অভিযোগ করার পরেই অপসৃত কলেজ প্রশাসক
হবিলে বড় মাপের অর্থিক দুর্নীতির খোঁজ পেয়ে কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, প্রাক্তন দুই অধ্যক্ষ-সহ বারো জনের বিরুদ্ধে তিনি-ই থানায় এফআইআর দায়ের করেছিলেন। বুধবার রামপুরহাট কলেজের সেই প্রশাসক আব্দুল মকিদকেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসেবে তাঁদের যুক্তি, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় অনুমতি না নিয়েই ওই পদক্ষেপ করেন। আগেই অভিযুক্তেরা ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও দাবি, কলেজ তহবিলে কোনও দুর্নীতি হয়নি।
ঘটনার জেরে নতুন করে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রামপুরহাটের মহকুমাশাসককে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক দেবকুমার পাঁজা বলেন, “খুব শীঘ্রই কলেজে নতুন পরিচালন কমিটি গঠিত হবে। যত দিন না পরিচালন কমিটি গঠিত হচ্ছে, তত দিন রামপুরহাট মহকুমাশাসক কলেজের প্রশাসকের দায়িত্বে থাকবেন।”
গত রবিবার রাতে আব্দুল মকিদ রামপুরহাট থানায় কলেজের ১২ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। অধ্যক্ষগণ ছাড়াও অভিযোগপত্রে কলেজের চার বর্তমান অধ্যাপক, এক প্রাক্তন অধ্যাপক-সহ কয়েক জন কর্মীর নামও ছিল। তাঁর দাবি ছিল, ২০০৬-’০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১১-’১২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত কলেজ ফান্ডের প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা তছরুপ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে, উচ্চ শিক্ষা দফতরের ‘ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন’-এর তদন্তে এবং ক্যাগের রিপোর্টে তা প্রমাণিত হয়েছে। মকিদবাবু অভিযোগের প্রত্যয়িত কপি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরের দিনই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ওই কাগজপত্র পাওয়ার পরে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক দেবকুমার পাঁজা আব্দুল মকিদকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানান। জেলাশাসককেও চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেন তিনি।
অপসারণের পরে আব্দুল মকিদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কলেজ পরিদর্শক দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে বেআইনি ভাবে আমাকে প্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দিলেন।” তাঁর পাল্টা দাবি, “উপাচার্য বা কলেজ পরিদর্শকের আমাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কোনও অধিকার নেই। কারও অঙ্গুলিহেলনে যদি তাঁরা এই কাজ করে থাকেন, তবে দু’জনেরই ওই পদে না থাকাই ভাল। আমাকে অন্যায় ভাবে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমি উপাচার্য এবং কলেজ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করব।”
রামপুরহাট কলেজের ওই প্রাক্তন প্রশাসকের দাবি, কলেজে বড় করমের দুর্নীতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত রিপোর্ট এবং ক্যাগের তদন্ত রির্পোটে সেই দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে। এমনকী, উচ্চশিক্ষা দফতরের তদন্তও একই দিকে ইঙ্গিত করেছে। মকিদবাবু বলেন, “দুর্নীতির সঙ্গে যেহেতু কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়দেব পান নিজেও জড়িত, তাই চিনি এ নিয়ে থানায় কোনও অভিযোগ করেননি। ওই কারণে সরকারি নিয়ম মোতাবেক প্রশাসক হিসেবে আমি দুর্নীতিতে জড়িত ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। দুর্নীতির প্রতিবাদ করে কি কোনও অন্যায় করেছি?”
যদিও ওই প্রাক্তন প্রশাসন নিয়ম মেনে অভিযোগ জানানি বলেই দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। দেবকুমারবাবু বলেন, “মকিদবাবুকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করেছেন। অথচ কলেজের ১২ জন বর্তমান ও প্রাক্তন অধাপক-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করবেন, অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি নেবেন না, তা হয় না।” সেই কারণেই তাঁকে পদ থেকে সরানো হল বলে তিনি জানিয়েছেন। বরং সদ্য প্রাক্তন প্রশাসকের দায়ের করা দুর্নীতির অভিযোগ ঠিক নয় বলেই দেবকুমারবাবু দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত রিপোর্টে রামপুরহাট কলেজে আর্থিক দুর্নীতি বা তছরুপ পাওয়া যায়নি। তবে, টাকা খরচে পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি পাওয়া গিয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে কেবল সে কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।” মকিদবাবুর বিরুদ্ধে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “ওই ব্যক্তিকে আজ থেকে প্রায় বছর দেড়েক আগে মাত্র ৬ মাসের জন্য প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। ছ’ মাসের মধ্যে তাঁকে কলেজের নতুন পরিচালন কমিটি গঠনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করেননি। উল্টে সময় চেয়ে নিয়ে প্রশাসক থেকে গিয়েছেন।” মামলার প্রসঙ্গে দেবকুমারবাবুর কটাক্ষ, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তো অনেক মামলাই চলছে। আরও একটা না হয় যুক্ত হবে। এর বেশি কী হবে!” এ দিকে, মকিদবাবুর দাবি, “কলেজে বিভিন্ন ঝামেলা চলার জন্যই পরিচালন কমিটি গঠন করা যায়নি।”
মকিদবাবুর অপসারণ প্রসঙ্গে কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতরের পরিষদীয় সচিব আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেটা ভাল বুঝেছেন, করেছেন। এক্ষেত্রে কারও অঙ্গুলিহেলনে তাঁদের পরিচালিত করার কথা উঠছে কেন, বুঝতে পারছি না।” অন্য দিকে, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়দেব পান বলেন, “আমি তো আগেই বলেছি, কলেজে কোনও আর্থিক দুর্নীতি হয়নি। যা হয়েছে, সেটা পদ্ধতিগত ত্রুটি। তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ মেনে আমরা কাজ করে চলেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.