উন্নয়ন পর্ষদ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ গুরুঙ্গেরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
খোদ জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ যে সম্প্রদায়ের মানুষ, সেই গুরুঙ্গেরাও পৃথক উন্নয়ন বোর্ডের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হলেন।
এর আগে পাহাড়ের লেপচা উন্নয়ন বোর্ড গঠনের সময়ে গুরুঙ্গ সহ মোর্চার শীর্ষ নেতারা তার প্রতিবাদ করেছিলেন। পাহাড়ে বিভাজনের চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন। অনমনীয় রাজ্য সেই বোর্ড গঠন করেছে। সাম্প্রতিক পাহাড় সফরের সময়েও মুখ্যমন্ত্রী তামাঙ্গ সম্প্রদায়ের জন্য একই ধরনের পর্ষদ গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন। তখন মোর্চা প্রতিবাদ করেনি। এ বার গুরুঙ্গ সম্প্রদায়ও একই দাবি জানানোর পরে মোর্চা সভাপতির প্রতিক্রিয়া, “যে কেউ নিজেদের সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতির উন্নতির জন্য যে কোনও দাবি করতে পারেন। তা কখনও খারাপ নয়।”
শুক্রবার সকালে পাহাড় ও ডুয়ার্সের গুরুঙ্গ সম্প্রদায়ের কয়েক জন প্রতিনিধি শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে সুকনা বনবাংলোয় যান। দার্জিলিং সফর সেরে কলকাতায় ফেরার আগে সেখানেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু গুরুঙ্গ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দেহরক্ষী গিয়ে গুরুঙ্গ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের স্মারকলিপিটি নিয়ে তাঁকে দেন। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে এ বারের সফরে পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায় তাঁর কাছে এই ধরনের পর্ষদ গঠনের দাবি জানালে মুখ্যমন্ত্রী তখন আশ্বাস দিয়েছিলেন, পাহাড়ের জনজাতিগুলিকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানাবেন।
ঘটনাচক্রে, এদিন গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) চিফ বিমল গুরুঙ্গ সুকনাতেই একটি স্কুলের শিলান্যাস করেছেন। তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের সময় জিটিএ এবং মোর্চা তার বিরোধিতা করেছিল, তা হলে এখন গুরুঙ্গ সম্প্রদায় সেই দাবি তোলার সময় মোর্চা ও জিটিএ নীরব কেন? গুরুঙ্গ বলেন, “পৃথক বোর্ড হলেও পাহাড়ের ঐক্যে কোনও ফাটল ধরবে না। আমরা সকলে মিলেমিশে থাকব।” লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের সময় জিটিএ-র এক্তিয়ারভুক্ত এলাকায় রাজ্য হস্তক্ষেপ করছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। তবে এখন মোর্চা ও জিটিএ এই সব প্রসঙ্গই এড়িয়ে যাচ্ছে।
যদিও গুরুঙ্গ উন্নয়ন বোর্ডের দাবিদাররা জানান, কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে থাকতে চান না। তাঁরা অরাজনৈতিক একটি উন্নয়ন বোর্ড চান বলে গুরুঙ্গ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা জানান। গুরুঙ্গ সম্প্রদায়ের এই সংগঠনের মহিলা শাখার মুখপাত্র প্রণীতা গুরুঙ্গ বলেন, “বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে এ ব্যাপারে ও যোগাযোগ করিনি। করার কথা ভাবছিও না। উনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আমরা অরাজনৈতিক সংগঠন।” সংগঠনের দাবি, পাহাড়-সমতলে লক্ষাধিক গুরুঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস রয়েছে।
অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএমের মতো সংগঠন তো বটেই, বাম দলগুলিও পরপর উন্নয়ন বোর্ড গড়লে জিটিএ কী করবে, সেই প্রশ্ন তুলেছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেছেন, “যে কোনও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য বোর্ড গঠন করাটা অবশ্যই ভাল ব্যাপার। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা করলে মারাত্মক ব্যাপার হতে পারে।”
|