জয়নগরে মৃত ৬, আশঙ্কা চোলাইয়ে বিষক্রিয়ার
পসর্গ ছিল একই রকম। চোখ এবং পেটে-বুকে জ্বালা, তার সঙ্গে মাথার যন্ত্রণা।
বৃহস্পতিবার সকালে চোলাই মদ খাওয়ার পরে ওই উপসর্গ নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর-১ ব্লকের নারায়ণপুর পঞ্চায়েত এলাকার তিন-চারটি গ্রামে অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েক জন। তাঁদের মধ্যে শুক্রবার রাত পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের। অসুস্থ আরও অন্তত ৯ জন। চোলাই থেকে বিষক্রিয়াতেই এই ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে প্রশাসনের আশঙ্কা। যা উস্কে দিচ্ছে বছর দুয়েক আগে এই জেলারই বিষ-মদ কাণ্ডের স্মৃতি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বেলিয়াচণ্ডী গ্রামের নিখিল গায়েন (৫৫) দীর্ঘদিন বাড়ি থেকে পাউচে চোলাই বিক্রি করতেন। তাঁর বাড়িতেও মদের আসর বসত। বৃহস্পতিবার সকালেও তা বসে। নিখিলবাবু নিজেও চোলাই খান। দুপুরের পর থেকে নিখিলবাবু-সহ বেশ কয়েক জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। বারুইপুর হাসপাতালে সন্ধ্যায় নিখিলবাবু মারা যান। নিজের বাড়িতে মারা যান ওই গ্রামেরই মান্য মৃধা (৫০)। স্থানীয় নার্সিংহোমে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় নেপাল নস্কর (৪৮) এবং সরবেরিয়ার মানব সর্দারের (৬০)। বৃহস্পতিবার রাতে অসুস্থ আরও পাঁচ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার সকালে অসুস্থদের কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হলে সেখানে কাটাপুকুরিয়ার বাসিন্দা অজিত সর্দার (৫২) ও বাপি হালদারের (৪৮) মৃত্যু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
মৃত মান্য মৃধা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
বিষ-মদের জেরেই একের পর এক মৃত্যু, এই অভিযোগ তুলে এ দিন সরব হন গ্রামবাসীরা। মৃত এবং অসুস্থদের কয়েকটি পরিবার মেনে নিয়েছে চোলাই খাওয়ার কথা। শুক্রবার সকালেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল গ্রামগুলিতে যায়। বিডিও বিল্বদয় রায়ের নেতৃত্বে একটি দল মৃত ও অসুস্থদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। বারুইপুরের মহকুমাশাসক পার্থ আচার্য বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে চোলাই থেকে বিষক্রিয়ায় ওই ঘটনা। দু’টি দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট এবং বিডিও ও স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পরেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।” চোলাই থেকে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীও। এ দিন এসডিপিও (বারুইপুর) দীপক সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ ওই গ্রামগুলিতে তল্লাশি চালায়। পুলিশ সুপার বলেন, “গ্রামবাসীরা বিষ-মদেই মৃত্যুর কথা বলছেন। এ ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সকলেরই উপসর্গ একই রকম ছিল।”
২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনারই সংগ্রামপুরে বিষ-মদে ১৯৩ জনের মৃত্যু হয়। দৃষ্টিশক্তি হারান ১০ জন। শুক্রবার বেলিয়াচণ্ডীতে সে কথাই ঘুরেছে ঘরে ঘরে। আলোচনার কেন্দ্রে ছিল নিখিলবাবুর বাড়ি। তাঁর দেহ রাতেই দাহ করে দেন পরিবারের লোকেরা। নিখিলবাবুর পুত্রবধূ প্রতিমা বলেন, “বৃহস্পতিবার খাওয়ার পরে দুপুরে তাঁর পেটে-বুকে জ্বালা এবং মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়। রাতে মৃত্যু।” শ্বশুরমশাইয়ের মদ বিক্রির বিষয়টি অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। তবে আশপাশের বাসিন্দারা নিখিলবাবুর বাড়ির চার পাশে চোলাইয়ের প্যাকেট দেখিয়েছেন। এক গ্রামবাসী বলেন, “সংগ্রামপুরের ঘটনার পরে পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে গ্রামে মদের ভাটি আর হয়নি। কিন্তু নিখিলবাবু পাউচে করে মদ এনে বিক্রি করতেন। পুলিশ সেটা বন্ধ করলে এই ঘটনা হত না।”

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.