বাইশ গজ ছাপিয়ে এ বার বাংলার বড় পিচে খেলতে চাইছেন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন। লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের কোনও কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে চাইছেন তিনি।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হতে চান আজহার। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় অন্য কোনও আসনে লড়লে জঙ্গিপুর কেন্দ্রে তাঁর প্রার্থী হওয়ার পথে বিশেষ বাধা থাকবে না। কিন্তু অভিজিতের কেন্দ্র বদল সম্ভব না হলে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট কেন্দ্রে প্রার্থী হতে চান ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আজ প্রকাশ্যেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন আজহার। স্বাভাবিক ভাবেই তার পর এ বিষয়ে আলোড়ন পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। যদিও সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক শাকিল অহমেদ খান আজ বলেন, “আজহারকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রার্থী করার ব্যাপারে এখনও কোনও আলোচনা হয়নি। তা ছাড়া জঙ্গিপুর-সহ যে সব কেন্দ্রে কংগ্রেসের বর্তমান সাংসদ রয়েছেন, সেখানে প্রার্থী বদলের প্রশ্ন নেই। প্রদেশ নির্বাচন কমিটি প্রার্থীদের যে প্রাথমিক তালিকা করেছে সেখানেও তাঁর নাম নেই।”
আজহার বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের সাংসদ। আদতে তিনি হায়দরাবাদের বাসিন্দা হলেও গত লোকসভা ভোটে রাহুল গাঁধী তাঁকে দক্ষিণ থেকে তুলে আনেন উত্তরে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মোরাদাবাদে বিপুল ভোটে জিতে যান তিনি। কিন্তু প্রাক্তন এই ক্রিকেট অধিনায়ক আর মোরাদাবাদে প্রার্থী হতে চান না। তিনি চাইছেন, উত্তরপ্রদেশের বাইরে অন্য কোনও রাজ্য থেকে ভোটে লড়তে। কারণ, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস এমনিতেই দুর্বল উইকেটে রয়েছে। তার ওপর সাংসদ হওয়ার পর মোরাদাবাদে আজহার বিশেষ সময় দেননি বলে ক্ষোভ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আজহারের রাজনৈতিক সম্পর্ক যে নেই তা নয়। অতীতে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৎকালীন সাংসদ ও মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্য প্রচারে গিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোটেও কংগ্রেস নেতৃত্ব আজহারকে প্রচারে নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রণববাবু তো বটেই বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে উপ নির্বাচনে মাত্র আড়াই হাজার ভোটে জিতেছিলেন অভিজিৎ। ভোটের ফল প্রকাশের দিনই অধীরবাবু সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে বলেছিলেন, এ বার যা হয়েছে হয়েছে। সামনের লোকসভা ভোটে জঙ্গিপুরে যেন কোনও সংখ্যালঘু নেতাকে টিকিট দেওয়া হয়। কারণ, সেখানে ৭০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে।
অনেকে মনে করছেন, আসলে অধীরবাবুই চাইছেন আজহারউদ্দিনকে জঙ্গিপুর থেকে প্রার্থী করতে। তা ছাড়া তিনি কোন নির্বাচন কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হতে চাইছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আজ আজহারও বলেন, “এই বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা শাকিল অহমেদ এবং অধীরদা ঠিক করবেন।” তবে তিনিই যে জঙ্গিপুর কেন্দ্র থেকে আজহারকে প্রার্থী করার জন্য দলে সওয়াল করছেন, এ কথা আজ মানতে চাননি অধীরবাবু। রেল প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আজহার কোন নির্বাচন কেন্দ্র থেকে লড়বেন তা বলে দেওয়ার আমি কে? কংগ্রেস হাইকম্যান্ড তা স্থির করবে।”
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, আসলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে লড়ার ব্যাপারে আজহার অনেক দিন ধরেই ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। অধীর চৌধুরী ও রাজ্যের অন্যান্য কংগ্রেস নেতার সঙ্গে আলোচনায় তিনি এই ইচ্ছা বার বারই প্রকাশ করেছেন। এমনকী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের আসন বদলের সম্ভাবনাও এখনও রয়েছে। সেই কারণে, প্রদেশ নির্বাচন কমিটি সব আসনে প্রার্থীর নাম সুপারিশ করলেও দার্জিলিং আসনটি ছেড়ে রেখেছে। তবে এখনই আজহার এই বিষয়টি প্রকাশ করে দিয়ে ঠিক করেননি বলে মনে করছেন অনেকে। কংগ্রেস সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, আজহার প্রকাশ্যে তাঁর ইচ্ছার কথা জানানোর পর কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের তরফে সতর্ক করা হয়েছে তাঁকে। এবং তার পরেই মুখে কার্যত কুলুপ এঁটেছেন তিনি। |