙ্গে থাকত। পুলিশ উদ্যোগী হয়ে তাদের জেরা করলে হয়তো গোপালের খোঁজ মিলতে পারত। কিন্তু সবাই তাঁর ছেলের ব্যাপারে উদাসীন। তিনি আরও বলেন, “ছেলের ব্যাপারে সাহায্য পাওয়ার জন্য দু’বার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি।”
এ প্রসঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর প্রতিক্রিয়া, “উনি আমার কাছে এলে রাজ্য সরকারের মাধ্যমে ওঁর ছেলেকে খোঁজার বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে। এর আগেও উত্তর ২৪ পরগনার ১০-১৫ জন ছেলে বাইরে কাজ করতে গিয়ে কিছু দিন নিখোঁজ ছিল। তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ওঁর ছেলেকেও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব আমরা।” বিধায়কের আশ্বাস বাবার কাছে তাঁর ছেলেকে ফেরাতে পারে কি না, এখন তারই অপেক্ষা। |