পুরভোট চুকেছে সবে মাস চারেক হয়েছে। তার মধ্যেই ভাঙন শুরু হল দুবরাজপুর কংগ্রেসে।
বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ বোলপুরে শাসক দলের দলীয় কার্যালয়ে এসে তৃণমূলে যোগ দিলেন দুবরাজপুর পুরসভার দুই কংগ্রেস কাউন্সিলর। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রীতা কবিরাজ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সন্তোষ মণ্ডল রং পাল্টানোয় ১৬ আসন বিশিষ্ট দুবরাজপুর পুরসভায় কংগ্রেসের আসন সংখ্যা কমে দাঁড়াল ২-এ। অন্য দিকে, তৃণমূল বেড়ে হল ১১। এ দিন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, দুবরাজপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে, উপ-পুরপ্রধান মির্জা শওকত আলির উপস্থিতিতে ওই দুই কংগ্রেস কাউন্সিলর আনুষ্ঠানিত ভাবে তৃণমূলে যোগ দেন। অনুব্রত বলেন, “উন্নয়নের স্বার্থে ওঁরা আমাদের দলে এসেছেন। ওঁদের স্বাগত।” তাঁর সুরেই সুর মিলিয়েছেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া ওই দুই কাউন্সিলরও। যদিও কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “গত চার মাসে নীতি আদর্শগত ভাবে তৃণমূল দল বদলেছে, এমনটা নয়। তাই হঠাৎ দল বদলের পিছনে নিশ্চয়ই কোনও না কোনও প্রলোভন রয়েছে বলে আমি মনে করি।” তাঁর দাবি, “মানুষের ভোটে তৃণমূলকে হারিয়ে কংগ্রেসের টিকিটে যাঁরা জয়ী হয়েছিলেন, তাঁরা লোভে পড়ে দলবদল করে সেই ভোটদাতাদের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করলেন।”
যদিও কংগ্রেসের ওই বক্তব্যকে বিশেষ আমল দিতে নারাজ তৃণমূল শিবির। দলের অন্দর-মহলে একটি ভিন্ন সুরও শোনা যাচ্ছে। পুরভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই কে বসবেন পুর প্রধানের আসনে, তা নিয়ে জোর জল্পনা ছিল। নেতাদের সামনে ছিল দু’টি নাম। এক দিকে, দীর্ঘ দিন ধরে শহরে দলের মুখ তথা একাধিকবার তৃণমূলের টিকিটে জেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। আর উল্টো দিকে ছিলেন পুরভোটের অল্প আগে তৃণমূলে যোগ দেওয়া, তিন-তিন বারের কংগ্রেস পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে এ বারও পুরপ্রধান হয়ে শেষ হাসি হাসেন পীযূষবাবুই। তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, “ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে একটি বড় কারণ ছিল, জয়ী ৯ তৃণমূল কাউন্সিলরের বেশির ভাগই পীযূষবাবুর পক্ষে ছিলেন।”
নাম ঘোষণার পরে দুই নেতাই বিষয়টি ‘দলীয় সিদ্ধান্ত’ বলে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যদিও তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, দলের ওই সিদ্ধান্তে প্রভাতবাবু কিছুটা আহত হয়েছিলেন। সম্প্রতি কংগ্রেস কাউন্সিলরদের সমর্থনে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে অনাস্থা আনা হতে পারে, এমন একটি আশঙ্কা তৈরি হয় তৃণমূলের অন্দরে। তার পিছনে প্রভাতবাবুর একটা হাত থাকতে পারেন, এমন কথা অবশ্য কোনও তৃণমূল নেতাই প্রকাশ্যে বলছেন না। তবে তৃণমূল অন্দরেই জোর খবর, ওই আশঙ্কা থেকেই পীযূষবাবু তাঁর পুরনো গড় কংগ্রেসের দুই কাউন্সিলরকে দলে টেনে নিয়ে ঘর গোছানোর কাজ করলেন। রাজনীতির কারবারিদের বিশ্লেষণ এর ফলে পুরপ্রধান দুটো জিনিস করতে সক্ষম হলেন। এক, দলের কাছে ফের যোগ্যতা প্রমাণ করে নিজের ক্ষমতা বাড়ালেন। দুই, বিরোধীদের ডানা ছাঁটলেন। ফলে ভবিষ্যতে পুরসভার কোনও কাজে তিনি আর বিরোধিতার মুখে পড়বেন না। পীযূষবাবু অবশ্য বলছেন, “ওই দুই কাউন্সিলর স্বেচ্ছায় দলে এসেছেন। তাতে কাজ করতে সুবিধা হবে।” অন্য দিকে, প্রভাতবাবু বলেন, “দল পীযূষবাবুকে পুরপ্রধান করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে কে অনাস্থা আনবে! যাঁরা এই সব ব্যাপারে আমার নাম জড়াতে চাইছেন, তাঁরা ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলছেন।”
এ দিকে, ক্ষমতার নিরিখে এত দিন পুরসভায় প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছিল কংগ্রেস। কিন্ত বর্তমানে বিজেপি ও কংগ্রেসের আসন সংখ্যা সমান হয়ে যাওয়ায় এ বার বিরোধী দলনেতা কে হবেন, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। তবে, স্থানীয় বিজেপি নেতা সত্যপ্রকাশ তিওয়ারি বলেন, “আমাদের দুই মহিলা কাউন্সিলর হওয়ায় বিরোধী আসনে থাকলেও বিরোধী দলনেতার ভূমিকায় যাব না।” বর্তমান বিরোধী দলনেতা কংগ্রেস কাউন্সিলর শেখ নাজির উদ্দিন বলেন, “যতক্ষণ বিরোধী আসনে রয়েছি, সাধ্যমতো দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করব।” |