সিপিএম কর্মী লিয়াকত মিদ্যাকে খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা নব পাল আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন। সোমবার বিষ্ণুপুর আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। বিচারক তাঁর জামিন নাকচ করে ১২ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এ পর্যন্ত ওই খুনের ঘটনায় তৃণমূলের ২০ জন ধরা পড়লেন। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “লিয়াকত মিদ্যা খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত নব পালের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। ওই ব্যক্তি যে এ দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন সেই খবর আগাম আমাদের কাছে ছিল না। ওই মামলায় অভিযুক্তদের অধিকাংশকেই ধরা হয়েছে।”
২০১২ সালের ১৮ অগস্ট পাত্রসায়র থানার কাঁটাদিঘি গ্রামের বাসিন্দা সিপিএম কর্মী লিয়াকত মিদ্যাকে পাত্রসায়র বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়, নব পাল-সহ দলের প্রথম সারির ২৪ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। সম্প্রতি ওই ঘটনায় আদালতে পুলিশের তরফে যে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে, তাতে অভিযুক্তদের তালিকা থেকে স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়-সহ তিন জন তৃণমূল কর্মীর নাম বাদ দেওয়া হয়। তবে ওই চার্জশিটে প্রধান অভিযুক্তদের তালিকায় তৃণমূল নেতা নব পাল-সহ ২১ জনের নাম রয়েছে।
গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই সিপিএম এবং তৃণমূলের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পাত্রসায়র এলাকা। দু’দলের তিন জন করে মোট ছ’জন কর্মী খুন হন। আহতের সংখ্যা প্রচুর। পাত্রসায়রের বামিরা গ্রামের বাসিন্দা তৃণমূল নেতা নব পালের বিরুদ্ধে সিপিএমের কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট, মারধর, তোলাবাজির পাশাপাশি সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিপিএম কর্মী জলধর বাগদি, লিয়াকত মিদ্যাকে খুন-সহ ৫০ টির বেশি মামলায় অভিযোগ রয়েছে নববাবুর বিরুদ্ধে। তারন মধ্যে অধিকাংশ মামলায় জামিন পেয়েছেন এই নেতা। পুলিশ অবশ্য তাঁকে কোনওদিনই ধরেনি। এক সময় তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন নববাবু। গত এক বছর ধরে তাঁর সঙ্গে স্নেহেশবাবুর দূরত্ব বেড়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন নববাবু। কিন্তু স্নেহেশবাবু তাঁকে প্রতীক না দেওয়ায় প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশবাবু এ দিন বলেন, “সিপিএম আমাকে এবং আমাদের দলের বহু কর্মীর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আইনের প্রতি সম্মান জানিয়েই আমাদের দলের কর্মীরা আত্মসমর্পণ করছেন।” নববাবুর আইনজীবী মহাদেব দে দাবি করেন, “ঘটনার সময় এলাকায় আমার মক্কেল ছিলেন না। তা সত্ত্বেও সিপিএম তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।”
|