সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ওই সংস্থার তৈরি বাংলো ও ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা দিয়ে যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদেরও প্রাপ্য ফ্ল্যাট বা বাংলো দিতে উদ্যোগী হয়েছে কমিশন। ফ্ল্যাটের মালিকানা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন আবেদনকারীর তরফে কমিশনে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে।
কমিশন সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি বাংলো-ফ্ল্যাট বেচার জন্য বিভিন্ন আবেদনকারীর কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়েছিল সারদা সংস্থা। কিন্তু বাংলো বা ফ্ল্যাটের দামের ৬০ থেকে ৮০ ভাগ টাকা দিয়েও তার চাবি হাতে পাননি ক্রেতারা। সারদার ভরাডুবির পরে আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর জন্য সেন কমিশন গড়ে রাজ্য সরকার। টাকা জমা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত অসংখ্য মানুষের সঙ্গে সঙ্গে ওই সব ফ্ল্যাট ও বাংলোর মালিকানা চেয়ে ক্রেতারাও ওই কমিশনে আবেদন জানান। গত ১৩ জানুয়ারি কমিশন জানিয়ে দেয়, বকেয়া টাকা জমা দিলে ফ্ল্যাট বা বাংলোর মালিকানা তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনও কমিশনে হাজির হয়ে জানিয়ে দেন, ক্রেতারা বাকি টাকা জমা দিয়ে বাংলো বা ফ্ল্যাটের দখল নিতে পারেন। শুক্রবার সেন কমিশনে হাজির হয়ে ১৫ জন আবেদনকারী ফ্ল্যাট ও বাংলোর বকেয়া টাকা জমা দেন।
কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন জানান, ৩০ জানুয়ারি সারদা-প্রধান সুদীপ্তকে আবার কমিশনে হাজির করানো হবে। সারদা সংস্থার মালিক হিসেবে সুদীপ্তবাবু ওই সব ফ্ল্যাট বা বাংলোর দলিলে (ডিড অব সেল) স্বাক্ষর করবেন। তার পরেই ওই সম্পত্তি তুলে দেওয়া হবে ক্রেতাদের হাতে।
আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সারদা সংস্থার ব্রডকাস্ট ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বা বিডব্লিউডব্লিউ-এর চারটি বৈদ্যুতিন চ্যানেল নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছে কমিশন। কিন্তু এ দিন সেই চার চ্যানেল তারা মিউজিক, তারা নিউজ, তারা পঞ্জাবি ও টিভি সাউথ এশিয়া নিয়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়। সুদীপ্ত কমিশনে বলেছিলেন, তাঁদের চ্যানেলের লাইসেন্স-সহ সব নথি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেই লাইসেন্স তাদের কাছে আছে কি না, থাকলে তা পেশ করার জন্য বিধাননগর কমিশনারেটকে চিঠি লিখেছিল কমিশন। কিন্তু লাইসেন্সের নথি তাদের কাছে আছে কি না, তার স্পষ্ট জবাব দেয়নি পুলিশ। ক্ষুব্ধ কমিশন এই ব্যাপারে আবার চিঠি লিখছে ওই কমিশনারেটকে। তার জবাব না-আসা পর্যন্ত চ্যানেল নিলামে তোলার কাজ আটকে থাকছে।
সারদা কাণ্ডের চারটি মামলার শুনানির জন্য সুদীপ্ত এবং অন্যতম অভিযুক্ত কুণাল ঘোষকে এ দিন বিধাননগর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। চলতি মাসের গোড়ায় এর আগের হাজিরার দিন এজলাসের লক-আপে ওই দু’জনের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল। এ দিন কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনও কথা হয়নি।
এ দিন সকালে সুদীপ্তকে কোর্ট লক-আপে ঢোকানোর পরে তাঁর ক্ষিপ্ত আচরণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি চিৎকার করতে থাকেন। তদন্তকারী অফিসারেরা ছুটে যান। আদালত সূত্রের খবর, একটানা জেল ও পুলিশি হেফাজতে থাকার হতাশা এ দিন আর চেপে রাখতে পারেননি সারদা-প্রধান। তা নিয়েই তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে চলে চিৎকার। অন্যান্য মামলার সূত্রে আদালতে আসা লোকজন এবং আইনজীবীরা হতচকিত হয়ে পড়েন। আদালত থেকে বার করে নিয়ে যাওয়ার সময় সুদীপ্ত অবশ্য এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |