|
|
|
|
অরবিন্দকে পাল্টা চাপ, কংগ্রেসের অস্ত্র বাটলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৩০ জানুয়ারি |
দিল্লির শিখ-বিরোধী দাঙ্গা নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত কাল কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আজ পাল্টা প্যাঁচে শিখ-বিরোধী দাঙ্গার ধাঁচেই বাটলা হাউস সংঘর্ষের নতুন তদন্তের দাবি তুললেন দিল্লির কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মহম্মদ খান। এবং তা করলেন রীতিমতো নাটকীয় ভাবে।
বিনা আমন্ত্রণে কেজরিওয়ালের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত হয়ে, বাটলা হাউস সংঘর্ষের তদন্তের দাবি তুলে শোরগোল ফেলে দেন তিনি। যে কারণে শেষ পর্যন্ত কার্যত ভেস্তে যায় কেজরিওয়ালের সাংবাদিক বৈঠক। তুমুল হইচইয়ের মধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই উঠে যান মুখ্যমন্ত্রী।
আগে থেকেই ঠিক ছিল, সরকারের এক মাসের খতিয়ান রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে জনগণের সামনে তুলে ধরবেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। সেই মতো সরকারে এসেই বিদ্যুতের দাম, জল, মহিলা সুরক্ষায় বিশেষ কমিটি নিয়ে প্রতিশ্রুতি পালনের ফিরিস্তি দেন তিনি। পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় বিশেষ তদন্ত ট্রাইব্যুনাল (সিট) গড়া হয়েছে। কিন্তু বাটলা হাউস সংঘর্ষের ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব নয়। কারণ, ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় এসে গিয়েছে। কেজরিওয়াল এ কথা বলতেই হঠাৎ ছন্দপতন হয়। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মহম্মদ খান কেজরিওয়ালের দ্বিচারিতা প্রশ্নে সরব হয়ে ওঠেন। তিনি দাবি করেন, কেজরিওয়াল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে শিখ-বিরোধী দাঙ্গার মতোই বাটলা হাউস সংঘর্ষের তদন্ত করবেন। এখন তিনি বলছেন তা সম্ভব নয়। দিল্লির সংখ্যালঘু সমাজকে ধোঁকা দিচ্ছে আম আদমি পার্টি (আপ)।
আপের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সন্ত্রাসবাদী কাণ্ডে জড়িত সংখ্যালঘু যুবকদের দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল। আসিফের দাবি, শুধু তাই নয়, শিখ-বিরোধী দাঙ্গার মতোই বাটলা সংঘর্ষ নিয়েও তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছিল তারা। যদিও আজ আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ জানান, “দল এ ধরনের কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি।” সেই যুক্তি অবশ্য মানতে চাননি আসিফ। উল্টে সরকার দ্বিচারিতা করছে এই অভিযোগ তুলে আসিফ বলেন, “আগামী দিনে কেজরিওয়াল সরকারের মুখোশ খুলে দিতে তৎপর থাকব আমি। প্রয়োজনে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের আদেশ অমান্য করে আপ সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেব।” দিল্লি সরকারে আপের সমর্থক কংগ্রেস।
১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গা নিয়ে এখন কিছুটা চাপে রয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কারণ, সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে রাহুল গাঁধী ওই দাঙ্গা নিয়ে প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব দিতে পারেননি বলে মনে করেন অনেকে। বরং কিছু কংগ্রেস নেতার জড়িত থাকার সম্ভাবনা মেনে নিয়েছিলেন তিনি। নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি নিয়ে মাঝে মধ্যেই বিপাকে পড়া বিজেপি-র ধারণা, গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার পাশাপাশি শিখ-বিরোধী দাঙ্গাকেও প্রাসঙ্গিক করে দিয়েছেন রাহুল। শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় রাজীব গাঁধীর ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিজেপি-র জোটশরিক অকালি দল।
এই পরিস্থিতিতে কেজরিওয়ালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গার তদন্তে সিট গঠনের প্রস্তাবে কার্যত হাতে চাঁদ পেয়ে যায় অকালি দলের দিল্লি শাখা ও শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি। আজ দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নজীব
জঙ্গ বলেন, “এই বিষয়ে সরকারের প্রস্তাব পেয়েছি। সরকারের কাছে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে।” এ দিনই কিছু শিখ যুবক কংগ্রেস সদর দফতরের সামনে শিখ-বিরোধী দাঙ্গার দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভও দেখান।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ১৯৮৪-র দাঙ্গা নিয়ে চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাটলা হাউস নিয়ে পাল্টা চাপ দিচ্ছে কংগ্রেস। প্রকাশ্যে আসিফের বক্তব্যকে ব্যক্তিগত মত বলে দায় এড়াচ্ছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু বিষয়টি দলীয় পরিকল্পনারই অঙ্গ।
কংগ্রেস নেতৃত্ব জানেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যা-ই থাক, এখন বাটলা হাউস নিয়ে নতুন ভাবে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারবে না কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন দিল্লি সরকার। ২০০৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির বাটলা হাউসে ওই সংঘর্ষে দুই জঙ্গি নিহত হয়। পরে ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগ উঠলেও সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে তা নিয়ে ফের তদন্তের আদেশ দিলে বিরোধীরা সরকারের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দিল্লিবাসীরও এই পদক্ষেপ পছন্দ হবে না বলে ধারণা কংগ্রেসের। তা-ই পাল্টা চাপে বাটলাই অস্ত্র তাদের। |
|
|
|
|
|