বীরভূমে সাগর ঘোষ হত্যা মামলায় সিআইডি আদৌ কোনও তদন্ত করছে কি না, সেটা তাঁরা বুঝতে পারছেন না বলে অনুযোগ করেছিলেন নিহতের ছেলে। পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী সিআইডি ঠিক ভাবে ওই তদন্ত করছে কি না, কলকাতা হাইকোর্টও সোমবার সেই প্রশ্ন তুলেছে। কোর্ট জানিয়েছে, সরকারি আইনজীবীর কাছ থেকে তারা এর জবাব চায় না। সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারকেই হাইকোর্টে হাজির হয়ে এর জবাব দিতে হবে।
সাগরবাবুর পরিবার প্রথমে জেলা পুলিশের তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় হাইকোর্ট তদন্তভার দিয়েছিল সিআইডি-কে। কিন্তু সিআইডি-ও ঠিক ভাবে সেই তদন্ত করছে না বলে অভিযোগ তোলেন নিহতের ছেলে, বীরভূমের তৃণমূল নেতা হৃদয় ঘোষ। সিআইডি-র ঢিমেতেতালা কাজ দেখে উচ্চ আদালতও শুক্রবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। কেন খুনের ঘটনার দুই প্রত্যক্ষদর্শী, সাগরবাবুর স্ত্রী ও বৌমার বয়ান নেওয়া হয়নি, তার ব্যাখ্যা তলব করেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। তিনি নির্দেশ দেন, সিআইডি-র তদন্তকারীকে আদালতে এসে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। সোমবার ওই তদন্তকারীর কোর্টে হাজির হওয়ার কথা ছিল।
এ দিন সকালে বিচারপতি দত্তের এজলাসে প্রথমেই সাগর-হত্যার মামলাটি ওঠে। কিন্তু সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার আদালতে ছিলেন না। বিচারপতি সরকারি আইনজীবী শাক্য সেনকে জিজ্ঞাসা করেন, “তদন্তকারী সিআইডি অফিসার কোথায়?” শাক্যবাবু বলেন, “উনি বোধ হয় কোথাও কাজে আটকে গিয়েছেন। ওঁকে হাজির হওয়ার জন্য সাত দিন সময় দিন।” শুনেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, “আমি সিআইডি অফিসারের কথা শুনতে চাই। সরকারি কৌঁসুলির কথা নয়। ১০ মিনিট সময় দিচ্ছি। ওঁকে হাজির করুন।”
বেলা ১টায় ফের মামলাটি উঠলে দেখা যায়, সিআইডি-র তদন্তকারী তখনও আসেননি। সরকারি কৌঁসুলি বলেন, আসলে জেলা থেকে সিআইডি-র হাতে নথিপত্র দিতে কিছু সময় লেগেছে। সেই জন্য নিহতের স্ত্রী ও বৌমার বয়ান নেওয়া হয়নি। বিচারপতি বলেন, “আমি আপনার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই না। ঘটনার পরে ছ’মাস কেটে গিয়েছে। পুলিশ এর মধ্যে দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বিবৃতি নেওয়ার সময় পেল না! কেন এই বিলম্ব, তার ব্যাখ্যা আমি তদন্তকারীর মুখ থেকেই শুনব। আর কারও কাছ থেকে নয়।” বিচারপতি জানিয়ে দেন, তদন্তকারী অফিসারকে ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় আদালতে হাজির হতেই হবে।
এই মামলায় তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে শুক্রবার হাইকোর্টে রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল সিআইডি-র। কিন্তু সিআইডি রিপোর্ট না-দিয়ে সময় চায়। ক্ষুব্ধ আদালত সময় মঞ্জুরের আবেদন খারিজ করে দেয়। তদন্তকারীকে তলব করেন বিচারপতি দত্ত। এই মামলার এফআইআরে মূল অভিযুক্ত হিসেবে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের নাম রয়েছে। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তারা থানায় যে-অভিযোগ দায়ের করেছে, পুলিশ সেটাকে আমলই দিচ্ছে না।
তৃণমূল নেতা হৃদয়বাবু বিক্ষুব্ধ প্রার্থী হিসেবে পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নপত্র পেশ করেন। ভোটের আগের দিন তাঁর বাবা সাগরবাবুকে খুন করা হয়। কারা খুনের সময় হাজির ছিলেন, তাঁর স্ত্রী ও বৌমা হাইকোর্টে তা জানান। তাঁরা বলেন, পুলিশ তাঁদের দিয়ে একটি সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়ে পরে তাতে এফআইআর লিখেছিল। পরে সাগরবাবুর পরিবার নতুন এফআইআর করেন। তাতে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে মূল অভিযুক্ত করা হয়। বিচারপতি বীরভূম জেলা পুলিশের হাত থেকে তদন্তের দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে সিআইডি-কে সেই দায়িত্ব দেন।
কিন্তু সিআইডি-ও যথাযথ তদন্ত করছে কি না, প্রশ্ন তুলল কোর্টই।
|