ভোগান্তির আশঙ্কাই সত্যি হল।
ব্রিগেড সমাবেশের জন্য শাসক দল যথেচ্ছ বাস তুলে নেওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হয়রান হতে হল হাওড়া ও হুগলি জেলার বহু সাধারণ মানুষকে। গন্তব্যে পৌঁছতে কাউকে বাড়তি খরচ করতে হল। কেউ পৌঁছলেন নির্দিষ্ট সময়েরও বহু পরে।
এ দিন হাওড়ার বাগনান, আমতা, ডোমজুড় প্রভৃতি এলাকায় প্রায় সব রুট থেকেই বেসরকারি বাস এবং যাত্রী পরিবহণের ট্রেকার ও ছোট গাড়ি তুলে নেওয়া হয়েছিল। নিত্যযাত্রীদের ভরসা বলতে ছিল অটোরিকশা। তাতেও বাড়তি যাত্রী তোলা হয়। বাগনান, আমতা বা উদয়নারায়ণপুরের ভবানীপুর প্রভৃতি জায়গা থেকে ধর্মতলা রুটে সরকারি বাসের সঙ্গে বেসরকারি বাসও চলাচল করে। বেসরকারি বাস না থাকায় যাত্রীদের চাপ পড়ে সরকারি বাসের উপরে। এ দিন ভিড়ের চাপে বহু নিত্যযাত্রীই সরকারি বাসে উঠতেই পারেননি। |
ব্রিগেডে যাওয়ার পথে গাড়ি থামিয়ে ভুরিভোজ। ডানকুনিতে দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি। |
সকালে উলুবেড়িয়ার নিমদিঘিতে মুম্বই রোডের ধারে বাগনান-ধর্মতলা রুটের সিটিসি বাস ধরার জন্য বহু নিত্যযাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।। কিন্তু বাগনান থেকেই বাসগুলি এতটাই ভিড় নিয়ে আসে যে যাত্রীরা হাত দেখালেও সেগুলি নিমদিঘিতে দাঁড়ায়নি। একই ভাবে গাদিয়াড়া-ধর্মতলা রুটের সিএসটিসি বাসগুলিও শ্যামপুর থেকেই যাত্রী বোঝাই হয়ে আসে। ফলে, মাঝখানের স্টপগুলিতে সেগুলি দাঁড়ায়নি। একই অবস্থা হয় আমতা-ধর্মতলা, মুন্সিরহাট-হাওড়া, ডোমজুড়-ধর্মতলা প্রভৃতি রুটের সিটিসি বাসগুলিতেও। সকাল দশটা পর্যন্ত ভিড় ঠাসা ছিল হাওড়া-খড়্গপুর রুটের লোকাল ট্রেনগুলিতেও। বাগনান, উলুবেড়িয়া, বাউড়িয়া-সহ বিভিন্ন স্টেশনে সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়া তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে নিত্যযাত্রীদের ট্রেনের কামরায় পা রাখতে কালঘাম ছুটে যায়। |
সুনসান উলুবেড়িয়া পুরসভা। বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা। |
হুগলিতেও সকাল থেকেই অজস্র বাস তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বোঝাই হয়ে ব্রিগেডের পথে রওনা হয়ে যায়। শহরাঞ্চলে ঘুরপথে নিত্যযাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। এখানেও বাস কার্যত না থাকায় ভরসা বলতে ছিল মূলত অটোরিকশা। শ্রীরামপুরে আদালত সংলগ্ন জায়গায় অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড এ দিন ছিল পুরো ফাঁকা। কাজ না থাকায় বাসস্ট্যান্ডগুলির অস্থায়ী অফিসও এ দিন তালাবন্ধ ছিল। সব জায়গাতেই ট্রেনে বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়েছে মানুষকে। তারকেশ্বর থেকে বহু রুটের বাস ছাড়ে। এ দিন সেখানেও বাসের দেখা মেলেনি। শিয়াখালা, মশাট, হরিপাল, পাণ্ডুয়া, বলাগড়, চণ্ডীতলা সর্বত্রই বাসের অভাবে ভোগান্তি হয় সাধারণ মানুষের। সকালে ট্রেনে পা রাখার জায়গা ছিল না। বহু যাত্রী ভিড়ের চাপে ট্রেনে উঠতে পারেননি। অনেকে কাজে বেরিয়েও বাড়ি ফিরে যান। বাস না থাকায় অনেকটা বন্ধের চেহারা নেয় আরামবাগ মহকুমা। সরকারি অফিসে হাজিরা ছিল নেহাতই কম।
তৃণমূলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং দু’দিন আগে সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা ভেবে মানুষের কাছে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। সেই সুরেই হুগলি জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব এ দিন বলেন, “কোথাও কোথাও হয়তো মানুষের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এ জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।” |