বিধায়কের পরিবারের চার সদস্য ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন পাশ করেছেন প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় (টেট)। পদ্ধতিগত ভাবে ব্যাপারটা সম্ভব, তা মানলেও কালনার তৃণমূল বিধায়ক তথা পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর আত্মীয়-পরিজন ও ঘনিষ্ঠদের মধ্যে এত জনের নাম তালিকায় ওঠা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে কালনা শহর তৃণমূলেরই একাংশ। রাজ্যে যেখানে মাত্র ১ শতাংশ পরীক্ষার্থী ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, সেখানে ‘এমন কী করে হল’ প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও।
বিধায়ক বিশ্বজিৎবাবু অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগ বিরোধীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর। তাঁর আরও দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ম মেনে স্বচ্ছ ভাবে হয়েছে। তথ্য জানার অধিকার আইনে প্রায় ৭০০ চিঠি এ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে জমা পড়েছে। তার মধ্যে সাড়ে চারশোরও বেশি চিঠির উত্তর দেওয়া হয়ে গিয়েছে। |
তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। |
‘টেট’-এ দুর্নীতির অভিযোগে অবশ্য ইতিমধ্যে রাস্তায় নেমেছেন বামেরা। সোমবার কসবায় কলকাতা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখায় ডিওয়াইএফ। রাজভবনের সামনে ফরওয়ার্ড ব্লকের যুব লিগ বিক্ষোভ দেখায়। সেখানে গ্রেফতার করা হয় সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক অনির্বাণ চৌধুরী-সহ ৩১ জনকে। আজ, মঙ্গলবার দুপুরে বিধাননগরে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ঘেরাও করার কথা ঘোষণা করেছে ডিওয়াইএফ-সহ ১২টি বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠন।
ডিওয়াইএফের রাজ্য সভাপতি সায়নদীপ মিত্র তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক, পঞ্চায়েত সদস্য ও জেলা স্তরের নেতার নাম করে অভিযোগ করেন, “দলের সুপারিশেই এঁদের পরিবারের সদস্যদের নাম উত্তীর্ণদের তালিকায় উঠেছে।’’ এ দিন মেমারিতে এক সভায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের অভিযোগ, “বিধায়কের প্যাডে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি হচ্ছে এ রাজ্যে। চাকরি পাচ্ছেন বিধায়কের আত্মীয়স্বজন। এক-একটি চাকরির দাম উঠেছে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা।”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের যদিও পাল্টা অভিযোগ, “পুরো বিষয়টি সাজানো। তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করলেই সব প্রশ্নের জবাব মিলবে।” টেট-দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “তদন্ত হলে, হবে।”
নভেম্বরে ‘টেট’-এর ফল বেরোনোর পরেই বিধায়ক বিশ্বজিৎবাবুর স্বজন ও ঘনিষ্ঠেরা ‘মুড়ি-মুড়কির মতো’ সুযোগ পেয়েছেন অভিযোগ তুলে কালনায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু করে তৃণমূলের একাংশ। কালনার নানা এলাকায় বিধায়কের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে। বিলি হয় লিফলেটও। উত্তীর্ণের তালিকায় বিশ্বজিৎবাবুর স্ত্রী সঞ্চিতা কুণ্ডু, বৌদি কুন্তলিকা কুণ্ডু ছাড়াও নাম ছিল তাঁর এক মামা ও পিসতুতো ভাইয়ের। কালনার তৃণমূল নেতা সোমনাথ পণ্ডিতের অভিযোগ, “আত্মীয়-পরিজন তো বটেই, টেট-এ পাশ করেছেন বিধায়কের বাড়িতে কাজ করা এক যুবকও। নিজের ঘনিষ্ঠ এক কাউন্সিলরের মেয়ে-জামাই-সহ জনা পনেরোর নাম তালিকায় তুলেছেন বিধায়ক।” কিন্তু যোগ্যতামান থাকা পরীক্ষার্থীরা ওই পরীক্ষায় পাশ করতেই পারেন, তাতে আপত্তি কোথায়? সোমনাথবাবুর বক্তব্য, “করতেই পারেন। কিন্তু শুধু এক বিধায়কের ঘনিষ্ঠ এত জন এক সঙ্গে পাশ করে গেলেন, অথচ, রাজ্যের লক্ষ-লক্ষ পরীক্ষার্থী সফল হলেন না। তাতেই আমাদের সন্দেহ, দুর্নীতি হয়েছে।”
বিধায়ক বিশ্বজিৎবাবু অবশ্য বলেন, “যাঁরা পাশ করেছেন, নিজেদের যোগ্যতায় করেছেন। কারও সন্দেহ থাকলে তথ্য জানার অধিকার আইনে খাতা দেখতে পারেন।” তা হলে দলেরই একাংশ কেন হঠাৎ এ প্রশ্ন তুলে সোচ্চার হলেন? বর্ধমান জেলা তৃণমূল (গ্রামীণ) সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের জবাব, “কারা এমন বলছেন জানা নেই। দুর্নীতি হয়নি, এটুকু বলতে পারি।” |