চিকিৎসক অপ্রতুল। নেই যথেষ্ট সংখ্যক নার্স ও অচিকিৎসক কর্মীও। তবু তলানিতে ঠেকেনি রোগীর সংখ্যা। উপরন্তু ছোট্ট হাসপাতালটির লাভের অঙ্ক বছরে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, গত দশ থেকে বারো বছর আগে মেরেকেটে লাভ ছিল বছর প্রতি দু’-আড়াই লক্ষ টাকা। কিন্তু গত এক দশকে হাসপাতাল পরিষেবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে খরচ এতটুকুও বাড়েনি বলে দাবি করছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভা পরিচালিত হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ।
দুর্বল পরিকাঠামো সত্ত্বেও প্রায় এক বছর ধরে চারটি বেড নিয়ে শুরু হয়েছে হাসপাতালের ডায়ালিসিস পরিষেবা। চলতি মাসের শেষেই চালু হতে চলেছে চার শয্যার আইসিসিইউ। থাকবে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা। শুরু হবে চোখের অস্ত্রোপচার।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) সমীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য দু’টি। এক, স্থানীয় বাসিন্দাদের এই হাসপাতালমুখী করা। আর দুই, তার জন্য সরকারি হাসপাতালের মতোই ন্যূনতম অর্থে ভাল পরিষেবা দেওয়া। এর জন্যই হাসপাতাল শুরু করছে উন্নতমানের পরিষেবা।”
দক্ষিণ দমদম পুর-হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখানে সব মিলে প্রতি বার শুধুমাত্র ডায়ালিসিসের খরচ সাতশো টাকা। রোগীকে আলাদা করে ডায়ালিসিস করানোর জিনিস কিনতে হয় না”। অন্য দিকে, আর জি কর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, সরকারি দর মেনে এই হাসপাতালে ডায়ালিসিসের খরচ প্রতি বারে পাঁচশো টাকা। কিন্তু ফ্লুইড-সহ যাবতীয় জিনিস রোগীকে কিনে আনতে হয়। সব মিলে প্রতি বার খরচ কম করে সাতশো টাকা পড়ে যায়।
এয়ারপোর্ট এক নম্বর এলাকা থেকে গত দু’মাস ধরে এখানে ডায়ালিসিস করাতে আসছেন অম্লান মজুমদার। তাঁর মতে, “নার্সিংহোমে ডায়ালিসিস করানোর খরচ যথেষ্ট। প্রতি বার খরচ টানা অসম্ভব। অথচ ঘরের কাছেই মিলছে সরকারি হাসপাতালের থেকেও কম খরচে পরিষেবা। তাই এখানে আসা।” ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ সামলাতে ডায়ালিসিসের দৈনিক চারটি শিফ্ট চলছে। হাসপাতালে নিয়মিত চলছে বহির্বিভাগ। হাসপাতালের নিজস্ব ল্যাবে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি বায়োপ্সির মতো পরীক্ষাও অপেক্ষাকৃত সস্তায় করানো হয়।
হাসপাতালে শল্য বিভাগ এবং মেডিসিন বিভাগের কোনও স্থায়ী চিকিৎসক নেই। খাতায়-কলমে ৬০ শয্যার বিশিষ্ট হাসপাতালটির বর্তমান শয্যা সংখ্যা ২০। মেরুদণ্ড বলতে চার জন আরএমও, আট জন নার্স এবং তিন জন মাত্র চিকিৎসক। এক বছরেরও বেশি আগে ডিএলবি-র কাছে আরও ছ’জন চিকিৎসক ও দশ জন নার্সের জন্য আবেদন করে পুরসভা। আজও কোনও সদুত্তর মেলেনি।
তা হলে এই পরিকাঠামো নিয়ে কী ভাবে শুরু হবে আইসিসিইউ? হাসপাতাল জানাচ্ছে, “চিকিৎসা পরিষেবার কাঠামোটা টিঁকে আছে বহির্বিভাগে আসা চিকিৎসক ও বাইরের চিকিৎসকদের সৌজন্যে।” পুর-কর্তৃপক্ষের তরফে আশ্বাস, “সমস্যা তো থাকবেই। তা বলে কি মানুষকে উন্নত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টাটুকু করব না? পুরসভা নিজের তহবিল থেকে যতটা সম্ভব করছে। বাকিটা চিকিৎসক ও নার্সদের অনুরোধ করে থাকি সেবামূলক কাজের জন্য।” |