অবশেষে রইল বুদ্ধ-গৌতম জুটির কথাই। দলের অন্দরে একাংশের আপত্তি জয় করে রাজ্যসভায় ছাত্র-নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রার্থী করল সিপিএম। বর্ষীয়ান বা তথাকথিত ‘হেভিওয়েট’ নেতাদের বদলে সামনে আনা হল তরুণ মুখ। দল তাঁর নাম চূড়ান্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলের মিঠুন চক্রবর্তী, যোগেন চৌধুরী এবং কে ডি সিংহের মতো ঋতব্রতেরও সাংসদ হওয়া নিশ্চিত হয়ে গেল। এখন ভোটের সম্ভাবনা পঞ্চম আসনটিতে।
এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রতর নির্বাচন নিয়ে গত কয়েক দিনে কম জলঘোলা হয়নি। এখনই তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানো উচিত হবে না বলে বেঁকে বসেছিলেন সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। কিন্তু নতুন ও তরুণ মুখের পক্ষে দাঁড়ান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব। দিল্লি থেকে তাঁদের পাশে ছিলেন সংসদীয় দলনেতা সীতারাম ইয়েচুরি। কাজ যদিও সহজ ছিল না। কোনও নামে ঐকমত্য হচ্ছে না বলে শুক্রবার সকালেও দিল্লিতে ফোন করে পলিটব্যুরোর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট-সহ দিল্লিতে উপস্থিত পলিটব্যুরো সদস্যরা অবশ্য মতামত দেননি। কারণ, সিদ্ধান্তের ভার আগেই আলিমুদ্দিনের উপরে ছাড়া হয়েছিল। অচলাবস্থা রেখেই বীরভূমে দলের কাজে চলে যান বিমানবাবু। রাতে তিনি ফেরার পরে বুদ্ধবাবুর তৎপরতাতে বরফ গলে। শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়, সিপিএমের প্রার্থী ঋতব্রতই।
সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, রাজ্যসভায় যাওয়ার পরে এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব হয়তো ছেড়ে দিতে হবে ঋতব্রতকে। প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি এ দিন কোনও মন্তব্য করেননি। তবে দলের অন্দরে তাঁর বক্তব্য, বয়ঃজ্যেষ্ঠ নেতাদের পরামর্শ মেনেই ভবিষ্যতে পথ চলার চেষ্টা করবেন। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ছাত্র, ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ঋতব্রত ২০০৫ সাল থেকেই ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় দায়িত্বে দিল্লিতে। এ বার থেকে সংসদে ‘টিম সীতারামে’র অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছেন তিনি!
অতীতে নীলোৎপল বসু, নেপালদেব ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ী বা ব্রতীন সেনগুপ্তের মতো সিপিএমের সর্বভারতীয় ছাত্র-নেতাদের অনেকেই সংসদে গিয়েছেন। তবে তাঁদের কাউকে নিয়েই এ বারের মতো টানাপোড়েন চলেনি। বুদ্ধবাবুর হস্তক্ষেপেই শেষ পর্যন্ত এ দিন দলের অন্য নেতাদের বোঝানো হয়েছে, নতুন মুখ তুলে আনার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না। মেনে নিয়েছেন বিমানবাবুও। আলিমুদ্দিনের সিদ্ধান্তে আশ্বস্ত ইয়েচুরিও মনে করছেন, “ঋতব্রতকে মনোনয়ন দেওয়ায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আমাদের দল সম্পর্কে ভাল বার্তা যাবে।” একই সঙ্গে দলের প্রবীণ নেতাদের একাংশের মত, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বা জ্যোর্তিময় বসুর মতো সাংসদ কমিউনিস্টরা আর পাননি। পরবর্তী কালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন দক্ষ সাংসদ। পারফরম্যান্সে সক্রিয় ছিলেন মহম্মদ সেলিমও। বামেদের সঙ্কটের সময়ে অনভিজ্ঞ ঋতব্রতকে দ্রুত শিখতে হবে। |