সব থেকে ‘আন সেফ’ জায়গা কোনটা?
কাল বিলম্ব না করে এক ঝাঁক ছাত্রছাত্রী সমস্বরে জানাল ‘জেলা শাসকের অফিস চত্বর এবং সংলগ্ন কাছারি ময়দান’।
উত্তরটা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা থেকে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের।
আর এই সব কথাতেই ফের উস্কে উঠল ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির রাতের স্মৃতি। যে দিন ওই জেলাশাসক চত্বর ও কাছারি ময়দান এলাকাতেই দিদির সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে তিন দুষ্কৃতীর হাতে খুন হতে হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাসকে। তবে শেষটা সেখানেই হয়নি। এর পর থেকেই বিভিন্ন অপরাধ, বিশেষ করে মহিলা নির্যাতনের ঘটনায় বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত, মধ্যমগ্রামের নাম। যার সম্প্রতি সংযোজন কামদুনি, মধ্যমগ্রাম গণধর্ষণকাণ্ড।
সেই সমস্ত অপরাধ রুখতে সোমবার এক আলোচনা সভায় উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী-সহ প্রশাসনের কর্তারা। আর সেই আলোচনা সভার প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রায় বছর তিনেক পরেও সবার প্রথমে উঠে এল সেই জেলাশাসকের অফিস চত্বরের কথা।
যদিও রাজীব হত্যাকাণ্ডের পরে ওই এলাকার কয়েকটি জায়গায় আলো লাগানো হয়েছে। পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করতেই এক ছাত্রীর প্রশ্ন ‘যেখানে আলো সেখানেই পুলিশ। আর যেখানে অন্ধকার সেখানে পুলিশ থাকে না কেন?’ ছাত্রীটির ওই প্রশ্ন শুনে তেমন কোনও উত্তর না দিয়ে শুধু ওই এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা নোট করেন পুলিশ কর্তারা।
শুধু বারাসতই নয়। মধ্যমগ্রাম, হাবড়াতেও ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি-সহ বিভিন্ন অপরাধ রুখতে এলাকার বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে এ রকমই প্রশ্নোত্তর পর্বের আয়োজন করছে পুলিশ-প্রশাসন। যেখানে পড়ুয়াদের থেকে খাদ্যমন্ত্রীকে শুনতে হয়েছে ‘ধর্ষণের পরে তাঁর পরিবারের হাতে শুধু রেশন কার্ড তুলে দিলে কী হবে’ এর মতো মন্তব্যও।
এ দিনও ছাত্র-ছাত্রীরা পুলিশ সুপার ও খাদ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, এলাকায় অনেক রাত পর্যন্ত মদের দোকান খোলা থাকে। বিভিন্ন জায়গাতেই মদের কালোবাজারি হচ্ছে। পানশালা থেকে পুলিশ এমনকী বিশিষ্ট লোকজনদের অসংলগ্ন অবস্থায় বেরতে দেখা যায়। পড়ুয়ারা প্রশ্ন করেন, ‘এগুলি বন্ধ করতে কি পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেবে না?’
উত্তরে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “মদের বিষয়টি প্রশাসন দেখছে।” তবে এই ধরনের আলোচনা সভা করে কোথায় কী ঘাটতি থাকছে তা আগাম জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায় বলেই দাবি করেন মন্ত্রী। ব্রতচারী কিংবা শারীরশিক্ষার মতো আত্মরক্ষার শিক্ষাও স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে এ দিন কামদুনি সংলগ্ন এলাকার একটি স্কুলের এক শিক্ষিকা প্রশ্ন তোলেন। তাতে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর মন্তব্য: “শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেওয়া হবে।”
মহিলা নির্যাতন রোখার উপায় এবং মহিলাদের স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়েও এ দিন বক্তব্য রাখেন কাকলিদেবী। তিনি জানান, স্কুলেই যাতে মেয়েরা শরীরচর্চা করতে পারে সে জন্য মধ্যমগ্রামের এপিসি স্কুলে সাংসদ তহবিল থেকে তৈরি একটি মাল্টিজিমের এ দিনই উদ্বোধন করা হয়েছে। আলোচনা সভা থেকে বেরিয়ে এক ছাত্রী বললেন, “এ ভাবে আগে কেউ আলোচনা করেননি। পুলিশ ও নেতাদের মুখোমুখি বসে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পেরে ভাল লাগছে। ওঁদের থেকে আশ্বাস পেয়ে কিছুটা হলেও মনে সাহস পাচ্ছি।” |