|
|
|
|
নীতীশকে প্রতিহিংসাপরায়ণ বলেও রেহাই শিবানন্দের |
স্বপন সরকার • পটনা
৩০ জানুয়ারি |
জেডিইউ নেতা শিবানন্দ তিওয়ারির রাজ্যসভার প্রার্থীপদ বাতিল করার পিছনে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ মনোভাবই কাজ করেছে বলে মনে করছেন দলের একাংশ।
সেই মঞ্চে দলের প্রধান নীতীশ কুমারের উপস্থিতিতে দলের সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই বর্ষীয়ান নেতা মঞ্চে আসীন নীতীশকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, নরেন্দ্র মোদীকে শুধু গালাগাল দিলে হবে না। তাঁর শক্তিকে স্বীকার করে নিয়েই লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে। মোদীর ‘প্রশংসা’ করা হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে সে সময় দলীয় সদস্যদের একাংশ তাঁর বক্তৃতা থামিয়েও দেন। নীতীশ সে সময় কিছু বলেননি।
তবে শিবানন্দ ব্যাখ্যা দেন, তিনি দলের প্রবীণ নেতা। দলীয় বৈঠকে দলকে শক্তিশালী করার পরামর্শই তিনি দিয়েছিলেন। পরবর্তী ক্ষেত্রে মনে করা হয়েছিল, নীতীশও দলীয় নেতার মনোভাব বুঝেছেন। কিন্তু প্রায় মাস দুয়েক পরে রাজ্যসভা সাংসদ শিবানন্দকে পুনরায় মনোনয়ন না দিয়ে তাঁকে লোকসভার ময়দানে ঠেলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে দলের একাংশের ধারণা, এটা তারই প্রতিফলন।
উল্লেখ্য, দলীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে নীতীশ বলেছিলেন, “যাঁরা মনে করছেন দলের সাংগঠনিক শক্তি কম তাঁরা এগিয়ে এসে লোকসভায় লড়াই করে দলের সংগঠনকে মজবুত করুন।” দলের এক নেতার কথায়, “নীতীশ যে কিছুই ভোলেন না, সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষা করেন, এই ঘটনা তাই প্রমাণ করে।”
গত কাল সন্ধ্যায় শিবানন্দ নীতীশকে একটি চিঠি লিখে এই ‘প্রতিহিংসাপরায়ণতা’-র বিষয়টাই উস্কে দেন। চিঠির কপি পাঠান দলের রাজ্য সভাপতি বশিষ্ঠ নারায়ণ সিংহের কাছেও। কেন তাঁকে রাজ্যসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিবানন্দ তিওয়ারি তাঁর চিঠিতে বলেন, “আমাকে হারিয়ে দেওয়ার জন্যই লোকসভায় প্রার্থী করতে চাইছেন নীতীশ কুমার।” আজ দলের বশিষ্ঠনারায়ণ সিংহ সাংবাদিকদের বলেন, “শিবানন্দের এই রকম চিঠি দেওয়া ঠিক হয়নি।” আজ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে শিবানন্দের চিঠি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।” তবে শিবানন্দ তিওয়ারি যাতে দলে থেকে যান তা নিয়ে নীতীশ বলেছেন, “উনি দলে থাকলেই ভাল।” বশিষ্ঠনারায়ণ বলেন, “এটা দলের প্রতি শিবানন্দের ক্ষোভ। অনেক সময় দলে এই ধরনের ক্ষোভ বরদাস্ত করতে হয়। আসা করি দ্বিতীয়বার এমন কিছু শিবানন্দজি করবেন না।”
লোকসভায় তাঁকে দাঁড় করিয়ে হারানোই নীতীশের লক্ষ্য বলে শিবানন্দ যে অভিযোগ এনেছেন তার জবাবে রাজ্য সভাপতি বলেন, “এটা নীতীশ কুমারের প্রস্তাব নয়। আমি নিজে দলীয় বৈঠকে শিবানন্দকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ীই দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” রাজ্য সভাপতির এই যুক্তি শিবানন্দ তিওয়ারি মানতে চান না। তিনি আজ বলেছেন, “বশিষ্ঠ নারায়ণ ঠিক বলছেন না। বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসায় তিনি নীতীশকে আড়াল করতে চাইছেন।” শিবানন্দের প্রশ্ন, “রাজ্য সভাপতির এত সাহস হল কী ভাবে? নীতীশ কুমারের সামনে তিনি এই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। এটা নীতীশেরই সিদ্ধান্ত।”
রাজ্য সভাপতি অবশ্য বলছেন, “শিবানন্দ তিওয়ারি তো আগেও বক্সার থেকে নির্বাচনে লড়েছেন। এখন কেন আপত্তি করছেন?” শিবানন্দর উত্তর, “লোকসভা ভোটের জন্য ছ’মাসের প্রস্তুতি লাগে।” তবে নীতীশকে ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ বলার পরেও জেডিইউ নেতৃত্ব শিবানন্দের প্রতি নরম মনোভাব নেওয়ায় মনে করা হচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনের মুখে নীতীশ এই বর্ষীয়ান নেতাকে দল থেকে বহিস্কার করবে না। তাঁরা নিজেরা দল ছেড়ে গেলে যাবেন, এমনটাই চাইছেন নেতৃত্ব। এরই পাশাপাশি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থসচিব তথা জেডিইউয়ের রাজ্যসভার
সদস্য এন কে সিংহ দলকে আজ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি লোকসভায় লড়বেন না। তবে দলও ছাড়ছেন না। তৃতীয় সদস্য সাবির আলি গত কাল নীতীশকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সিওয়ান থেকেই নির্বাচন লড়তে চান। |
|
|
|
|
|