৮ জনের হাতে লাভপুর কাণ্ডের তদন্তভার

লাভপুরের নির্যাতন কাণ্ডের পুলিশি তদন্তে এ বার পরিবর্তন।
আগে তদন্ত করছিলেন লাভপুর থানার এক সাব-ইনস্পেক্টর। সোমবার ওই অফিসারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে থাকবে সাত সদস্যের দল।
বীরভূমের নতুন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “মামলার গুরুত্ব দেখেই তদন্তকারী অফিসার ঠিক করা হয়। এ ক্ষেত্রে সেই গুরুত্ব বিবেচনা করেই ডিএসপি (সদর) পার্থ ঘোষকে দায়িত্ব দেওয়া হল। তদন্তে সাহায্য করতে আরও সাত অফিসারের একটি দলও গঠন করা হয়েছে।” তাতে রয়েছেন বীরভূমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশান্ত চৌধুরী, এসডিপিও (বোলপুর) সূর্যপ্রতাপ যাদব, ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) সুনীত চট্টোপাধ্যায়, অরূপ সরকার, ওসি (লাভপুর), ডিইও আশালতা গোস্বামী, দেবাশিস ঘোষ সিআই (দুবরাজপুর) ও মামলার প্রথম তদন্তকারী অফিসার বাহাদুর মণ্ডল।
গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলছেন বোলপুর আদালতের বিচারক
সঙ্ঘমিত্রা পোদ্দার। সোমবার সুবলপুরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
কিন্তু বাহাদুরবাবুকে সরানো হল কেন? তা হলে কি পুলিশ প্রথমে ওই তরুণীর অভিযোগকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি? জবাব দেননি পুলিশ সুপার।
মামলায় ধৃতদের পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আবেদন না করায় ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই সরানো হয় সে সময়ের পুলিশ সুপার সি সুধাকরকে। শুক্রবার পুলিশ বোলপুর আদালতে ধৃতদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে। আবেদন মঞ্জুরও হয়। আদালতে সরকারি কৌঁসুলি জানান, তদন্তকারী অফিসার বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় মামলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে উঠতে পারেননি। তাই প্রথম দিন ধৃতদের হেফাজতে চায়নি পুলিশ। বাহাদুরবাবুর থেকে তদন্তের দায়িত্ব সরানোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে সেই ঘটনার কি যোগ রয়েছে? পুলিশ সুপার এ বারও নিরুত্তর।
এ দিন দুপুর পৌনে ৩টেয় দলবল নিয়ে সুবলপুরে পৌঁছয় নতুন তদন্তকারী দল। অভিযুক্ত মোড়লের রান্নাঘর ও নির্যাতিতার বাড়ি ঘুরে দেখার পাশাপাশি তারা বাসিন্দাদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে। পরে কমব্যাট ফোর্স নিয়ে পৌঁছন এসডিপিও (বোলপুর)। পুলিশ আধিকারিকদের আনাগোনায় অভিযুক্তদের পরিবারের অনেকেই ঘটনাস্থলে ভিড় করেন। মহিলারা প্রশ্ন করেন, “আমাদের বাড়ির নির্দোষ ছেলেদের পুলিশ কবে ছাড়বে?” তাঁরা অবশ্য জবাব পাননি।
পুলিশের তদন্তকারী দলের একটু পরেই সুবলপুরে পৌঁছয় বিচার বিভাগীয় তদন্তকারী দল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে গড়া ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা বিচারক শুভ্রদীপ মিত্র। গ্রামের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান কী ভাবে করা হয়, আদিবাসী সমাজে ‘মাঝি হাড়াম’ (মোড়ল)-এর ভূমিকা, জরিমানার মতো প্রসঙ্গ নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে তাঁদের কথা বলতে দেখা যায়। চার অভিযুক্তের পরিবারের মহিলাদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেন তাঁরা। ঘটনার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত বলাই মাড্ডির রান্নাঘরে পড়ে থাকা খাটিয়াটি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন। ঘটনাস্থল-সহ একাধিক জায়গার ছবি ও স্কেচ তৈরির নির্দেশও দেন। এর আগে দুপুরে বিচারকদের ওই দলটি সিউড়ি সদর হাসপাতালে নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, নির্যাতিতা বিচারকদের কাছে দোষীদের চরম শাস্তি দাবি করেন।
লাভপুর-কাণ্ডের প্রতিবাদে সারা ভারত মহিলা সাংস্কৃতিক
সংগঠনের পথ অবরোধ রামপুরহাট পাঁচমাথায়। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবারই নির্যাতিতার পুরুষ-সঙ্গীর সঙ্গে যোগাযোগ করা গিয়েছে। ঘটনার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। নিরাপত্তার অভাব বোধ করেই এক দাদার সঙ্গে লাগোয়া ঝাড়খণ্ড এলাকায় চলে যান তিনি। পরিবারের মাধ্যমে বীরভূম পুলিশ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আপাতত ওই যুবককে জেলারই একটি থানার নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য তদন্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে পুলিশের দাবি। জেলা পুলিশের কর্তা জানান, ধৃত এক অভিযুক্ত জেরায় জানিয়েছেন, নির্যাতনের আগে সালিশি সভা এবং তরুণী ও তাঁর সঙ্গীকে গাছে বেঁধে মারধরের কিছু ছবি মোবাইলে তুলেছিলেন তিনি। সেটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। জেলা পুলিশেরই অপর সূত্রের দাবি, ওই মোবাইল উদ্ধার হলেও তাতে তেমন কিছু মেলেনি। সে দিন অন্য কোনও এক গ্রামবাসী তাঁর মোবাইলে পুরো সালিশিসভার ভিডিও করে রেখেছিলেন। ওই গ্রামবাসীকে চিহ্নিত করে পুলিশ ওই মোবাইলটিই উদ্ধারের চেষ্টা করছে।

সহ-প্রতিবেদন: অর্ঘ্য ঘোষ

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.