রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে গাড়ি লুঠপাটের ঘটনায় পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন গাড়ির যাত্রীরা। মঙ্গলবার গভীর রাতের ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার এক এএসআই ও দুই কনস্টেবলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। লুঠপাটের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “ওই ঘটনায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের গাফিলতি ধরা পড়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ওই তিন পুলিশকর্মী রাস্তা ছেড়ে চলে এসেছিলেন।”
মঙ্গলবার রাতে যে রাস্তায় লুঠপাট হয়েছে সেই রানাঘাট-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক এড়িয়ে চলতে বহু গাড়ি এই বাইপাস দিয়ে যাতায়াত করে। অথচ এমন একটি রাস্তায় যেভাবে লুঠপাট চলল তাতে উদ্বিগ্ন নিত্যযাত্রীরা। প্রশ্ন উঠছে, জেলার রাস্তায় রাতের যাত্রা আদৌ নিরাপদ তো? জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “জাতীয় সড়ক ও জেলার অন্য রাস্তাতেও পুলিশের গাড়ি প্রায় সারা রাত ধরে টহল দেয়। পাশাপাশি ওই রাস্তা গুলির উপর আমরা কড়া নজর রাখছি। যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।”
সারারাত ধরে পুলিশ যদি রাস্তাতে টহল দেয় তাহলে মঙ্গলবার রাতে অবাধে দুষ্কৃতীরা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে শববাহী গাড়ি ও কন্যাযাত্রীদের গাড়ি লুঠ করল কী ভাবে? জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, জালালখালির ঘটনার পরেই দুষ্কৃতীদের দলটিকে চিহ্নিত করা হয়। রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের কোনও গাফিলতি ছিল কী না সেটাও খতিয়ে দেখা হয়। তাতে তিন পুলিশকর্মীর গাফিলতি ধরাও পড়ে। তারপরেই ওই রাস্তা টহলের দায়িত্বে থাকা তিন পুলিশকর্মীকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করেন
পুলিশ সুপার।
জেলার অন্য পুলিশ কর্তারা মনে করছেন, জালালখালির ওই ঘটনায় ওই পুলিশকর্মীদের ‘সাসপেন্ড’ করে অন্য থানার পুলিশকর্মীদেরও বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে রাস্তা পাহারার ক্ষেত্রে কোনওরকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্যও পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই লুঠপাটের ঘটনায় স্থানীয় দুষ্কৃতীদের পাশাপাশি বাইরের দু’একজন দুষ্কৃতীও জড়িত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
তবে রাতের রাস্তায় পুলিশ যতই ‘কড়া নজর’ রাখুক না কেন, কিছুতেই যেন স্বস্তি পাচ্ছেন না নিত্যযাত্রী ও বাস মালিকরা। তাঁদের কথায়, শীতের রাতে কিংবা ভোরে এমনিতেই পথঘাট সুনসান থাকে। লোকজনও রাস্তায় থাকে কম। ঠাণ্ডা ও কুয়াশার সুযোগ নিয়ে এর আগেও রাত কিংবা ভোরের বাসে বেশ কয়েকবার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে জেলার বেশ কিছু জায়গায়। বছর কয়েক আগে করিমপুর এলাকায় শীতের ভোরে একটি বাসে ডাকাতি হয়েছিল।বাস মালিকদের দাবি মেনে তখন থেকে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রুটের করিমপুরগামী শেষ ও কৃষ্ণনগরগামী প্রথম বাসে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। রাতের বাসে ওই পুলিশকর্মীরা কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুরে যান আবার ভোরের বাসে কৃষ্ণনগরে ফিরে আসেন। কিন্তু জেলার বাকি রুট গুলির কী অবস্থা? জেলার বাস মালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত বলেন, “শুধু করিমপুরের রুটেই নয়, জেলার আরও একাধিক রুটেই রাতের দিকে বাস যায়। এই সব রুটের অনেক জায়গাই ফাঁকা।জনবসতি নেই।মঙ্গলবারের ঘটনার পর ওই সব রাস্তাগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি জানাব প্রশাসনের কাছে।”
নদিয়া জেলা নিত্য বাসযাত্রী সমিতির সভাপতি রাহুল মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুধু দূরপাল্লার বাসই নয়, জেলার বিভিন্ন রুটে রাতে যে বাস চলে তাতে অনেক যাত্রী থাকে। থাকেন মহিলা যাত্রীরাও। আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে এই সব রুটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়ে এসেছি। জালালখালির ঘটনার পর আমরাও উদ্বিগ্ন।” জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, “রাতে জেলার রাস্তাগুলিতে যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বাড়ানো যায় তার জন্য আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।” |