লাভপুরের আদিবাসী তরুণীকে গণনির্যাতনের ঘটনায় মঙ্গলবার বোলপুর আদালতে তরুণীর পুরুষসঙ্গী, তরুণীর দুই দাদা এবং এক বউদি গোপন জবানবন্দি দিলেন। পাশাপাশি অভিযোগকারিণী এবং ১৩ অভিযুক্তের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পুলিশের আর্জিও মঞ্জুর করল বোলপুর আদালত। সরকারি আইনজীবী ফিরোজকুমার পাল জানিয়েছেন, এ দিন প্রথমার্ধে ১৬৪ ধারার অধীনে গোপন জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। এর পরে দ্বিতীয়ার্ধে চার জনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
পুলিশের একটি সূত্রে খবর, গত শনিবার সুবলপুরে ফরেন্সিক তদন্তে গিয়েছিল যে দলটি, তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়েছে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে। ওই সূত্রের দাবি, রিপোর্টটি তদন্তকারী দলের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাতে ধর্ষণের সপক্ষে কিছু প্রমাণ মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। তবে পুলিশের অন্য একটি সূত্রের খবর এ দিন পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীর পুরুষসঙ্গী এবং তাঁর দাদাকে তদন্তের স্বার্থে সিউড়ি এলাকাতেই নিরাপদে রাখা হয়েছে। |
বোলপুর আদালতে গোপন জবাবন্দি দেওয়ার কথা ছিল চারজনের। সংবাদমাধ্যমকে এড়াতে প্রথমে দু’জনের ‘ডামি’ পাঠানো হয়। পরে তরুণীর পুরুষসঙ্গী এবং তাঁর দাদাকে বোলপুর আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। বোলপুর আদালত চত্বরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জেলার ডিএসপি (সদর) পার্থ ঘোষ, ডিএসপি (আইন ও শৃঙ্খলা) সুমিত চট্টোপাধ্যায়, লাভপুর থানার ওসি দেবাশিস ঘোষ, এসআই বাহাদুর মণ্ডল-সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের এড়াতে কখনও ওই চার জনের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির জামা বদলানো হয়। আবার কখনও বা এক ‘ডামি’ বা নকল ব্যক্তিকে নিয়ে আদালত চত্বরে পুলিশ ঘোরাফেরা করে। ‘অত্যন্ত গোপনীয়তা’ বজায় রাখার জন্য বেশ কিছু সময়ে ব্যবধানে তদন্তকারী দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা গাড়িতে আসেন ওই চার ব্যক্তি। পরে তাঁদের নিয়ে পঁয়তাল্লিশ মিনিট ও এক ঘণ্টা অন্তরে পুলিশের গাড়ি চলে যায় অজানা ঠিকানায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর পুরুষসঙ্গী, বড় দাদা, মেজ দাদা এবং এক বউদির গোপন জবানবন্দি নিয়েছেন বিচারক। তরুণীর ছোট ভাইকে আনা হলেও তার জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়নি। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই তরুণীর পোশাক এবং অভিযুক্তদের পোশাক থেকে পাওয়া নমুনা মেলানো হবে। পাশাপাশি ওই তরুণীর ডিএনএ এবং অভিযুক্ত ১৩ জনের ডিএনএ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখবে তদন্তকারী দল।” |
অন্য দিকে, এ দিনই বোলপুরের মহকুমা হাসপাতালে আদিবাসী তরুণীকে গণধর্ষণে অভিযুক্ত ১৩ জনের ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারই বোলপুর আদালতে পুলিশ তার জন্য আবেদন করেছিল। বিচারক মঞ্জুরও করেছিলেন। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “অভিযুক্তরা যৌন সঙ্গমে কতটা সক্ষম তা পরীক্ষা করা হয়েছে।”
এ দিন বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে।”
|