কলেজের ছেলে বনেছে ডাকাত, পুলিশ তাজ্জব
ডাকাত কেমন হয়?
এক কালে রঘু ডাকাতদের হত ভাটার মতো চোখ, কপালে লাল তিলক, হাতে সঙীন। এখন হুমদো চেহারা, তোবড়ানো বা তেল চুকচুকে গাল, গলায় চেন।
কারও নাম ‘হুব্বা শ্যামল’ তো কারও ‘হাতকাটা দিলীপ’। কেউ এলাকার হুলো, কেউ বে-এলাকার কেলো। কিন্তু সকলের মিল একটাই পেটে পেটো মারলেও ‘ক’ বেরোবে না।
হুগলি জেলা পুলিশের খাতা অন্তত এত দিন তেমনই বলছিল। কিন্তু গত কিছু দিন পরপর কয়েকটা ঘটনায় পুলিশ রীতিমতো অস্বস্তিতে। কে না জানে, অভাব থেকেই সাধারণত লোকে এ সব দুষ্কর্মে আসে। কিন্তু তা বলে কলেজের ছেলে!
বেলুড়ের একটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স পড়ে অরিন্দম (নাম পরিবর্তিত)। মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন ছিল। বাড়ি হাওড়ার সালকিয়া এলাকার বাঁধাঘাটে। ছাপোষা পরিবার, বাবা একটি ছোট কারখানার কর্মী। ছেলেকে কোনও ক্রমে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। সম্প্রতি উত্তরপাড়ায় সোনার দোকানে ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে ধরা পড়ে সে এখন পুলিশি হেফাজতে। এ বছর আর তার পরীক্ষায় বসা হচ্ছে না। যদি কোনওক্রমে ছেলের জামিন হয়, এই আশায় আইনজীবী আর পুলিশের দোরে দৌড়ে জুতোর সুকতলা খইয়ে ফেলছেন বাবা।
অরিন্দমের সঙ্গেই উত্তরপাড়ায় জড়ো হয়েছিল কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে কমার্সের ছাত্র সৈকত (নাম পরিবর্তিত)। সে-ও বাঁধাঘাটেরই ছেলে। সোর্স মারফত তাদের জড়ো হওয়ার খবর জেনে আচমকা হানা দেন উত্তরপাড়া থানার আইসি অরিজিৎ দাশগুপ্ত। পরে তাদের জেরা করে তাঁরাও তাজ্জব বনে যান। ডেকে পাঠানো হয় অভিভাবকদের। সৈকতের বাড়ির লোকজনও এখন জামিনের জন্য তদন্তকারী অফিসারের হাতে-পায়ে ধরছেন। একটি সুযোগ চাইছেন, যাতে ছেলেটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যায়। কিন্তু আইন-আদালত পার করে তারা কবে বাড়ি ফিরবে, পুলিশও নিশ্চিত নয়।
প্রশ্ন হল, এ রকম সব কলেজের ছেলেদের ডাকাতিতে জোটাল কে?
প্রশাসন সূত্রের খবর, কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল থেকে মোবাইলে পুরোটা ‘অপারেট’ করছে মিঠু রানা নামে এক দাগি অপরাধী। তাকে সঙ্গ দিচ্ছে বাংলাদেশি রাজু নামে এক দুষ্কৃতীও। বাংলাদেশ থেকে এসে দুষ্কর্ম করে সে জেলে গিয়েছে। মূলত জামিনে ছাড়া পাওয়া দুষ্কৃতীদের দিয়ে মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত ছেলেদের দলে ভেড়াচ্ছে এই দুই পান্ডা। যাদের প্রায় সকলেরই বয়স কুড়ির আশপাশে।
চিকিৎসক ঐশ্বর্যদীপ ঘোষের ব্যাখ্যা, “ডাক্তারির পরিভাষায় এই প্রবণতাকে বলে ‘হাইপোম্যানিয়া’। এই সব শিক্ষিত কমবয়সীদের মধ্যে মোটরবাইকে চড়া বা মলে গিয়ে ভাল খাওয়া-দাওয়া করার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। বন্ধুরা তা পারলেও বাড়ির পরিস্থিতির কারণে তারা তা পেরে উঠছে না। এই ‘না পাওয়া’ থেকেই এক শ্রেণির অপরাধপ্রবণতার জন্ম হচ্ছে তরুণের মধ্যে।” এই সব তরুণদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা আছে? ঐশ্বর্ষবাবুর মতে, “অবশ্যই আছে। এরা তো সেই অর্থে সমাজবিরোধী নয়। সমাজের অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে এদের দেখা উচিত। অন্যথায় উল্টো ফল হবে।”
হুগলির দুঁদে পুলিশ অফিসারেরা জানাচ্ছেন, এই প্রবণতা গত কয়েক বছরে বেড়েছে। এক সময়ে হুগলির ত্রাস হুব্বাও শিক্ষিত ছেলেদের দলে টেনেছিল। কোন্নগরের এমনই একটি ছেলে তার হিসেবপত্র দেখত। দুষ্কৃতী দলের এক পান্ডার ব্যাখ্যা, এই ধরনের ছেলেদের দিয়ে ‘কাজ’ করানোর সুবিধা আছে। পেটে কিছুটা বিদ্যা থাকায় কখনই তারা মাথা গরম করে লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করে না। দলের আড়কাঠি যে নির্দেশ দেয় তা অক্ষরে-অক্ষরে পালান করে। সেখানে পাকা মাথার পেশাদারেরাও দুঃসাহসের চোটে বেশি ‘অ্যাকশন’ করে ফেলে। নিরীহ মানুষ আক্রান্ত হন। পুলিশি ঝামেলা বাড়ে।
সকলেই যে সরাসরি ডাকাতি করতে নেমে পড়ছে, তা কিন্তু নয়। পুলিশের খবর বলছে, প্রাথমিক খবর জুগিয়ে দুষ্কৃতীদের নানা কাজে সাহায্যও করছে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত কিছু শিক্ষিত ছেলে। কোনও-কোনও ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে তথ্য চেপে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ভেগে পড়ার রাস্তা সাফ করে দিচ্ছে। উত্তরপাড়ার পাশে মাখলার কিছু ছেলে এই ভাবে তাদের সাহায্য করেছে বলে ধৃতেরাই পুলিশকে জানিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.