নির্যাতিতার নতুন বাড়ি তৈরি ঘিরে বিতর্ক
নির্যাতিতার ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর মামার বাড়িতেই পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিল প্রশাসন। সুবলপুর গ্রাম থেকে কিলোমিটার পাঁচেক থেকে চৌহাট্টা-মহোদরী ১ পঞ্চায়েতেরই টালিপাড়া গ্রামে শুক্রবার থেকেই ইন্দিরা আবাসন ও অন্য একটি প্রকল্পে দু’টি বাড়ি তৈরির জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। কিন্তু ওই বাড়ি তৈরিকে কেন্দ্র করেই স্থানীয় জনমানসে বিক্ষোভ ও বিতর্ক দানা বেঁধেছে। যার জেরে প্রশাসনকে শনিবার এক দিন কাজ বন্ধ করে পিছিয়ে আসতে হয় বলে অভিযোগ। তবে, রবিবার থেকে অবশ্য ফের নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে সেই কাজ।
রবিবার দুপুর ২টো নাগাদ সিউড়ি-কাটোয়া রাজ্য সড়ক লাগোয়া টালিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল রীতিমতো তাঁবু খাটিয়ে বাড়ির তৈরির কাজ চলছে। এক দিকে বসছে নতুন টিউবওয়েল। অন্য দিকে, ডাঁই করা রয়েছে সিমেন্ট, বালি, ইট। গাঁথনির কাজ চলছে জোরকদমে। মিস্ত্রিরা জানালেন, প্রশাসনের নির্দেশ যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে হবে। এ জন্য দিনরাত এক করে আমরা পড়ে রয়েছি। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় সেখানে বসে রয়েছেন তিন জন কমব্যাট ফোর্সের কর্মী। মাঝে মধ্যে চক্কর মেরে যাচ্ছে পুলিশের টহলদার ভ্যানও। কাজ দেখভাল করছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক মৃদুল দাস।
চৌহাট্টা সংলগ্ন টালিপাড়া গ্রামে তৈরি হচ্ছে নির্যাতিতার বাড়ি। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
ওই বাড়ি নির্মাণকে ঘিরেই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। নিয়ম অনুযায়ী ইন্দিরা আবাসন বা ওই জাতীয় কোনও সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য উপভোক্তার নিজের নামে কোনও পতিত জমি, পাট্টা পাওয়া খাস জমি, দানপত্র বা কেনার দলিল থাকা আবশ্যক। তা না হলে পরবর্তী কালে সরকারি অনুদানে নির্মিত বাড়ি থেকে উপভোক্তার উচ্ছেদ বা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওই বিষয়টি বিবেচনাই করা হয়নি বলে প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় ১৫ কাঠার সেই জমিটির আসল মালিক নির্যাতিতার মামারা। ওই জমিটি নির্যাতিতা তরুণীর নামে হস্তান্তরের কোনও ব্যবস্থা না করেই প্রশাসন বাড়ি তৈরি শুরু করে দিয়েছে বলে তাঁরা জানান। নির্যাতিতার দুই মামার দেখা না মিললেও তাঁর এক মামি বলেন, “ওই তরুণীর এখানে বাড়ি করা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা অংশের নানা কারণে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তা সত্ত্বেও প্রশাসন আমাদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই ওখানে বাড়ি তৈরি শুরু করে দিয়েছে। আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।”
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চৌহাট্টা-মহোদরী ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শেখ ফিরোজের সঙ্গে বারবার ফোনে যোগাযোগ করার পরে তিনি বললেন, “কেন জ্বালাচ্ছেন? এ রকম করলে আপনি আমার স্ত্রীকে যা তা বলেছেন এই অভিযোগ করে পুলিশে ফাঁসিয়ে দেব।” সংশ্লিষ্ট লাভপুর ব্লকের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাসের অবশ্য দাবি, “ওখানে নিজ গৃহ নিজ ভূমি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি হচ্ছে। যাঁরা আপত্তি তুলছেন, তাঁরা ওই তরুণীর আপন নন, সম্পর্কিত মামা। জমিটি তরুণীর দাদুর (মায়ের বাবা) নামে। তরুণীর মা বলেছেন, সেখানে ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরিতে কোনও অসুবিধা নেই। নির্যাতিতার ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর পাশে দাঁড়াতেই ওই বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” যদিও ওই কাজের নির্মাণ সহায়ক মৃদুলবাবু বলছেন, বলেন, “এই জমিতে মোট দু’টি বাড়ি হবে। একটি নির্যাতিতা তরুণী ও তাঁর মায়ের জন্য ইন্দিরা আবাসনের বাড়ি। অন্যটি তাঁর দাদা-বউদিদের জন্য মৎস্য দফতরের উদ্যোগে বাড়ি।”
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, শনিবার হাসপাতালে দেখা করার সময়ে বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনাকে নির্যাতিতার মা জানিয়েছিলেন, পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ওই জমিতে তাঁর বেশ কিছুটা ভাগ রয়েছে। সেখানেই নির্যাতিতার জন্য বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। এ দিকে জেলা প্রশাসনেরই এক কর্তার আবার দাবি, “ওই জমিটি সরকারি খাস জমি, নিজ গৃহ নিজ ভূমি প্রকল্পে ৫ শতক জায়গা নির্যাতিতা তরুণীর মাকে দেওয়া হয়েছে। গৃহ নির্মাণের জন্য ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। ভাল শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
এ নিয়ে জেলাশাসকের সাফ জবাব, “ওই বাড়ি নির্মাণে কোনও বিতর্ক নেই। কারণ, নির্যাতিতার মায়ের পরিবারের নামে ওই জমি। সেখানে বাড়ি তৈরি করার সম্মতিও প্রশাসন পেয়েছে।” যদিও প্রশ্ন উঠছে, যাঁর জন্য বাড়ি, তার নামে না থাকলে ভবিষ্যতে ওই বাড়ির মালিকানা নিয়ে যে কোনও আইনি জটিলতা তৈরি হবে না, তার নিশ্চিয়তা কোথায়?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.