|
|
|
|
গণহত্যার প্রতিবাদ |
অরুণাচলের বিরুদ্ধে আর্থিক অবরোধের ডাক |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি
৩০ জানুয়ারি |
অরুণাচলের দিক থেকে আসা দুষ্কৃতীদের হানায় অসমের ১০ গ্রামবাসী হত্যার প্রতিবাদে অরুণাচলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের ডাক দিল গোর্খা ছাত্র সংগঠন-সহ অসমের বেশ কিছু গণসংগঠন। বিহালি বনাঞ্চলের চাউলধোয়া গ্রামে গত কাল বিকেল থেকে সন্ধ্যে অবধি হানাদারি চলে। পুলিশ জানিয়েছে, ১০টি দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী এখনও নিখোঁজ। হানাদাররা মূলত একনলা ও দোনলা বন্দুক থেকে গুলি চালিয়েছিল। কয়েকটি .২২ বোরের রাইফেলের কার্তুজও মিলেছে।
বিহালি বনাঞ্চলের ওই অংশে সীমা-বিতর্ক থাকায়, সিপিআই (এমএল)-এর উদ্যোগে আগ্রাসন বিরোধী বেশ কয়েকটি বন-শিবির গড়া হয়েছিল। এমনই একটি বন-শিবির ঘিরে আক্রমণ চালানো হয়। গুলিতে সিপিআই (এমএল) সদস্য-সহ ১৫ জন গ্রামবাসী জখম হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই সাংবাদিক-বনরক্ষীরা বহু জখম ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আজ নিহত ১০ জনের মধ্যে খড়্গবাহাদুর ছেত্রী, হিমাল সুব্বা, মনবাহাদুর ছেত্রী, প্রকাশ সুব্বা ও ওম বাহাদুর সুব্বার দেহ শনাক্ত করে পরিবার।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গত কাল বরগং থানা এলাকার চাউলধোয়া এলাকায় যখন শতাধিক হানাদার গুলি চালাচ্ছে তখন বরগং থানার পুলিশ প্রাণভয়ে ও পর্যাপ্ত জওয়ানের অভাবে গ্রামবাসীদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। হত্যালীলার খবর অন্তত দু’ঘণ্টা পরে পুলিশ সদরে পৌঁছয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ঘটনার তিন ঘণ্টা পরে। গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা দিতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ হওয়ায় আজ সকাল থেকে হাজার-হাজার মানুষ বরগং ও জনাইতে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করে। অরুণাচলের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করা হয়। পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। লাঠিও চলে। অগপ, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির নেতারাও ঘটনাস্থলে যান।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের নির্দেশে স্বরাষ্ট্র দফতরের পরিষদীয় সচিব এটোয়া মুণ্ডা আজ ঘটনাস্থলে আসেন। খোদ গগৈ তেজপুরে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাজ্যের মুখ্য সচিব, ডিজি, এডিজি (এসবি) ও এসপিকে অবিলম্বে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ও গ্রামবাসীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দেন তিনি। তবে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, ওই এলাকায় নতুন করে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই কয়েক কোম্পানি আধা সেনা কার্বি আংলঙে মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, এনডিএফবি (সংবিজিৎ) ঘটনার সুযোগ নিয়ে থাকতে পারে। একই সঙ্গে পুলিশের দাবি, ওই এলাকায় নকশালরা অসমের গ্রামবাসীদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘাঁটি মজবুত করছিল।
অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি আজ সন্ধ্যায় তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরে এলাকাটিকে অরুণাচলের পাপুম পারে জেলার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে জানিয়ে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, “অসম সীমানার তারাসো এলাকায় যা ঘটেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। দুই পাশের বাসিন্দাদের শান্তি বজায় রাখতে অনুরোধ করছি। সীমানা সমস্যা নিয়ে মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র কমিশনার ও ডিজির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।” তরুণ গগৈ জানান, তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রী টংকবাহাদুর রাই ও সীমানা বিষয়ক মন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদকে সরেজমিনে পরিস্থিতি সামলাবার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই এলাকায় একটি সীমানা চৌকি গড়া হচ্ছে। সেনাবাহিনীও সীমানায় টহল দেবে। পুলিশের হাতে আধুনিক অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|