|
|
|
|
ন্যায়-ঘণ্টা বসাচ্ছেন বিহারের আইজি |
স্বপন সরকার • পটনা
৩০ জানুয়ারি |
নাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের পথে হাঁটলেন বিহারের এক পুলিশকর্তা।
থানায় কারও নালিশ শোনা না-হলে, ‘ন্যায় বিচারের ঘণ্টা’ বাজিয়ে আইপিএস পর্যায়ের কোনও অফিসারের কাছে তাঁদের পৌঁছনোর ব্যবস্থা করলেন দ্বারভাঙা জোনের আইজি অরবিন্দ পাণ্ডে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই জোনের ১০টি জেলার পুলিশ সুপার, ডিআইজি-কে তাঁদের বাড়ির সামনে বিশেষ ওই ঘণ্টা লাগাতে নির্দেশ দিয়েছেন আইজি। তারই নাম দেওয়া হয়েছে ‘ন্যায় বিচারের ঘণ্টা’।
অরবিন্দের বক্তব্য, অনেক সময় থানা কারও-কারও কথা শুনতে চায়নি বলে অভিযোগ ওঠে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ঘটনাও ঘটে। সে সব ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ কোনও পুলিশকর্তার কাছে গিয়ে নালিশ জানানোর সুযোগ পান না বেশিরভাগ মানুষই।
তারই সুরাহা করতে জাহাঙ্গিরের ‘শরণাপন্ন’ বিহারের ওই আইজি।
অরবিন্দ জানান, মুঘল সম্রাট সরাসরি প্রজাদের অভিযোগ শুনতে ঘণ্টা বসানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। সেটির সাহায্যে সম্রাটের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেত। তিনি বলেন, “পুলিশের পরিষেবা ২৪ ঘণ্টার। সেটাই আরও ভালোভাবে কার্যকর করতে চাইছি।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বারভাঙা জোনের ১০টি জেলার আইপিএস পর্যায়ের অফিসারদের বাড়ির বাইরে ওই ঘণ্টা বসানো থাকবে। সেটির আওয়াজ শুনে অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলবেন পুলিশকর্তাদের বাড়িতে মোতায়েন কোনও অফিসার। পরে, সে সব অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আইপিএস-এর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। জরুরি ক্ষেত্রে থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে পদক্ষেপ করার নির্দেশও দিতে পারবেন ‘ন্যায় বিচারের ঘণ্টা’ শুনতে মোতায়েন অফিসাররা। ঘটনার কথা জানানো হবে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি-কেও। আইজি বলেন, “সপ্তাহে একদিন জনতার সঙ্গে কথা বললে, অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের সমস্যা মেটে না। তা-ই ওই ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছি।”
২০০৮ সালে মুজফফ্রপুরের ডিআইজি থাকাকালীনও এই ব্যবস্থা চালু করেছিলেন অরবিন্দ। তিনি জানান, ওই সময় এই ব্যবস্থা ন্যায় পেয়েছিলেন অনেকেই। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া এক দম্পতি সংক্রান্ত বিষয়। পারু এলাকার ওই দম্পতি তাঁদের তিন বছরের সন্তান কার সঙ্গে থাকবে তার সমাধান করতে থানায় গিয়েছিলেন। কথাবার্তার পর ওসি-র সামনেই বাচ্চাটিকে প্রাক্তন স্ত্রী’র হাতে তুলে দেয় তার বাবা। এরপরই তিনি শ্বশুরের বিরুদ্ধে শিশু অপহরণের অভিযোগ লেখান। গ্রেফতার হন সেই বৃদ্ধ। তিনদিন তাঁর খোঁজ না-পেয়ে ‘ন্যায় বিচারের ঘণ্টা’ বাজিয়ে তৎকালীন ডিআইজি অরবিন্দের সঙ্গে দেখা করেন বৃদ্ধের পরিজনরা। শেষে তাঁর খোঁজ মেলে লকআপে। ডিআইজি-র হস্তক্ষেপে মুক্তি পান তিনি। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে।
আইজি বলেন, “এমন অনেক ঘটনার সমাধান হয়েছিল। সিআইডিতে চলে যাওয়ার পর সেই সুযোগ পাইনি। ফের ওই ব্যবস্থা শুরু করতে চাইছি।” তাঁর কথায়, “আমারই নজরদারিতে থাকবে ওই ব্যবস্থা। ১০টি জেলায় দ্রুত তা চালু হবে।”
আইজি-র বাড়ির সামনে অবশ্য এখনই বাজছে ন্যায়ের সেই ঘণ্টা। |
|
|
|
|
|