ফোনে আলাপ হওয়ার পর থেকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিলেন মহিলা। মুর্শিদাবাদ থেকে কাটোয়া এসে বিয়ে করার জন্য জোরাজুরি করছিলেন। এমনকী, বিয়ে না করলে পুলিশে জানানোর ভয়ও দেখাচ্ছিলেন। তাই ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে সে। সর্ষেখেতে মহিলার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ধৃত যুবক জেরায় এ কথা জানিয়েছে, দাবি পুলিশের।
গত ১৬ জানুয়ারি কাটোয়ায় সিপাইদিঘি মোড়ের কাছে মুর্শিদাবাদের লালবাগের ওই মহিলা সাবিনা বিবির দেহের পাশে বসে কাঁদছিল তাঁর বছর পাঁচেকের ছেলে। পুলিশকে সে জানায়, ট্রেনে করে মায়ের সঙ্গে কাটোয়া পৌঁছেছিল সে। তার পরে বাসে চড়ে একটি জায়গায় যায়। সঙ্গে ছিল এক ‘কাকু’, যাকে সে চিনত না। |
পুলিশ জানায়, তদন্তে নেমে ওই তরুণীর মোবাইলের কল রেকর্ড পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত একটি নম্বর থেকে সবচেয়ে বেশি বার ফোন এসেছে। কাটোয়ার এসডিপিও ধ্রুব দাস জানান, এর পরে ওই নম্বরটির গতিবিধি নজরে রাখা হয়। কিছু দিন মুর্শিদাবাদে কাটানোর পরে শনিবার দুপুর থেকে সেটি মঙ্গলকোটের দুরমুট গ্রামে রয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। সেই রাতে ওই গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় হাফিজুর শেখ ওরফে রাজাকে। পুলিশ জানায়, পেশায় ট্রাক্টর চালক হাফিজুরের স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে।
জেরায় হাফিজুর জানিয়েছে, মাস দেড়েক আগে ফোনে ‘ক্রস কানেকশন’ থেকে লালবাগের এলাহিগঞ্জের বিবাহ-বিচ্ছিন্না সাবিনার সঙ্গে আলাপ হয় তার। সাবিনা বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে রাজি হয়। এক পুলিশকর্তার দাবি, “হাফিজুর জেরায় জানায়, সে শর্ত রাখে, বিয়ের পরেও সাবিনা মুর্শিদাবাদেই থাকবে। সে প্রতি মাসে গিয়ে টাকা দিয়ে আসবে। সাবিনা তা মেনে নেন।” কিন্তু ১৪ জানুয়ারি বিকেলে ছেলেকে নিয়ে কাটোয়া পৌঁছে যান সাবিনা। পুলিশ জানায়, সাবিনা সোজা দুরমুট চলে যান। সেখানে বাসস্ট্যান্ডের কাছে রাত কাটান। তখন থেকেই তাঁর সঙ্গে ছিলেন হাফিজুর। পর দিন ফের কাটোয়া থেকে বর্ধমান-কাটোয়া রুটের বাস ধরেন। ডাকবাংলো মোড়ে নেমে হাফিজুর ও সাবিনার মধ্যে বিয়ে নিয়ে বচসা হয়। পুলিশ জানায়, ওই মহিলা বিয়ে না করলে পুলিশের কাছে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন। সে দিন ডাকবাংলো থেকে সিপাইদিঘি মোড়ে যান সাবিনা-হাফিজুর। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত জানিয়েছে, সন্ধ্যায় সর্ষেখেতে ঘুমিয়ে পড়েন সাবিনা ও ছেলে। ঘুমের মধ্যেই সাবিনাকে সে গলা টিপে খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে হাফিজুর, দাবি এসডিপিও-র। রবিবার কাটোয়া আদালত ধৃতকে ১৩ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। সাবিনার দাদা আলি হোসেন বলেন, “ওর ছেলে এখনও মাকে খোঁজে। কখনও জানতে চায়, মা কি ঘুম থেকে উঠবে না। কখনও জিজ্ঞেস করে, মা কখন হাসপাতাল থেকে ফিরবে। আমরা চুপ করে থাকি।”
|