আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের সভায় মোড়লের পাশে প্রতিনিধিরা
লাভপুর নির্যাতন কাণ্ডে আদিবাসী তরুণীর সঙ্গে যা ঘটেছে, তা নিন্দনীয়। কিন্তু তার জন্য গ্রামের মোড়ল বলাই মাড্ডি, কিংবা গ্রামের বাসিন্দাদের দায়ী করতে রাজি নয় আদিবাসী সমাজ। রবিবার আদিবাসী ছাত্র সংগঠন আয়োজিত ‘ভারত জাকাত সাঁওতাল পাথুয়া গাঁওতা’ সভায় নানা জেলা থেকে আসা আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করলেন, মীমাংসাপত্রে মোড়লের সই না-থাকায়, বিচারের জন্য তাঁকে দায়ী করা চলে না।
রবিবার মহম্মদবাজারের আঙ্গারগড়িয়া হাইস্কুলের সভাকক্ষে ওই বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন ছাত্র নেতা ঘাসিরাম হেমব্রম, বদি মুর্মু, মূল সংগঠনের নেতা ওপেল মাড্ডি, রাম মাড্ডি, হাপন মুর্মু, নদিয়ার লোকেশ্বর মুর্মু, বর্ধমানের পৃথ্বী মুর্মু, হুগলির রাবন দাস হেমব্রম, দুমকার বিনোদ সরেন-সহ প্রায় ৫৫ জন প্রতিনিধি এসেছিলেন। দুপুর দেড়টা থেকে সভা চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। কোনও জেলা থেকেই কোনও মহিলা প্রতিনিধি অবশ্য উপস্থিত ছিলেন না। বিতর্কটি ধর্ষণকে কেন্দ্র করে হলেও, এদিন কথা বলেন কেবল পুরুষরাই।
আদিবাসী সমাজ ‘ভারত জাকাত মাঝি মাড়োয়া’-র সর্বোচ্চ নেতা দিশম মাঝি নিত্যানন্দ হেমব্রম সোমবার দাবি করেন, বলাই মাড্ডি ছিলেন কেবল সাক্ষী বা দর্শকের ভূমিকায়। বিচারের পর লিখিত চুক্তিতে যাঁরা সই করেছেন তাঁরা আদিবাসী নন, রাজনৈতিক দলের সদস্য। তাই বিচারের দায় বলাই মাড্ডির উপর চাপানো চলে না, বলেন তিনি। তাঁর দাবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সালিশি সভা বসিয়েই থাকে। তাতে বিচার করে জরিমানা বা শাস্তি ধার্য হয়। তাই বিষয়টিকে কেবল আদিবাসী সমাজের রীতি বলে দেখা চলে না।
ভিনসম্প্রদায়ের পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য গ্রামবাসীর ওই তরুণীর প্রতি ক্ষোভের মধ্যে অবশ্য নিত্যানন্দ হেমব্রম আপত্তিকর কিছু দেখছেন না। তাঁর বক্তব্য, “শহরেও এমন সম্পর্ক কেউ মেনে নেবে না। গ্রামে কী করে সহ্য করবে?” গণধর্ষণের বিষয়ে ওই তরুণীর অভিযোগের বয়ানে নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন তিনি। কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে মেয়েটি ওই অভিযোগ করেছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে, বলেন তিনি।
রবিবার সভার শুরুতেই উপস্থিত প্রত্যেকের হাতে লাভপুরের সুবলপুরের সালিশি সভার মীমাংসাপত্রের প্রতিলিপি তুলে দেওয়া হয়। সাঁইথিয়ার নানুবাজার এলাকার নেতা জেটু মুর্মু বলেন, “মীমাংসাপত্রে মাঝি হাড়াম বা অন্য অভিযুক্তদের সই নেই। প্রথম পক্ষ গ্রামবাসী ও দ্বিতীয় পক্ষ চৌহাট্টা গ্রামের ওই যুবক। দ্বিতীয় পক্ষের হয়ে ওই যুবক ও তাঁর দাদা এবং অজয় মণ্ডল নামে এক পঞ্চায়েত সদস্যের সই আছে। আর এক জন স্বাক্ষরকারীর নাম বোঝা যাচ্ছে না। পদবি হল মুখোপাধ্যায়।” এর পরেই একে একে বলাই মাড্ডির সমর্থনে বক্তব্য রাখেন নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি ও দুমকা থেকে আসা প্রতিনিধিরা। সকলেই এর বিহিত চান।
ওই দিনের সভার সভাপতি ওপেল মাড্ডি বলেন, “লাভপুরের ঘটনায় গোটা বিশ্বের কাছে আমাদের ছোট করে দেওয়া হয়েছে। এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক চক্রান্ত থাকতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “ওই মেয়েটির সঙ্গে যা ঘটেছে অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমাদের সংস্কৃতি বা সমাজ ব্যবস্থায় কখনওই এ ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। মেয়েটি যাতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারে আমরা সে চেষ্টা করব। ওই গ্রামে ফের যাব। আমরা চাই না, ওই মেয়েটিকে নিয়ে কোনও রকম রাজনীতি হোক।”
একই অবস্থান নিয়েছে বীরভূম আদিবাসী গাঁওতা। গাঁওতা নেতা সুনীল সোরেন ও রবীন সোরেনদেরও বক্তব্য, মাঝি হাড়ামরা একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আর যদি নিয়ে থাকেন, তার দায় মোড়লের নিজের। এর জন্য সব মাঝি হাড়াম দায়ী নয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.