পেঁয়াজ চাষের জন্য তৈরি হচ্ছে বীজতলা। কিন্তু চাষের জন্য জল নেই!
কৃষি দফতর বীরভূমের রাজনগরের সরকারি ‘সিসাল’ কৃষি খামারের অব্যবহৃত ৩৬০ বিঘা জমিতে রবি মরসুমে পেঁয়াজ চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার জন্য বীজতলা তৈরি হচ্ছে জোরকদমে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জলের অভাবে পেঁয়াজ রোয়ার কাজ দুরঅস্ৎ, বীজতলা বাঁচাতেই কালঘাম ছুটছে কৃষি-শ্রমিকদের। কেননা, খামারে জলের ব্যবস্থা নেই। শ্রমিকেরা দূর থেকে জল এনে বীজতলায় দিচ্ছেন। কিন্তু এ ভাবে চাষ বাঁচানো যাবে না বলেই তাঁদের আশঙ্কা। |
ফার্মের পেঁয়াজের এই বীজতলাই শুকিয়ে যাচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র। |
রবি মরসুমেও বীরভূমে পেঁয়াজ চাষে জোর দিচ্ছে জেলা কৃষি দফতর। কিন্তু তার জন্য যে খামারে জলের ব্যবস্থাই নেই, সেই খামারের জমি কেন বাছা হল তা নিয়ে শ্রমিকেরা যেমন প্রশ্ন তুলছেন, তেমনই পরিকল্পনাতে গলদ রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি দফতরের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, পেঁয়াজের বীজতলা তৈরিতে সময় লাগে ছ’সপ্তাহ। নভেম্বর-ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই বীজতলা তৈরির আদর্শ সময়। রোয়ার কাজ সারা হলে আরও ১২০ দিন পরে তা থেকে ফলন মেলে। অর্থাৎ. ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির মধ্যে পেঁয়াজ রোয়ার কাজ শেষ করতে পারলে ভাল। কিন্তু সিসাল খামারে এখনও সেই কাজ শুরুই হয়নি। খানিকটা তাড়াহুড়ো করেই এখানে পেঁয়াজ চাষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন।
খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহ-কৃষি অধিকর্তা দেবাশিস ঘোষ বলেন, “এখনই পেঁয়াজ রোয়া হলে ভাল হত। তবে, চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল না পেলে তা ধাক্কা খাবে সন্দেহ নেই। এখনও জলের ব্যবস্থা হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রদীপ মণ্ডল। তিনি বলেন, “ওই খামারে একটি কুপ খনন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। ওখানে একটি জল বিভাজিকা প্রকল্পও বাস্তবায়িত হওয়ার কথা। তা হলে সমস্যা মিটবে।” কিন্তু তা কবে হবে সে ব্যাপারে প্রদীপবাবু নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানাতে পারেননি। বেশি সময় লাগলে বীজতলা নষ্ট হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রদীপবাবুর অভিমত, “ওই খামারে ধাপে ধাপে বীজতলা তৈরি হচ্ছে। ওখানে জলের সমস্যা থাকায় পরিণত বীজতলা থেকে পেঁয়াজ-চারা তুলে আমরা শ্রীনিকেতন এবং সাঁইথিয়ার খামারে পাঠাব। জলের সমস্যা মিটলে সিসালেই পেঁয়াজ চাষ হবে।” সিসালে পেঁয়াজ চাষে সহযোগিতা করছে জেলা উদ্যানপালন দফতর। দফতরের জেলা আধিকারিক সুবিমল মণ্ডল জানিয়েছেন, সিসালে যে অব্যবহৃত জমি রয়েছে, যেখানে পেঁয়াজ-সহ অন্যান্য চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ওই খামারের জমি বাছা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসেও পেঁয়াজ চাষ করা যেতে পারে।
খরিফ মরসুমের পরে এ বার রবি মরসুমেও বীরভূমে পেঁয়াজ চাষে জোর দিচ্ছে কৃষি দফতর। দফতর সূত্রে খবর, দুবরাজপুর, সিউড়ি-২, ইলামবাজারের মতো সাতটি ব্লকের ৪০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করা হচ্ছে। তা ছাড়া, রয়েছে সিসালের জমি। প্রশাসন সূত্রের খবর, সিসাল খামারে আগে মূলত জাহাজ বা নৌকার নোঙর করার দড়ি তৈরি হত। কিন্তু প্লাস্টিকের দড়ি বাজারে এসে যাওয়ার পর উপযোগিতা হারায় সিসাল দড়ি। ২০০৪ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় দড়ি উৎপাদনের কাজ। সমস্যায় পড়েন খামারের ৫৮ জন শ্রমিক। তাঁদেরই এ বার পেঁয়াজ চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে কৃষি দফতর জানিয়েছে। |