সতেরো বছর আগে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন হুগলির ভদ্রেশ্বর থানার তত্কালীন অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) ভোলানাথ ভাদুড়ি। সেই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্যের পুলিশ এবং প্রশাসনিক মহল। এত বছর ধরে মামলা চলার পরে দুই দুষ্কৃতীকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। উপযুক্ত স্বাক্ষ্যপ্রমাণ না মেলায় সন্দেহের অবকাশে আদালত তাদের দুই সঙ্গীকে মুক্তি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার এই রায় দেন হুগলির জেলা ও দায়রা বিচারক সুব্রত মিত্র।
ভোলানাথ।
|
ঘটনার তদন্তে নেমে সিআইডি মোট ৬ জন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছিল। মামলা চলাকালীন তাদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়। মামলার সরকারি আইনজীবী বিদ্যুত্ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, মোট ৮৩ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। দোষী সাব্যস্ত হওয়া দুই আসামীর নাম শেখ নাজির হোসেন ওরফে দীপুয়া এবং মনসারাম গুপ্ত। আজ, শুক্রবার তাদের সাজা ঘোষণা করবে আদালত। দীপুয়া ছিল ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত।
ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন?
দিনটা ছিল ১৯৯৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। পুলিশের নথি অনুযায়ী, সে দিন রাত সওয়া ৯টা নাগাদ ভদ্রেশ্বর থানায় টেলিফোনে খবর আসে, বাঁশবাগান এলাকায় তুমুল বোমাবাজি চলছে। ওসি ভোলানাথবাবুর নির্দেশে পুলিশ সে দিকে রওনা হয়। ভোলানাথবাবু নিজে থানার বাইরে ছিলেন। তিনি মাঝপথে সহকর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন। যাওয়ার পথেই তাঁরা জানতে পারেন, দাগী দুষ্কৃতী দীপুয়া সাগরেদদের নিয়ে একটি বাড়িতে তোলাবাজি করছে। পুলিশের গাড়ি এ বার সে দিকে ঘুরে যায়। রাস্তাতেই পুলিশ খবর পায়, ওই বাড়িতে হামলা চালানোর পরে দীপুয়া-সহ ছয় দুষ্কৃতী একটি গাড়িতে চেপে বৈদ্যবাটি আরবিএস রোডের দিকে পালাচ্ছে। পুলিশ গাড়িটিকে ধাওয়া করে। দ্বারিকজঙ্গল রোডে জিটি রোডের মোড়ে পুলিশের জিপ দুষ্কৃতীদের গাড়ির কাছাকাছি কাছাকাছি চলে আসে। অভিযোগ, তখনই দুষ্কৃতীরা বোমা-গুলি ছুড়তে শুরু করে। ওসি-সহ ৩ পুলিশকর্মীর গুলি লাগে। গুরুতর জখম অবস্থায় ভোলানাথবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয় ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি ইএসআই হাসপাতালে। সেখানে ওই পুলিশ অফিসারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিত্সকেরা।
|
আদালতে দীপুয়া।—নিজস্ব চিত্র। |
ভোলানাথবাবুর সহকর্মী, সাব ইনস্পেক্টর শুভ্রশঙ্কর পাহাড়ি শ্রীরামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই ওসিকে খুন, অন্যদের খুনের চেষ্টা, অস্ত্র আইন-সহ নানা ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। দীপুয়া, মনসারাম ছাড়াও অমর চৌধুরী, অশোক সাউ, ভাকালুয়া এবং গণেশ দাস নামে ওই ছয় সমাজবিরোধী গ্রেফতার হয়। প্রত্যেকেরই বাড়ি হুগলিতে। দুষ্কৃতীদের ব্যবহৃত সাদা রঙের গাড়িটিও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। পরবর্তীকালে ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে জেলা পুলিশের হাত থেকে ঘটনার তদন্তভার সিআইডি-র হাতে তুলে দেয় তত্কালীন বাম সরকার। প্রথমে শ্রীরামপুর আদালতে মামলা চলে। পরে তা জেলা আদালতে স্থানান্তরিত হয়। মামলা চলাকালীন ভাকালুয়া এবং গণেশের মৃত্যু হয়। দীপুয়া এবং মনসারামকে দোষী সাব্যস্ত করার পাশাপাশি এ দিন বিচারক সুব্রত মিত্র আরও জানান, স্বাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে অশোক এবং অমরকে মুক্তি দেওয়া হল।
বছর চল্লিশের ভোলানাথবাবু পুলিশ মহলে সত্ এবং দক্ষ অফিসার হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর দাপটে দুষ্কৃতীদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। |