কলেজ ফান্ডের টাকা তছরুপের অভিযোগে রামপুরহাট কলেজের প্রাক্তন দুই অধ্যক্ষ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলেন কলেজের প্রশাসক আব্দুল মকিদ। রবিবার রাতে রামপুরহাট থানায় তিনি ওই অভিযোগপত্রে কলেজের চার বর্তমান শিক্ষক, এক প্রাক্তন শিক্ষক-সহ কয়েকজন কর্মীর নামও রেখেছেন।
আব্দুল মকিদের দাবি, “২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত কলেজ ফান্ডের প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা তছরুপ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে, উচ্চ শিক্ষা দফতরের ‘ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন’-এর তদন্তে এবং ক্যাগের রিপোর্টেও তা প্রমাণিত হয়েছে। সরকারি নিয়ম মেনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছি।” পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।
রামপুরহাট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়দেব পানের পাল্টা দাবি, “কলেজের উন্নয়নমূলক কাজে ঠিকাদারদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। কিন্তু কোনওরকম আর্থিক দুর্নীতি ক্যাগের রিপোর্ট বা অন্য তদন্তে রিপোর্টে পাওয়া যায় নি।” তিনি আব্দুল মকিদের বিরুদ্ধে পাল্টা কলেজের উন্নয়নমূলক কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
আবুল মকিদের অভিযোগ, ২০০৬-’০৭ সালে কলেজ পরিচালন কমিটির সদস্য থাকাকালীন তিনি কলেজের বিভিন্ন কাজে আর্থিক বেনিয়ম নিয়ে মৌখিক অভিযোগ জানালেও তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ তাতে আমল দেয় নি। পরে কলেজের টিচার-ইনচার্জ থাকাকালীন উচ্চশিক্ষা দফতরের ডাইরেক্টর অব পাবলিক ইন্সট্রাক্টর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির নজরে আনা হয়। তাঁর দাবি, ২০০৭-’০৮ সালে কলেজ ফান্ডের ১ লক্ষ ৮১ হাজার ৪৯৫ টাকার হদিস পাওয়া যায় নি। পরে জানা যায়, ওই টাকা নগদ টাকা হিসাবে ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে অনেকে নিয়েছেন। পরে নতুন ক্যাশবই তৈরি করে কারচুপি করা হয়। সম্প্রতি কলেজ ফান্ডে ৭৪ হাজার টাকা কে জমা দিয়েছেন। কী ভাবে ওই টাকা এল তার উল্লেখ কলেজের হিসাবের খাতায় নেই। এ ছাড়া কলেজ ফাণ্ডের ১৩ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা সন্দেহজনক খরচ করা হয়েছে। আব্দুল মকিদের প্রশ্ন, “কলেজ পরিচালন কমিটির অনুমোদন ছাড়া কলেজের অধ্যক্ষ কী করে অন্য একজনকে চেক দিতে পারেন?” এনএসএস প্রকল্পে, এনসিসি এবং কলেজে ভর্তি ফি সংক্রান্ত নানা আর্থিক বেনিয়ম হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ তুলেছেন।
কলেজের এক প্রাক্তন অধ্যক্ষ আবুল খায়ের দাবি করেছেন, “ওই অভিযোগের কোনও সার বস্তু নেই। তিনি ব্যক্তি স্বার্থে আমার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।” তাঁর প্রশ্ন, “বিষয়টি যখন উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের বিবেচনাধীন তখন তিনি কী করে এই সময় থানায় অভিযোগ করলেন?” উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের পরিষদীয় সচিব তথা রামপুরহাট কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কলেজে আর্থিক বেনিয়ম অভিযোগের তদন্ত চলছে। তার বেশি কিছু জানি না।” |