সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মামলা হয়েছে দুই আদালতেই। তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলাটির শুনানি পিছিয়ে গেল। ১১ ফেব্রুয়ারি শুনানি হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়ে দেওয়া হয়। একই দিনে কলকাতা হাইকোর্টে সারদা মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান, তাঁর ডিভিশন বেঞ্চ সারদা সংক্রান্ত সব মামলা ছেড়ে দিতে রাজি।
শীর্ষ আদালতের মামলায় অবশ্য শুধু সারদা গোষ্ঠীর তছরুপ নয়, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের নানান রাজ্যে সারদা-সহ বিভিন্ন বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার বেআইনি ব্যবসার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চাওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষে এই মামলা করা হয়। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই নিজেদের বক্তব্য পেশ করেছে। তারা বলেছে, সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনও সম্পর্ক ছিল না। সিবিআই তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই।
মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালতে আবেদনকারীদের পাল্টা বক্তব্য শোনার কথা ছিল। তৈরি হয়ে এসেছিলেন রাজ্য সরকারের আইনজীবীরাও। কিন্তু মামলা পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানানো হয় আবেদনকারীদের তরফেই। আদালত প্রথমে জানায়, মার্চে পরবর্তী শুনানি হবে। ওড়িশার বাসিন্দা অলোক জেনা ওই রাজ্যে বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত চেয়ে পৃথক আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টে। দু’টি মামলাই একত্রে শোনা হবে বলে ঠিক করে শীর্ষ আদালত। জেনা আদালতের কাছে মামলার শুনানির দিন কিছুটা এগিয়ে আনার আর্জি জানান। তখন ঠিক হয়, শুনানি হবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি।
সারদা সংস্থায় বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপের পরে অসংখ্য আমানতকারী বিপাকে পড়েন। তাঁদের কষ্টার্জিত টাকা কোথায় গেল, কী ভাবে তা ফেরত পাওয়া যাবে, সেই প্রশ্ন ওঠে সর্বস্তরে। সেই কেলেঙ্কারির তদন্তের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই-কে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ছাড়াও কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়, কিন্তু হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ থেকে সারদা মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে সোমবারেই জানিয়ে দিয়েছিলেন আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শুনানি শুরু হলে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁর ডিভিশন বেঞ্চ সারদা সংক্রান্ত সব মামলাই ছেড়ে দিতে রাজি। এ দিন বিচারপতি এই ব্যাপারে বিভিন্ন পক্ষের আইনজীবীদের মতামত জানতে চান।
আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় তখন বলেন, মামলা করেছেন তাঁর মক্কেল এবং তিনিই মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চাইছেন। তিনি মামলা প্রত্যাহার করতে পারবেন কি না, তা স্থির করবেন বিচারপতি। তাই বিভিন্ন পক্ষের মতামত জানার কোনও মূল্য নেই। একই সঙ্গে ওই আইনজীবী জানান, ইতিমধ্যেই আট মাস অতিবাহিত। এখন সিবিআই তদন্তের ব্যবস্থা হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনার কোনও অবকাশ নেই। তাই তাঁর মক্কেল এই ডিভিশন বেঞ্চ থেকে মামলাটি তুলে নিতে চাইছেন।
ডিভিশন বেঞ্চ গত ১৯ জুলাই ১১টি নির্দেশ দিয়েছিল। তার অন্যতম হল, সারদা সংক্রান্ত সব মামলার বিচার হবে একটি বিশেষ আদালতে। কিন্তু রাজ্য সরকার আজ পর্যন্ত সেই সব নির্দেশের অধিকাংশই রূপায়ণ করেনি। আইনজীবী জানান, এর থেকে বোঝা যায়, সারদা মামলা নিয়ে রাজ্য সরকার মোটেই সক্রিয় হতে চাইছে না। কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট বিভাগ বা ইডি-র আইনজীবী সোমনাথ বসু ও বিকাশ ভট্টাচার্য আদালতে জানান, তাঁরা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চাইছেন।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও আইনজীবী প্রণব দত্ত বলেন, এই মামলায় যথেষ্ট সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শুনানিও হয়েছে। মামলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই অবস্থায় মামলা প্রত্যাহার করলে আদালতের আরও সময় নষ্ট হবে। নতুন ডিভিশন বেঞ্চে নতুন করে শুনানি হবে। তাতে আমানতকারী এবং অন্যদের বিড়ম্বনা বাড়বে।
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজ, বুধবার তিনি এই ব্যাপারে তাঁর মতামত জানাবেন।
|