ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের টাকা দেওয়ার জন্য সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা বিক্রি করার এক্তিয়ার বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনের নেই বলে আগেই সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট বিভাগ (ইডি)। এ বার তাদের আইনজীবী জানিয়ে দিলেন, কেউ ওই কমিশনের কাছ থেকে সারদার কোনও সম্পত্তি কিনলে সেটাও হবে অবৈধ। সেই হাতবদল কোনও ভাবেই আইনসিদ্ধ হবে না। ইডি-র কৌঁসুলি সোমনাথ বসু সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে জানান, এমন কোনও কাজ হলে আইনের চোখে সেটা অপরাধ বলেই গণ্য হবে।
সোমনাথবাবু সওয়ালে বলেন, সারদা-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কোনও অধিকার সারদা কমিশনের নেই। ওই কমিশন সারদার সম্পত্তি বেচতেও পারবে না। সংশ্লিষ্ট আইনের এই অংশের উল্লেখ করে ইডি-কে নতুন আবেদন করার নির্দেশ দেন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়।
কমিশন সম্প্রতি সারদাদের চারটি টিভি চ্যানেল বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারদায় টাকা রেখে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, চ্যানেল বিক্রির টাকায় তাঁদের পাওনা মেটানোর ব্যবস্থা হবে। সেন কমিশন যে-ভাবে কাজ করছে, এ দিন ফের তার তীব্র সমালোচনা করেন ইডি-র আইনজীবী। তিনি বলেন, কমিশন যে-ভাবে সারদার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও বিক্রি করছে, তা এক কথায় অপরাধ। মানি লন্ডারিং আইনে এই কাজকে অপরাধ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিচারপতি প্রশ্ন করেন, কমিশন তাদের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছে বলে কি ইডি মনে করে?
সোমনাথবাবু বলেন, অবশ্যই। যা আইনত তারা করতে পারে না, সেই সব কাজই করে চলেছে ওই কমিশন। এই মামলার এক আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যও বলেন, সারা ভারতে এর কোনও নজির নেই। একটি বেসরকারি লগ্নি সংস্থাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য জনসাধারণের টাকা দান করছে রাজ্য সরকার!
বিচারপতির হাতে একটি নথি তুলে দিয়ে ইডি-র আইনজীবী বলেন, বিধাননগর কমিশনারেট তাঁদের তদন্তে সহায়তা করছে না। ইডি-র আলাদা তদন্তের অধিকার আছে। রাজ্যেরও আছে। ইডি-র তদন্তে অন্য সব রাজ্যই সহযোগিতা করে। ব্যতিক্রম হচ্ছে এখানেই। ইডি-র আইনজীবীর দেওয়া নথিটি খতিয়ে দেখার পরে বিচারপতি মন্তব্য করেন, এটা ঠিক কাজ নয়।
সওয়াল-জবাবের মধ্যেই মূল মামলার আবেদনকারিণী, আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরীর কৌঁসুলি সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, তিনি এই মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চান। কেন?
সুব্রতবাবু বলেন, তাঁর মক্কেল সারদা কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে মামলা করেছিলেন। সেই আর্জি এখন গভীর জলে। সব নথি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এর পরে সিবিআই তদন্ত করলেও প্রকৃত সত্যে পৌঁছনো কঠিন। কেন তাঁরা এই মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চান, নথি-সহ আজ, মঙ্গলবার আদালতে সেটা ব্যাখ্যা করবেন সুব্রতবাবু।
সারদা কাণ্ড নিয়ে এই মুহূর্তে হাইকোর্টে আরও একটি মামলা চলছে। অসংখ্য বেসরকারি লগ্নি সংস্থা আমানতকারীদের টাকা নয়ছয় করলেও কেন শুধু সারদার ক্ষেত্রে সরকার টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত নিল, তা নিয়ে সেই মামলাটিও করেছেন বাসবীদেবী। সেই মামলায় তাঁর কৌঁসুলি সুব্রতবাবুর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রাজ্যের হলফনামা তলব করেছে। ১৫ দিনের মধ্যে রাজ্যকে বক্তব্য জানাতে হবে।
|
