ব্রিগেড ম্যাজিকে বাস উধাও দুই মেদিনীপুরে
শঙ্কাই সত্যি হল! তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশে কর্মী-সমর্থকদের পৌঁছে দিতে দুই মেদিনীপুরের বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাস আগেই তুলে নেওয়ায় দুর্ভোগের আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই প্রকট হল সেই সমস্যা। বিস্তর ভোগান্তি হল নিত্যযাত্রী-সহ নানা কাজে বের হওয়া পথচারীদের। বাস নেই এই মওকায় ট্রেকার, ম্যাজিক ভ্যান, মেশিন ভ্যান, ট্যাক্সি চালকরা হাঁকলেন ইচ্ছে মতো ভাড়া। অতিরিক্ত যাত্রী তুলে বেশি ভাড়াতে পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগাতেই ভাড়া খাটলেন দিনভর।
মেদিনীপুর বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, “ব্রিগেডের সমাবেশ উপলক্ষে শহর-গ্রামীণ সব এলাকা থেকেই বেশ কিছু বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। বিশেষত, ঘাটাল, কেশপুর-সহ যে সব এলাকায় ট্রেনে যাওয়ার উপায় নেই সেই এলাকায় যত বাস চলে সবই প্রায় ব্রিগেডে চলে গিয়েছে।” তিনি মানছেন এর ফলে হাতে গোনা কয়েক’টি বাস চলাচল করেছে।
বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উপর দিয়ে প্রায় ৮০০ বাস চলাচল করে। তার মধ্যে এ দিন মাত্র খান পঞ্চাশেক বাস ছিল। ব্রিগেডের দিন যে জেলার পরিবহণ ব্যবস্থা যে ভেঙে পড়বে সে ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। ফলে শিক্ষক, অফিসের কর্মী-সহ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা আগে থেকেই তৈরিও ছিলেন। এ দিন সকাল থেকেই দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ স্কুল শিক্ষক মোটর সাইকেলে স্কুলে গিয়েছেন। যাঁদের দুরত্ব খুব বেশি তাঁরা অবশ্য অনেকেই ঝুঁকি নেননি। এমনই এক শিক্ষকের কথায়, “৪৫ কিলোমিটার দূরে চাকরি করি। বাস থাকবে না। কী ভাবে মোটর বাইকে যাব! গেলেও এই ঠাণ্ডায় ফিরব কী ভাবে?” তাই বাধ্য হয়েই ছুটি নিয়েছেন তিনি। অনেকে আবার গাড়িভাড়া করে ৭-৮ জন মিলে চলে গিয়েছেন স্কুলে।

এ দিনই মেদিনীপুর থেকে গড়বেতা যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন বৃদ্ধ সনাতন মাইতি। মেয়ের বাড়িতে দু’দিন কাটিয়েছেন। এখন চাষের সময়। বাড়ি ফেরার জন্য তাই মন কেমন করছে। বাস স্ট্যান্ডে কয়েক ঘণ্টা কাটানোর পরও বাস মেলেনি। হতাশ সনাতনবাবুর কথায়, “চার ঘণ্টা বসে থেকেও একটা বাস পেলাম না। এ বার মনে হচ্ছে, মেয়ের বাড়িতেই ফিরে যেতে হবে।”
অন্য দিকে, এ দিন সকাল থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের সবচেয়ে জনবহুল হলদিয়া-মেচেদা, হলদিয়া-মেদিনীপুর, দিঘা-হাওড়া রুটের বেসরকারি বাস ছিল না বললেই চলে। যে গুটি কয়েক বাস চলেছে তাতে ছিল বাদুড় ঝোলা ভিড়। এ দিন এক বছরের অসুস্থ শিশুকে নিয়ে তমলুকে চিকিৎসকের কাছে এসেছিলেন শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কাঁকটিয়া বাজারের গৃহবধূ জ্যোৎস্না আদক। বাড়ি ফেরার জন্য তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন দীর্ঘক্ষণ। বাস না আসায় ম্যাজিক ভ্যান, ট্যাক্সিতে উঠতে গিয়ে দেখেন যে দূরত্ব বাসে যেতে ৫ টাকা লাগে, সেখানে যেতে ওই গাড়িগুলি চাইছে ২০ টাকা। জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “বাড়তি কড়ি গুনেও গাড়িগুলিতে কোলের শিশুকে নিয়ে গাড়িগুলিতে ওঠা দায়!” কলকাতায় মিটিং হলেই বাস তুলে নেওয়ার এই অভ্যাস আগের সরকারের আমলেও দেখেছি। “অন্তত এই বিষয়ে এখনও পরিবর্তন আসেনি”বক্তব্য প্রৌঢ়া প্রতিমা জানার। তমলুক জেলা হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি। প্রতিমাদেবী বলেন, “আমাদের দুর্ভোগের খবর আর কে রাখে!”
বস্তুত, হলদিয়া থেকে মেচেদা-মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম, দিঘা থেকে মেচেদা-পাঁশকুড়া বা হাওড়া, কলকাতা প্রায় সব দূরপাল্লার বাসের যাত্রীরাই চরম সমস্যায় পড়েছেন। বাসের ঝক্কি এড়াতে অনেকেই হাতে সময় নিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করেছেন।
অধিকাংশ রুটের যাত্রীবাস তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল পরিচালিত নন্দকুমার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকুমার বেরাও। তিনি বলেন, “জেলার বিভিন্ন রুটে সব মিলিয়ে দিনে গড়ে ৭০০ যাত্রীবাস চলে। এ দিন প্রায় ৫০০টি বাস ব্রিগেডের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছিল।” জেলা বাস ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সামসের আরেফিনও মানছেন বাস কম থাকায় সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.