মন্দির সংস্কারের কাজ দেখতে গিয়ে উঁচু থেকে পড়ে মৃত্যু হল পুরোহিতের। আর তা দেখে শিলের নোড়া মাথায় মেরে আত্মঘাতী হলেন পুরোহিতের স্ত্রী। রবিবার রবিবারের বিকেলে.বলরামপুরে, পুরুলিয়া-জামসেদপুর জাতীয় সড়ক লাগোয়া কালীতলা এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দম্পতির নাম দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় (৫০) ও পম্পা বন্দ্যোপাধ্যায় (৪৫)। ওই এলাকাতেই তাঁদের বাড়ি। স্বামী-স্ত্রী’র এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক নেমেছে এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপকবাবু এলাকার একটি প্রাচীন কালী মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন। ওই মন্দিরের নামানুসারেই এলাকার নাম হয়েছে কালীতলা। বংশ পরম্পরায় তাঁদের পরিবার ওই মন্দিরে পুজো-অর্চনা করেন। মন্দির কমিটির সম্পাদক ধীরেন কুমারের দাবি, “মন্দিরের ছাদে সংস্কারের কাজ চলছিল। রবিবার বিকেলে কাজ দেখতে ছাদে উঠেছিলেন দীপকবাবু। হঠাৎ তিনি কোনও ভাবে ছাদের ধারে চলে যান। হয়তো অসাবধানতায় তিনি সেখান থেকে প্রায় ২০ ফুট নীচের চাতালে পড়েন।” পুরোহিতের এই আহত হওয়ার খবর পেয়েই এলাকার লোকজন সেখানে ছুটে যান। তাঁরা দেখেন চাতালে পুরোহিত পড়ে রয়েছেন। চারপাশে রক্ত।
মন্দিরের পাশেই ওই পুরোহিতের বাড়ি। বাইরে গোলমাল শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী পম্পাদেবী। তিনি দেখেন স্বামী রক্তাত্ত্ব অবস্থায় মন্দিরের চাতালে পড়ে আছেন। ধীরেনবাবু জানান, সবাই যখন পুরোহিতকে নিয়ে ব্যস্ত, তখন সবার অগোচরে তাঁর স্ত্রী সেই দৃশ্য সহ্য না করতে পেরে বাড়িতে ঢুকে শিলের নোড়া দিয়ে নিজের মাথায় জোরে আঘাত করেন। প্রথমে বাসিন্দারা পুরোহিতকে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। পরে তাঁর স্ত্রীকে বাড়ির ভিতরে রক্তাত্ত্ব অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পড়শি তাঁকেও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন কুমারের কথায়, “আমরা তখন পুরোহিতকে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ব্যস্ত। সেখানেই শুনি তাঁর স্ত্রীকেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। এমন ঘটনায় সবাই মর্মাহত।” চিকিৎসকেরা দু’জনকেই মৃত বলে জানান।
ঘটনার খবর পেয়ে মন্দির চত্বরে যান বলরামপুর থানার ওসি দীপঙ্কর সরকার। তিনিও বলেন, “পুরোহিতের শোকে তাঁর স্ত্রী নিজের মাথায় নোড়া দিয়ে আঘাত করেছিলেন বলে শুনেছি। দু’টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।” সোমবার ময়না তদন্তের পরে দু’জনের দেহ বলরামপুরের হনুমাতা নদীর শ্মশানঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। পাশাপাশি চিতায় তাঁদের দাহ করা হয়। শ্মশানে প্রায় পুরো বলরামপুর উপস্থিত ছিল। |