লাভপুর গণনির্যাতন-কাণ্ডে অভিযুক্ত তেরো জনের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হল। আদালতে গোপন জবানবন্দি দিলেন তরুণীর পুরুষ-সঙ্গীর দাদা। বুধবার বীরভূমের এসপি অলোক রাজোরিয়া বলেন, “তদন্ত ঠিক পথে এগোচ্ছে।”
এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ কড়া নিরাপত্তায় একটি বড় বাসে করে ধৃতদের বোলপুর সংশোধনাগার থেকে সিউড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ধৃতদের হাসপাতালের বহির্বিভাগের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘণ্টা দেড়েক পরে ফের ধৃতদের একই বাসে বোলপুরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে হাসপাতাল সুপার অসিত বিশ্বাস বলেন, “তিন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেকের ত্বক, কফ, থুতু ও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরে তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
হাসপাতাল সূত্রে খবর, একই পরীক্ষার জন্য তরুণীরও দেহরসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার সময় পরে থাকা তাঁর পোশাকেরও পরীক্ষা হবে। সংগৃহীত সমস্ত নমুনাই ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। এ দিকে, হাসপাতালের অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ দিনই এক নার্সকে ওই তরুণী বলেছেন, “অনেক দিন আয়নায় নিজের মুখ দেখিনি। আমাকে কি একটা আয়না আর চিরুনি দেওয়া যাবে?” এর পরেই হাসপাতালের নার্সদের একাংশের তরফে ওই তরুণীর জন্য একটি আয়না, চিরুনি ও মুখের ক্রিম উপহার দেওয়া হয়েছে। |
এ দিন দুপুরেই বোলপুরের এসিজেএম পীযূষ ঘোষের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন নির্যাতিতা তরুণীর পুরুষ-সঙ্গীর দাদা। মামলার সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল বলেন, “এ দিন লাভপুর গণধর্ষণ মামলার তদন্তকারী অফিসার পার্থ ঘোষ ওই ব্যক্তির গোপন জবানবন্দি নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে আবেদন করেছিলেন। বিচারক ওই আর্জি মঞ্জুর করেছেন।”
পুলিশ সূত্রে খবর, সালিশি সভায় তিনিও ছিলেন। তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য অজয় মণ্ডলের উপস্থিতিতে সুবলপুরের মাঝি-হাড়াম ও গ্রামবাসীর একাংশের হাত থেকে তিনিই ভাইকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। সালিশি সভার পরে তরুণীর পুরুষ সঙ্গীকে নিজের হেফাজতে নেওয়ার মীমাংসাপত্রে আবেদনকারী হিসেবেও তাঁরই স্বাক্ষর রয়েছে। ওই মীমাংসাপত্রে তরুণীর পুরুষ-সঙ্গী, অজয় মণ্ডল এবং আরও এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির স্বাক্ষর আছে। ওই সালিশিসভার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নির্যাতিতার পুরুষ-সঙ্গীর এই দাদার সাক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার নির্যাতিতার পুরুষ-সঙ্গী এবং আরও তিন জন বোলপুরে আদালতে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তা আজ জেলার পুলিশ সুপারের কাছে এসে পৌঁছেছে। এ দিকে, অভিযোগ জানানোর পরে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও অভিযোগকারিণীর এখনও কোনও গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। পুলিশের দাবি, চিকিৎসকেরা প্রয়োজনীয় অনুমতি দিলে আদালতে শীঘ্রই তার জন্য অনুমতি চাওয়া হবে।
এ দিকে, বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা-সহ আদিবাসীদের ১০টি সংগঠন আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বীরভূমে একটি মিছিল ও সভা সংগঠিত করছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ-সহ আশপাশের কয়েকটি রাজ্য থেকে কয়েক হাজার প্রতিনিধি যোগ দেবেন। আমোদপুর থেকে মিছিল যাবে সাঁইথিয়া থানার তালবোনা গ্রামে। সেখানেই সভা হবে। ওই সংগঠন অবশ্য সুবলপুরেই ওই সভা করতে চেয়েছিল। গাঁওতার দাবি, প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, গণ্ডগোলের আশঙ্কাতেই তরুণীর গ্রামে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
|