|
|
|
|
ডুয়ার্সে বন্ধ ধরণীপুর বাগানে মহিলা-সহ মৃত ২
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালবাজার |
ডুয়ার্সের বন্ধ চা বাগানে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা চলছেই। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রেডব্যাঙ্ক গোষ্ঠীর বন্ধ ধরণীপুর চা বাগানে এক মহিলা-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বাগান সূত্রের খবর, মৃত মহিলার নাম গ্যানোর মুন্ডা (৫৫) তাঁর বাড়ি বাগানেরই পানিঘাটা লাইনে। তিনি বাগানের অস্থায়ী শ্রমিক ছিলেন। অপর মৃত ব্যক্তির নাম আমলাল রিকিয়াসন (৪৫)। ধরণীপুরের ছয়টালি লাইনে বাসিন্দা আমলাল বাগানের স্থায়ী শ্রমিক ছিলেন। দুটি মৃত্যুর ক্ষেত্রেই মৃতদের পরিবারগুলির তরফে অপুষ্টি এবং অর্ধাহারের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
শুক্রবার মৃত্যুর খবরে নড়েচড়ে বসে প্রশাসনও। মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতি ধরণীপুর বাগানে যান। তিনি মৃতদের পরিবার দুটি কিছু আর্থিক সাহায্য করেন। কম্বল এবং চালের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। মহকুমাশাসক বলেন, “আজ, শনিবার থেকেই বাগানের প্রতিটি বাড়িতে কারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তা জানতে আশা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকাও আগামী সপ্তাহে মিটিয়ে দেওয়া হবে।” মহকুমাশাসক জানান, বাগানে তিনদিন করে শুল্কাপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসকেরা জানান। ওই শ্রমিক পরিবারগুলি মৃতদের চিকিৎসার জন্য কেন আগে নিয়ে যাননি তা বুঝতে পারছি না।
উল্লেখ্য, রেডব্যাঙ্ক গোষ্ঠীর তিনটি বাগান রয়েছে। একটি রেডব্যাঙ্ক, অন্য দু’টি ধরণীপুর এবং সুরেন্দ্রনগর। গত অক্টোবর থেকেই পরপর সবকটিই বন্ধ হয়। গত ২৪ অক্টোবর ধরণীপুর চা বাগান বন্ধ হয়। শুধুমাত্র গোষ্ঠীর মূল বাগান রেডব্যাঙ্কেই গত অক্টোবর মাস থেকে ১৫ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ৩৫৭ জন শ্রমিকের ধরণীপুর বাগানে এই অবধি চার জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। এর আগে গত ৯ নভেম্বর শেষ মৃত্যু হয়েছিল বাগানেরই কর্মী তানু সিংহ ঘাটোয়ারের।
বাগান সূত্রের খবর, মৃত আমলাল গত কয়েকদিন ধরেই অর্ধাহারে ছিলেন বলে তাঁর পরিবার দাবি করেছেন। আমলালের মা কৈলাশ রিকিয়াসন বলেন, “আমলালের স্ত্রী দীর্ঘদিন আগেই মারা গিয়েছে। এক মেয়েও বাইরে থাকায় আমলাল বাড়িতে একাই থাকতেন। কয়েকদিন ধরে খাবার ছিল না। টাকার অভাবে হাসপাতালে যেতে পারেনি।” একই বক্তব্য মৃতের ভাই রনথু রিকিয়াসনের। তিনি বলেন, “বাগান খোলার আশা না দেখে দাদা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। বাগান বন্ধের পর দুই দফায় সরকারি সাহায্য মিলেছিল। তার পরে কিছু নেই। অনেকেই অর্ধাহারে থাকছেন।”
মৃত গ্যানোর মুন্ডার স্বামী লক্ষণ মুন্ডা জানান, স্ত্রীর পা এবং হাত দু’টি সম্প্রতি অসাড় হয়ে গিয়েছিল। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় চিকিৎসাও করতে পারিনি। খাবার নেই। বাগানের বাইরে ভিক্ষাও করতে হয়েছে। তাও দুইবেলা খাবার ঠিকঠাক খাবার জুটছে না।
তৃণমূল কংগ্রেসের তরাই ডুয়ার্স প্লান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ধরণীপুর চা বাগানের ইউনিট সম্পাদক জগদীশ রায় বলেন “বাগানে একশো দিনের কাজ করানো হলেও কাজের টাকা এখনও অনেকেই পাননি। গত ২৭ ডিসেম্বরের পর প্রশাসন থেকে আর চালও দেওয়া হয়নি। দলীয় স্তরে বিষয়টি জানিয়েছে। দ্রুত বাগান খোলা না হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।”
|
ঢেকলাপাড়া
২০০২ সালের অগস্ট মাস থেকে বাগান বন্ধ। ২০০৫ সালে কয়েক মাসের জন্য বাগান চালু হলেও পরে তা বন্ধ হয়। বাগানের শ্রমিক সংখ্যা ৬০২ জন। বন্ধ থাকাকালীন ১০৪ জন মারা গিয়েছেন। গত বছর ডিসেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
রেড ব্যাঙ্ক
২০০৩ সাল থকে তিন বার বাগান বন্ধ হয়েছে। শেষ বার ১৯ অক্টোবর ২০১৩ বাগান ছেড়ে চলে যায় মালিক পক্ষ। জলের সরবরাহ বন্ধ। বিপাকে ৮৮৬ জন শ্রমিক। চিকিৎসার অভাবে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ধরণীপুর ৩৫৬ জন শ্রমিক। গত তিন মাসে ছ’জন মারা গিয়েছেন।
সুরেন্দ্রনগর
সুরেন্দ্রনগর, রেড ব্যাঙ্ক ও ধরনীপুর বাগানগুলি একই মালিকের হওয়ায় এক সঙ্গে তিন দফায় বন্ধ হয়। ৩১৪ জন শ্রমিক। মারা গিয়েছেন তিন জন।
বান্দাপানি
১৩ জুলাই বিনা নোটিসে কর্তৃপক্ষ বাগান ছাড়ে। শ্রমিক পরিবারে অনটন চলছে। |
|
|
|
|
|