রাজ্য জুড়ে ছাত্র ভোটে প্রায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। এরই মধ্যে যেন বিচ্ছিন্ন দুই দ্বীপ কাটোয়া এবং সবং। কংগ্রেসের বরাবরের শক্ত এই দুই ঘাঁটিতে কলেজ নির্বাচনেও ‘গড় রক্ষা’ করলেন দুই ভূমিপুত্র বিধায়ক। কাটোয়ায় রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং সবংয়ে মানস ভুঁইয়া।
বর্ধমানের কাটোয়া কলেজের ভোট নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই চাপানউতোর চলছিল। গত ২০ জানুয়ারি কাটোয়ায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর প্রস্তুতি সভায় গিয়ে প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবুর বাড়িতে চড়াও হওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। ছাত্র পরিষদ অবশ্য এই কলেজে টিএমসিপিকে দাঁত ফোটাতে দেয়নি। ৪২টি আসনের মধ্যে ৪১টিতেই জিতেছে ছাত্র পরিষদ। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়েও দাপটের সঙ্গে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে ছাত্র পরিষদ। ছাত্র সংসদের ৩১টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের প্রাপ্তি মাত্র একটি। বাকি ৩০টি গিয়েছে ছাত্র পরিষদের দখলে।
কাটোয়া এবং সবং কংগ্রেসের দুর্গ। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের ঝড়ের মধ্যেও নিজেদের খাসতালুকে আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন কংগ্রেসের দুই বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু ও মানসবাবু। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এই দুই এলাকায় কংগ্রেসের পাল্লা ভারী ছিল। এ দিন কাটোয়া কলেজে ভোট চলাকালীন রবীন্দ্রনাথবাবু ছিলেন দলীয় কার্যালয়ে। ফল বেরোনোর পরে তিনি শুধু বলেন, “এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা শান্তি চায়। তাই ছাত্র পরিষদের পাশে দাঁড়িয়েছে।”
সেই সত্তরের দশক থেকে সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে ক্ষমতায় রয়েছে ছাত্র পরিষদ। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জয়ের খবর পেয়ে সবংয়ের বিধায়ক মানসবাবু বলেন, “সবং কলেজে টিএমসিপি পড়ুয়াদের উপরে অত্যাচার করেছে। তবু আমরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের শুভেচ্ছায় ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছি।” মেদিনীপুর কমার্স কলেজেও জিতেছে ছাত্র পরিষদ। দলের ছাত্র সংগঠনের জয়ের প্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ছাত্র পরিষদ যে ভাবে কয়েকটি কলেজে জিতেছে, তাতে প্রমাণিত তৃণমূল সন্ত্রাস চালিয়ে একাধিপত্য কায়েম করতে পারবে না।”
বর্ধমান এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছিল মঙ্গলবার। সকাল থেকেই কাটোয়া কলেজে ভোট ঘিরে উত্তেজনা ছিল। কলেজ লাগোয়া টিএমসিপি-র শিবিরে হাজির ছিলেন পূর্বস্থলীর বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় ও কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ। কিছুটা দূরে পুরসভা মোড়ে বসেছিলেন বর্ধমান জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। ছাত্র পরিষদের জয়ের পরে টিএমসিপি-র বর্ধমান জেলা সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “বেশ কিছু আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। সব আসনের ফল হাতে এলে বিশদে খতিয়ে দেখব।” আর ফল জেনে অনুব্রতর প্রতিক্রিয়া, “আমরা কাটোয়া কলেজের সব আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছি, এটাই বড় কথা।”
এ বার কাটোয়া কলেজে ছাত্র পরিষদ এবং টিএমসিপি-র সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। বিকেলে ফল বেরোনোর পরে দেখা যায়, ৪২টি আসনের মধ্যে ৪১টিতে জয়ী হয়েছে ছাত্র পরিষদ। একটি আসনে টাই হয়েছে। মেদিনীপুর কমার্স কলেজ এবং সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদও একক ভাবে দখল করেছে ছাত্র পরিষদ। কমার্স কলেজের ৩০টি আসনের মধ্যে টিএমসিপি জিতেছে ৯টিতে। বাকি ২১টির মধ্যে ২০টি ছাত্র পরিষদ দখল করেছে। একটিতে জয়ী হয়েছে এসএফআই।
বর্ধমানের রানিগঞ্জ মহিলা কলেজেও পরাজিত হয়েছে টিএমসিপি। ২৯টি আসনের মধ্যে ৬টিতে কেউ প্রার্থী দিতে পারেনি। ৬টিতে টিএমসিপি এবং ৫টিতে এসএফআই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। এ দিন বাকি ১২টি আসনের মধ্যে এসএফআই ৮টি এবং টিএমসিপি ৩টিতে জেতে। একটি আসনে ‘টাই’ হয়। বর্ধমানের এই একটি কলেজের ছাত্র সংসদেই ক্ষমতা ধরে রাখল এসএফআই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার পাঠানখালি কলেজে এ বার জিতেছে এসএফআই-পিএসইউ জোট। ৬৪টি আসনের মধ্যে ৪৬টি জোটের দখলে আসে। টিএমসিপি জিতেছে ১৮টিতে। গত বার এই কলেজের ছাত্র সংসদ টিএমসিপি-র দখলে ছিল। |