ব্রিগেডের মঞ্চে ওঠার আগেই আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রাথমিক প্রস্তুতি সেরে নিতে চাইছে আলিমুদ্দিন। চেষ্টা চলছে লোকসভায় দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকার প্রাথমিক বাছাই করার। সেই লক্ষ্যেই বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশের আগের বিকেলে রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকেছে সিপিএম। ব্রিগেডের কয়েক ঘণ্টা আগে যা সচরাচর হয় না।
বামফ্রন্টের মধ্যে লোকসভায় আসন বণ্টনের চলতি সূত্র অনুযায়ী, রাজ্যের ১০টি আসনে লড়ে বাম শরিকেরা। বাকি ৩২টি আসনে সিপিএমের প্রার্থী থাকে। এ বার অবশ্য ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিআই একটি করে বাড়তি আসনে লড়তে চাইছে। শরিকদের ওই দাবির ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনও ফয়সালা হয়নি। সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব চাইছেন, জেলা থেকে আসা আসনপিছু দু-তিনটি করে নামের ভিত্তিতে তাঁদের দলের সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করে ফেলতে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী মঙ্গলবারই ব্রিগেড সমাবেশ এবং লোকসভার প্রার্থী বাছাই নিয়ে এক প্রস্ত আলোচনা করেছে। বাকি আলোচনার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে বসছে রাজ্য কমিটির বৈঠক। সিপিএমের অন্দরে চেষ্টা চলছে বামফ্রন্টের পূর্ণাঙ্গ না হলেও লোকসভায় তাদের দলের প্রার্থীদের নাম ব্রিগেডের মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করে দেওয়ার।
সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, “বামফ্রন্টের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তৈরি করে ফেলা যাবে না। বামফ্রন্টের মধ্যে আসন বা প্রার্থী নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও আলোচনা হয়নি। জেলা নেতৃত্বের মতামত যাচাই করে আমাদের প্রার্থী ঠিক করার কাজ সেরে রাখতে চাইছি।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য কমিটিতে ইতিমধ্যেই লোকসভা ভোটের প্রার্থী ঠিক করার যে রূপরেখা গৃহীত হয়েছে, সেই অনুযায়ী, এ বার বিতর্কিত মুখ বাদ দিয়ে এলাকায় গ্রহণযোগ্য এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বেশ কিছু পুরনো প্রার্থীর এ বার বাদ পড়ার কথা। এখনও পর্যন্ত দলের অন্দরে যা আলোচনা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে রাজ্যের বেশ কয়েক জন প্রাক্তন মন্ত্রীর লোকসভা ভোটের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা। সিপিএমের মূল সূত্রই হচ্ছে, লোকসভার ময়দানে নতুন কিন্তু রাজনীতির আঙিনায় অনভিজ্ঞ নন, এমন প্রার্থীদের জায়গা করে দেওয়া। প্রার্থীদের গড় বয়স যেমন অন্য বারের তুলনায় কম রাখার চেষ্টা চলছে, তেমনই সরাসরি সিপিএমের মুখ নন কিন্তু বাম মনোভাবাপন্ন বা বাম-ঘনিষ্ঠ, এমন ক’জনকে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে।
কয়েক জন বাম প্রার্থীর কেন্দ্র অদল-বদল নিয়েও এ বার বামফ্রন্টের অন্দরে চর্চা চলছে। সিপিএমের এক প্রাক্তন সাংসদকে যেমন কলকাতার বদলে উত্তরবঙ্গ থেকে প্রার্থী করার চেষ্টা চলছে। তেমনই সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্তকে ঘাটালের বদলে বসিরহাটে প্রার্থী করার পক্ষপাতী দলের একাংশ। কিন্তু সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ চায়, মেদিনীপুর ও ঘাটাল কেন্দ্রে দুই বর্তমান সাংসদ প্রবোধ পণ্ডা ও গুরুদাসবাবু সেখান থেকেই এই সঙ্কটের সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুন। বড় জোর বসিরহাট আসনে গত বারের প্রার্থী বদলানো হোক। এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে সিপিআইয়ের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক। কলকাতায় দলের রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ১০ ফেব্রুয়ারি।
অন্য শরিকদের মধ্যে আরএসপি-র আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোহর তিরকি এ বারও প্রার্থী হতে পারেন। বালুরঘাট, বহরমপুর, জয়নগরে প্রার্থী বদলাতে চান দলীয় নেতৃত্ব। ফব পুরুলিয়ায় প্রার্থী করছে বর্তমান সাংসদ নরহরি মাহাতোকেই। বারাসত ও কোচবিহারে দাঁড়াবেন নতুন প্রার্থীরা। |