টেট-এর জল গড়াল আদালতে।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা বা টেট-এ (টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট) দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চেয়ে মঙ্গলবার একাধারে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট, দু’জায়গাতেই মামলা হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন খোদ চাকরিপ্রার্থীরাই। সুপ্রিম কোর্টে শুনানি কবে হবে, ঠিক হয়নি। কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলাটি আগামীকাল, বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য ওঠার কথা।
টেট-এ বেনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বস্তুত এ দিন দু’টি মামলা হয়েছিল। টেটের দুর্নীতির সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের একাংশের যোগসাজশের অভিযোগ তুলে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ একটি মামলা করেন। আবার প্রাথমিকে শিক্ষকতার জন্য প্রশিক্ষিত অথচ বেকার যুবক-যুবতীরা নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আলাদা ভাবে আর একটি মামলা করেন। একই বিষয়ে দুটি আবেদন হয়েছে জানতে পেরে সুপ্রিম কোর্ট দু’টি মামলা একসঙ্গে জুড়ে দেয়। দু’টি মামলাতেই রাজ্যের শিক্ষা দফতর, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
আবেদনকারীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-র নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিকে শিক্ষকতার জন্য পরীক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। সেই সঙ্গে এনসিটিই-অনুমোদিত দু’বছরের ‘ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন’ প্রয়োজন। কিন্তু এই ডিপ্লোমা নেই এমন পরীক্ষার্থীরাও টেট-এ পাশ করে গিয়েছেন। এখানেই রাজনৈতিক যোগসাজশের অভিযোগ আনছেন মামলাকারীরা। এনসিটিই কেন চুপ করে রয়েছে, সেটাও তাঁদের প্রশ্ন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি এস চহ্বাণ, বিচারপতি জে চেলেমেশ্বর এবং বিচারপতি এম ওয়াই ইকবালের বেঞ্চে এই মামলাটি ওঠে। বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, আবেদনকারীরা কলকাতা হাইকোর্টে যাচ্ছেন না কেন। তখন আবেদনকারীদের তরফেই জানানো হয়, একই বিষয়ে আরও একটি মামলা বিচারপতি এস এস নিজ্জর এবং বিচারপতি এ কে সিক্রির বেঞ্চে রয়েছে। সেই মামলাতেও আবেদনকারীদের অভিযোগ, ১৭ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১.০৭ শতাংশ টেট-এ পাশ করেছেন। কিন্তু তাঁদের নামের কোনও তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। যারা পাশ করেছেন, তাদের বেশির ভাগেরই প্রয়োজনীয় দু’বছরের ডিপ্লোমা নেই। অথচ রাজ্যে প্রায় ১৮ হাজার ডিপ্লোমাধারী, যোগ্যতাসম্পন্ন বেকার যুবক-যুবতী রয়েছেন। ফলে সার্বিক ভাবেই পরীক্ষার ফলাফলে অস্বচ্ছতার অভিযোগ করেছেন আবেদনকারীরা। স্থির হয়েছে, দু’টি মামলা একসঙ্গে জুড়ে বিচারপতি এস এস নিজ্জর ও বিচারপতি এ কে সিক্রির বেঞ্চেই শুনানি হবে।
একই ভাবে কলকাতা হাইকোর্টে টেট-উত্তীর্ণদের জেলাওয়াড়ি নাম, ঠিকানার তালিকা এবং যোগ্যতা জানতে চেয়ে জনস্বার্থ মামলা করেছে কংগ্রেস। দলের তরফে আইনজীবী প্রদীপ তরফদার বলেন, টেট-এ সাফল্যের ভিত্তি কী, তা জানতে চেয়ে ২৬ দিন আগে রাজ্যের জনতথ্য আধিকারিকের কাছে আবেদন করেছিল কংগ্রেসের আরটিআই শাখা। সেখানে আটটি প্রশ্নের জবাব চাওয়া হয়। টেট-এ আবেদনকারীর সংখ্যা কত ছিল, কত জন পরীক্ষায় ডাক পেয়েছিলেন, কত জন সফল হয়েছিলেন, আবেদনকারীদের জমা দেওয়া ফি কোন কোন অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছিল ইত্যাদি। সদুত্তর না মেলায় মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “অসদুপায় অবলম্বন বা কিছু তৃণমূল নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাই টেট-এ সাফল্যের যোগ্যতা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। বঞ্চিত অসহায় আবেদনকারীদের কথা ভেবেই মামলার সিদ্ধান্ত।”
এ দিন ‘টেট-দুর্নীতি’র প্রতিবাদে দিনভর বিধাননগরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতর ঘেরাও করে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই সহ ১২টি বাম ছাত্র-যুব সংগঠন। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসের সামনে আলাদা করে বিক্ষোভ দেখায় এসইউসি-র ছাত্র-যুবরাও।
দুপুর ২টোর পর বিধাননগরের করুণাময়ী মোড় থেকে মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা যান প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতরে। শান্তিপূর্ণ ঘেরাও কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি থাকলেও অচিরেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। শিক্ষা দফতরের অফিস তাক করে পচা ডিম, টম্যাটো ছোড়া হয়। কয়েক জনকে ঢিলও ছুড়তে দেখা যায়। বিকেলের দিকে মিনিট দশেক করুণাময়ী মোড় অবরোধও করেন বিক্ষোভকারীরা। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেন, “এঁরা যে অযোগ্য, তা এক বার টেট পরীক্ষায় অসফল হয়ে প্রমাণ করেছিলেন। এ দিন এমন বিক্ষোভ দেখিয়ে ফের প্রমাণ দিলেন।”
|